স্বাস্থ্য

সারাহর মতো অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি বিএসএমএমইউ উপাচার্যসহ ৭ জনের

সারাহর অঙ্গদানের ফলে নতুন জীবন পেয়েছেন চারজন। তাদের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে শামিমা আক্তারের শরীরে। সুস্থ আছেন জানিয়ে সারাহ ইসলামের জন্য দোয়া করেন তিনি। এর সঙ্গে অন্যদেরও অঙ্গদানে এগিয়ে আসতে বলেন তিনি।

Advertisement

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রেন ডেথ রোগী হিসেবে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক সারাহ ইসলামের অঙ্গ অন্য চারজন রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভা হয়। সেখানে এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন শামিমা আক্তার।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদসহ উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলালসহ ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাদের অঙ্গীকারনামা ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেওয়া হয়। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহানসহ অনেকেই মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলাল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

Advertisement

সারাহর মা শবনম সুলতানা বলেন, সারাহ বেঁচে আছে অসংখ্য মানুষের মধ্যে। আমি মনে করি না, সারাহ মারা গেছে। সন্তান হারানোর বেদনা আমার আছে। আমি আজকের দিনের অনুভূতি বোঝাতে পারবো না।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারা ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। সারা ইসলামের পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন।

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে মোট আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোয় অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষার কাজ প্রচলিত আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সারাহ ইসলামই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গদান করে চারজন মানুষের জীবনের আশা জাগিয়ে গেলেন। সারাহ ইসলামের দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এ কাজ করতে পারেন! সারাহ তা দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়। মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যুর পরও কীভাবে অন্য মানুষের উপকার করা যায়। আমার কাছে সারাহ ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এ নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে। মানবতার জগতে আপনি আমাদের কাছে এক অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।

Advertisement

অনুষ্ঠান শেষে বিএসএমএমইউর প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নামে সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের উদ্বোধন করা হয়। এদিন দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে এর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা।

এএএম/এমআইএইচএস/এএসএম