ইমন ইসলাম
Advertisement
বিপুল ঐশ্বর্যধারী ঋতুরাজ বসন্তের হাওয়ায় মুখরিত চারপাশ। পাগল হাওয়ার উত্তরীয় উড়িয়ে বনফুলের পল্লবে, দখিনা-বাতাসে শিহরণ জাগানোর দিন এলো বুঝি। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠার আভাস কিংবা বনতলে কোকিলের কুহুতানই বলে দেয় ফাগুন তথা বসন্ত হলো বাঙালির প্রেমের ঋতু।
শীতের আড়মোড়া ভেঙে রুক্ষতা বিদায় করে পলাশের রক্তিম রঙে রঙিন হয়ে উঠছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গাছে গাছে ফোটা নতুন কুঁড়ি আর নানা রঙের বাহারি ফুল জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা।
বলা হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমির নগরী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস একেক ঋতুতে পায় একেক রূপ। শীতের সময় যেমন অতিথি পাখির কলতানে মুগ্ধ হিম নগরী, আবার সাংস্কৃতিক উৎসবের সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে সাংস্কৃতিক রাজধানী। সব ছাপিয়ে যখন বসন্তের আগমন ঘটে তখন ক্যাম্পাস যেন ‘সবুজ ক্যাম্পাস’ তার সেই মূল সত্তাটিকেই ধারণ করে।
Advertisement
প্রকৃতি খুলে দিয়েছে দক্ষিণ দুয়ার । সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া । বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান । ভ্রমরও করছে খেলা । গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা । কারণ একটাই বসন্ত এসে গেছে । ফাগুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন । ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতেই প্রকৃতির আজ এত বর্ণিল সাজ । বসন্তের আগমনে শীতের রিক্ততা ভুলিয়ে ফাগুনের আগুনে প্রকৃতিতে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া ।বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সঙ্গে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা।
আরও পড়ুন: ভালোবাসার দিনে যে দেশে ‘হোয়াইট ডে’ পালন হয়
বসন্তের রং ও রূপে নিজেকে সাজাতে প্রকৃতি যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। প্রকৃতি ধারণ করছে রূপলাবণ্যে ভরা মনোহর পরিবেশ। ফাল্গুনের আগুনে শীতের তীব্র রুক্ষতা কাটিয়ে পাতা ঝড়া বৃক্ষগুলোর মাথায় দেখা দিয়েছে সবুজ পাতা, কুঁড়ি ও ফুল। শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে ফুলে ফুলে সজ্জিত প্রকৃতি জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা।
প্রকৃতি আমাদের যাপিত জীবনের নিত্যসঙ্গী। মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতির মতো পরিবেশ-প্রকৃতিও বদলায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ভিন্নরূপে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। বসন্ত আসে অনুপম আনন্দ নিয়ে। এ সময়ে ফুল ফোটে একই সঙ্গে পাতাও ঝরে, আবার সবুজ সতেজতায় নতুনভাবে পল্লবিত হয় গাছ-গাছালি। বসন্ত পুরাতন, জীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন শক্তিতে নতুন রূপে আবির্ভূত হওয়ার শিক্ষা দেয়।
Advertisement
প্রকৃতির আদরমাখা স্পর্শে জেগে উঠেছে জাবির বৃক্ষমালা। শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে প্রকৃতি ফিরে আসছে সবুজের ছোঁয়া। পলাশ-শিমুলের প্রস্ফুটিত হাসিতে শিমুল বনে যেন লেগেছে লেলিহান লাল রঙ্গের আগুনের ছোয়া। বসন্তের কোকিলও তার মিষ্টি কুহুতানে ব্যস্ত সময় পার করছে। কোকিলের সেই মিহি সুরে ঘুম ভাঙছে জাবির শিক্ষার্থীদের।
আরও পড়ুন: ভুল মানুষকে দেওয়া চুমুই হয়ে যায় বিখ্যাত
বসন্তের হাওয়ায় শিমুল ও পলাশ গাছে ফুটতে শুরু করেছে ফুল। বসন্তের বার্তা নিয়ে পলাশ গাছের কলি খাওয়ায় মেতে উঠেছে রাঙা টিয়া। সেই সঙ্গে আম, লিচু, জাম ও বেল গাছ ভরে উঠছে মুকুলে। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ফুটে থাকা মুহুমুহু ফুলের ঘ্রাণ যেন বসন্তকে নতুন রুপ দিয়েছে। সেই সুঘ্রাণ নিতে সবাই ভিড় জমাচ্ছেন শিমুল আর পলাশ গাছের তলে। কেউবা আবার ফ্রেমবন্ধি করে রাখছেন সেই মুহূর্তটুকু।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিতু আক্তার বলেন, ‘বাঙালি মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে বাসন্তী আমেজ খুবই সমাদৃত। বসন্ত আমাদের জীবন রাঙিয়ে দিয়ে যায়। বসন্তের চমৎকার আবহাওয়া ও প্রকৃতির নব সাজ আমাদেরকে উল্লসিত ও উৎফুল্ল করে তোলে। বসন্তের মধ্যদিয়ে আমরা যেন জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করি। বসন্তের ফুল ফোটে বনে তার শিহরণ লাগে আমাদের মনে। বসন্ত এমনই এক সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত ঋতু’।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
কেএসকে/এএসএম