আন্তর্জাতিক

ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১১৩ পরোয়ানা জারি

ভূমিকম্প নিরোধক ভবন নির্মাণ না করায় বা নির্মাণে ত্রুটি থাকায় তুরস্কে ১১৩টি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। বাকিদেরও খুব শিগগির গ্রেফতার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

এদিকে, বিষয়টিকে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত সরকারি দুর্বলতা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়ার কৌশল বলে দাবি করছেন অনেকে। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছিলেন যে, দুর্বল সরকারি নীতির সুযোগ নিয়ে অসংখ্য অনিরাপদ ও ঝুকিপূর্ণ ভবন গড়ে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> ভূমিকম্প/ বিল্ডিং কোড না মানায় তুরস্কে এত বড় বিপর্যয়!

বিশেজ্ঞরা ভূমিকম্পের ফলে এসব ভবন ধসে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছিলেন। এরপরও ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিগুলো সংস্কার বা কঠোর করা হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই দুর্যোগ থেকে মানুষদের বাঁচাতে সরকারের যথাযথ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কঠোর নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এত বড় ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত কি না, প্রাণহানি কমাতে এরদোয়ান সরকার আরও কিছু করতে পারতো কি না, জনমনে এখন এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

কয়েক মাস পরেই তুরস্কে জাতীয় নির্বাচন। অনেকের দাবি, এই ভূমিকম্প এরদোয়ানের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জাতীয় মুদ্রা লিরার মান কমে যাওয়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন>> তুরস্ক-সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি

এখন উদ্ধার ‍কাজে ধীরগতি ও ত্রাণ বিতরণে দেরি জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার মূল্য দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানকে দিতে হতে পারে।

Advertisement

যদিও ভূমিকম্পের পরপরই উদ্ধারকাজ শুরু করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছিলেন এরদোয়ান। তবে তিনি এর জন্য নিয়তিকেও দায়ী করেন। এরদোয়ান বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এটি নিয়তির পরিকল্পনারই অংশ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে অস্থিরতার কারণে কিছু জায়গায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেনেন্ট কর্নেল পিয়েরে কুগেলওয়েইস জানান, তুরস্কের হতাই প্রদেশে অজ্ঞাত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত হয়েছে। ফলে অস্ট্রিয়ান দুর্যোগ ও ত্রাণ ইউনিটের কর্মীরা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে বেইজ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন।

আরও পড়ুন>> তুরস্ক-সিরিয়া/ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের ভিসা দেবে জার্মানি

অস্ট্রিয়া তাদের উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তুরস্কের সেনাবাহিনী অস্ট্রিয়ান কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ায় উদ্ধার অভিযান পুনরায় শুরু করা যাবে।

সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ গ্রুপ আইএসএআর এবং জার্মানির ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিক্যাল রিলিফের (টিএসডব্লিউ) জার্মান শাখাও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে অভিযান স্থগিত করেছে।

আইএসএআরের মুখপাত্র বলেন, দুর্যোগ কবলিত এলাকায় স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো মধ্যে সংঘাতের খবর আসছে। গুলিও ছোড়া হয়েছে। আইএসএআরের অপারেশনস ম্যানেজার স্টিভেন বায়ার বলেন, খাবার-পানি ও মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> তুরস্কের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে বার্তা দিলো বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস

তিনি আরও বলেন, আমরা নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছি। তুর্কি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিরাপদ করে তোলার নিশ্চয়তা দিলেই জার্মান উদ্ধারকারী দলগুলো আবার কাজ শুরু করবে।

এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, আমরা জরুরি অবস্থা জারি করেছি। এর মানে হচ্ছে, যারা লুটপাট বা অপহরণের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ/টিটিএন