ইসলামে মেরাজের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের মেরাজের যে ঘটনা তা নবুওয়তের পঞ্চম বা ৬ষ্ঠ বছরে ঘটেছিল। এই সময় মহানবির যে মেরাজ সংঘঠিত হয়, তাতে তিনি বহু ঊর্ধ্বলোকে উপনীত হয়ে আল্লাহর জ্যোতিসমূহের বিকাশ প্রত্যক্ষ করেন।
Advertisement
অপরদিকে মহান আল্লাহর জ্যোতিমালাও তার প্রিয় রাসুলের (সা.) দিকে অবতরণ করে। এভাবেই একদিকে আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহর দিকে অগ্রসর হন, অপর দিকে আল্লাহও অগ্রসর হন তার প্রিয় রাসুলের (সা.) দিকে। মানুষের পক্ষে যতটা আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন করা সম্ভব, তার সবটাই ঘটেছিলো রাসুলের (সা.) মাঝে।
মেরাজের প্রকৃত স্বাদ কেবল তার পক্ষেই লাভ করা সম্ভব যার রূহ পবিত্র এবং যিনি পরম আধ্যাত্মিক সম্পন্ন। বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রূহকে স্বয়ং আল্লাহপাক পবিত্র করেছিলেন, যার ফলে আল্লাহতায়ালা এই মহান নবীকে মেরাজের সৌভাগ্য দান করেছিলেন।
মহানবীর (সা.) জীবনে মেরাজ শুধু একবারই যে ঘটেছে তা কিন্তু নয়, কারণ ছিনাচাকের যে ঘটনা তা তার শৈশবেই ঘটেছিল, যখন তিনি (সা.) ছাগল চড়াচ্ছিলেন। তবে কোরআন করিমে তার (সা.) যে সফরের কথা উল্লেখ রয়েছে তা একটি বিশেষ রাতে সংঘটিত হয়েছিল।
Advertisement
এই রাতে মহানবীর (সা.) কাছে জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) যখন আসে তখন তিনি (সা.) ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি ছিলেন। তখন জিবরাইল (আ.) তাঁর (সা.) সীনা থেকে নাভীর ওপর পর্যন্ত ফেড়ে এবং তাঁর বুক ও পেট থেকে কিছু বের করে সেসবকে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে তাঁর পেটকে পাক পবিত্র করে দেন। তারপর তিনি সোনার একটি তশুরি আনেন। যা ঈমান ও হিকমতে পরিপূর্ণ ছিল। এর মাধ্যমে তিনি তার সীনাটাকে ভরে দেন এবং ফাড়া অংশটা ঠিকঠাক করে দেন (বোখারি, মুসলিম ও মিশকাত)।
এই বিশেষ রাতে আল্লাহপাকের ইচ্ছায় মহানবীর (সা.) রূহকে পাকসাফ এবং সতেজ করা হয়েছিল। আমরাও যদি একান্তভাবে আল্লাহর হয়ে গিয়ে এ রাতে তার ধ্যানে মগ্ন থাকি তাহলে হয়তো আমাদের রূহকেও আল্লাহপাক পবিত্র ও তাজা করে দিতে পারেন।
রাতের ইবাদতকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক বেশি পছন্দ করেন এবং রাত জেগে ইবাদতকারীর ওপর তার রহমত বর্ষিত হতে থাকে। তাই মেরাজের এই রাতকেও আমাদের কাজে লাগানো উচিত। কেননা আমাদের আত্মা যে মৃত, একে তাজা করার খুবই প্রয়োজন, না হয় এ জীবনের কি বা মূল্য আছে।
আমরাও যদি আমাদের রূহকে পবিত্র করতে চাই এবং আল্লাহপাকের মেরাজ লাভ করতে চাই তাহলে আসুন না আমাদের রাতগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত রাখি। রাতভর ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করি।
Advertisement
আল্লাহপাকের কাছে আমরা যদি বিগলিত চিত্তে দোয়া করি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের ডাক শুনবেন। যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছে ‘তিনি কে, যিনি ব্যাকুল ব্যক্তির দোয়া শুনেন যখন সে তার সমীপে দোয়া করে ও তার কষ্ট দূর করে দেন’ (সুরা নমল, আয়াত: ৬২)।
আসুন না, আমরা সবাই এ রাতে ব্যাকুল হয়ে আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের রূহকে পরিস্কার করে দিয়ে আমাদের আত্মায় যত ময়লা জমেছে তা ধুয়েমুছে স্বচ্ছ করে দেন।
অনেকে হয়তো মনে করবেন যে, আমরাদের মত সাধারণ মানুষ কিভাবে আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভ করতে পারে। হ্যাঁ, সবাই আল্লাহকে লাভ করতে পারে, তবে প্রথম শর্ত হচ্ছে আত্মার পবিত্রতা।
প্রত্যেক মোমেনের জন্য আল্লাহপাক মেরাজের রাস্তা খুলে রেখেছেন, যেভাবে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ মোমেনের মেরাজ’। অর্থাৎ মোমেন মুত্তাকির মেরাজ হয় নামাজের মাধ্যমে। আমরা যদি নিয়ম অনুযায়ী আত্মা পবিত্র করে নামাজ আদায় করি, রাতগুলোকে ইবাদতে জাগ্রত রাখি তাহলে হয়তো আল্লাহপাকের মেরাজ আমরাও লাভ করতে পারব।
আল্লাহতায়ালার কাছে এই দোয়াই করি তিনি যেন আমাদের আত্মাকে শান্তিময় করেন আর ইহ জীবনেই যেন লাভ করতে পারি আল্লাহপাকে জান্নাতের স্বাদ।
মৃত্যুর আগে যেন আমার আত্মা রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে এই সংবাদ লাভ করে, ‘হে শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রভু-প্রতিপালকের দিকে সন্তুষ্ট হয়ে এবং তার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আস। অর্থাৎ তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর’ (সুরা ফাজর, আয়াত: ২৭-৩০)।
মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির উচ্চতম পর্যায় হচ্ছে, সে তার প্রভুর ওপর পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট এবং তার প্রভুও তার প্রতি সন্তুষ্ট আর এই পর্যায়ে যখন মোমেনের আত্মা উপনিত হয় তখনই আল্লাহপাক তাকে মেরাজের মর্যাদায় ভূষিত করেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের প্রার্থনা, হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে আপনার রহমত ও মাগফিরাতের চাদরে জড়িয়ে নিন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
এইচআর/জেআইএম