শেখ রিয়াজুল ইসলাম ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তিনি নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নর্থ খুলনা ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতক এবং কৃষিতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
Advertisement
বর্তমানে তিনি মেহেরপুরে ‘বীজ প্রত্যয়ন অফিসার’ হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪০তম বিসিএসে ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: দীর্ঘদিন প্রতীক্ষিত স্বপ্ন যখন পূরণ হয়; তখন অসাধারণ একটা অনুভূতি হয়। এ পর্যন্ত আমার সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্ত হচ্ছে, যখন ফাইনাল রেজাল্টে আমার রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি দেখতে পেলাম।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: একেবারে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। কিন্তু বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি ভালো কিছু করব। মাঝে মাঝে উপজেলায় সত্যায়িতসহ বিভিন্ন কাজে যেতে হতো। তখন অফিসারদের সুসজ্জিত অফিস এবং সাধারণ মানুষের ক্যাডার অফিসারদের প্রতি সম্মানবোধ আমাকে বিসিএসের স্বপ্ন দেখতে অনেক আগ্রহী করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের দেখেও অনেক অনুপ্রেরণা পেতাম।
Advertisement
আরও পড়ুন: বিসিএস পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বাবা: সিয়াম
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: একজন শিক্ষার্থীর সমগ্র শিক্ষাজীবনে দুটি ধাপ আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বা ক্রিটিকাল মনে হয়। একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি, অন্যটি হলো চাকরির প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যেমন আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা সাবজেক্টে পড়তে পারি না। কিন্তু তারপরও যে সাবজেক্ট বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই, সেখানেই পড়ি। পছন্দ থাকুক আর না-ই থাকুক। চাকরির বাজার আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক। যেখানে সঠিক গাইডলাইন মেনে কঠোর পরিশ্রমী সৌভাগ্যবানরাই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন। আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শেষের দিকে বিসিএস ও বিভিন্ন চাকরির প্রস্তুতির বইপত্র নিই। একাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে চাকরির পড়াশোনা শুরু করি। ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পাস করলেও লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হই। পরে ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে কৃতকার্য হই। ৪১তম বিসিএসেও ভাইবার জন্য নির্বাচিত হই।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: আসলে সবাই প্রত্যাশা করতেন আমি ভালো কিছু করব। সেখান থেকেই নিজের ভেতর ভালো কিছু করার প্রচণ্ড চাপ অনুভব করতাম। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন আর শিক্ষকের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে আমার এ সফলতা।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই প্রত্যেকের উচিত মোটামুটি একটা লক্ষ্য ঠিক করা। আপনার লক্ষ্য যদি থাকে বিসিএস বা প্রথম শ্রেণির কোনো সরকারি চাকরি, তবে সেভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। ৪০তম বিসিএসের কথাই যদি বলি, চার বছরের বেশি লেগেছে আমাদের যোগদান করতে। তাই এ ক্ষেত্রে ধৈর্য থাকতে হবে। প্রিলিমিনারির জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় বই নিতে হবে। তবে অপ্রয়োজনে একগাদা বই কেনার দরকার নেই। পিএসসির সিলেবাস অ্যানালাইসিস করতে হবে। বিগত প্রশ্ন বিশেষ করে ৩৫ থেকে ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত প্রশ্নগুলো খুব ভালো করে বিশ্লেষণ করতে হবে। কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে। প্রত্যেক সাবজেক্টের আলাদা আলাদা খাতা তৈরি করবেন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, টিপস বা কৌশল পেলে টপিকভিত্তিক খাতায় লিখে রাখবেন। সেগুলো পরীক্ষার আগে একবার চোখ বুলিয়ে যাবেন। প্রতিযোগিতামূলক মডেল টেস্ট দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কয়েকজন মিলেও পরীক্ষা দিতে পারেন বা ভালো কোনো কোচিংয়ে পরীক্ষা দিতে পারেন। কোনো বিষয়ে নিজের দুর্বলতা ভেবে হতাশ হবেন না। প্রত্যেকের কিছু শক্তিশালী সাবজেক্ট থাকে। সেগুলো একটু বেশি ভালো করতে হবে। দুর্বল বিষয়গুলোয় মোটামুটি নম্বর পাওয়ার মতো প্রস্তুতি নিতে হবে। কিছু কমন টপিক আছে, যেগুলো প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইবায়ও কাজে লাগে। মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, সরকারের সাফল্য, জাতিসংঘ, বিভিন্ন সংগঠন, বাংলা সাহিত্য ও মানসিক দক্ষতা ইত্যাদি। এগুলো প্রিলিমিনারিতে ভালো করে প্রস্তুতি নিলে লিখিততে এগিয়ে থাকা যায়।
Advertisement
আরও পড়ুন: পুলিশ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সাইফুল
জাগো নিউজ: বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: প্রিলিমিনারি দেওয়ার পর তিন ধরনের পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়। এক শ্রেণি প্রিলিতে বাদ পড়বে নিশ্চিত। দ্বিতীয়ত পাস বা ফেল কনফিউশন এবং তৃতীয়ত প্রিলিতে পাস হবে মোটামুটি নিশ্চিত। যাদের প্রিলিমিনারিতে পাস হবে না, তারা আবার প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি শুরু করবেন। কনফিউশন বা যারা মোটামুটি নিশ্চিত, তারা প্রথমে বিসিএস লিখিত সিলেবাসটি সংগ্রহ করবেন। এরপর ৩৫ থেকে ৪৪তম পর্যন্ত বিসিএস লিখিত প্রশ্ন সংগ্রহ করবেন। প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেবেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর মোটামুটি দুই মাস পর রেজাল্ট দেওয়া হয়। এ সময়ে প্রথমত ইংলিশ ভোকাব্যুলারি আরও একটু সমৃদ্ধ করবেন। গণিত ও মানসিক দক্ষতা নিয়মিত প্র্যাকটিস করবেন। সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধ অংশ ভালো করে শেষ করবেন। পরে লিখিত ফলাফলের পর সাবজেক্ট ভিত্তিক প্রয়োজনীয় বই নেবেন এবং সিলেবাস অনুযায়ী প্রস্তুতি নেবেন। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কৌশলী হতে হয়। পাশাপাশি উত্তরপত্রে সুন্দর উপস্থাপনা এবং নির্দিষ্ট সময়ে দ্রুত লেখার অভ্যাসও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হতে হয়?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: ভাইবায় চাপ না নিয়ে স্বাভাবিক থাকাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইবা নিয়ে আমাদের অনেক টেনশন হয়। যেমন- আমার নিজের কথা বলি, আমি অনেকবার ভাইভা বোর্ডের ঢোকা ও বের হওয়ার নিয়ম জেনে গেছি। ঢোকার সময় দরজায় যেন শব্দ না হয় বা বের হওয়ার সময় কাগজগুলো নিয়ে বের হতে হবে। কিন্তু বোর্ডে ঢোকার সময় বিশাল শব্দ হলো এবং আসার সময় কাগজগুলো ভুলে রেখে আসতে যাচ্ছিলাম। ভাইভায় আসলে স্পেসিফিক বলা যায় না কোথা থেকে প্রশ্ন হবে। তবে কিছু বিশেষ বিষয় আছে, সেখান থেকে কমবেশি সবাইকে প্রশ্ন করা হয়। যেমন- নিজের সম্পর্কে, নিজের সাবজেক্ট, মুক্তিযুদ্ধ, সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ইত্যাদি। এগুলো থেকে ভালো প্রস্তুতি নিতে হয়। ভাইবায় বেশি ভয় পেলে বা ঘাবড়ে গেলে ফেল করতে পারেন। তাই এ বিশ্বাস রাখা উচিত, যা-ই পারেন না কেন স্মার্টলি উত্তর দেবেন।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?শেখ রিয়াজুল ইসলাম: যে স্বপ্ন ছিল; সেটি পূরণ হয়েছে। তাই এখন আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ছোটবেলা থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার ঝোঁক ছিল। তাই সুযোগ পেলে আমার ক্যাডারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ অংশে কাজ করতে চাই।
এসইউ/জেআইএম