গত সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। নেই গরম কাপড়, ওষুধ, খাবার। বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প তাদের জীবনে ডেকে এনেছে নতুন বিপর্যয়।
Advertisement
এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে দ্রুত সহযোগিতা করে সিরিয়ার দুর্গত মানুষদের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। অথচ সেই কাজেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতি।
আরও পড়ুন>> সিরিয়ায় প্রথম সহায়তা পৌঁছালো তিন দিন পর
তুরস্ক সীমান্তের কাছে অবস্থিত সিরিয়ার ইদলিব শহরটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। এত বছরের যুদ্ধে এই এলাকার ভবন ও রাস্তাঘাটগুলো আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ ভূমিকম্পের পরপরই সেখানে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে শেল নিক্ষেপ করে সরকারি বাহিনী। শহরটিতে প্রায় ৪৮ লাখ মানুষের বসবাস।
Advertisement
ত্রাণ বিতরণ কঠিনফ্রাঙ্কফুর্টভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা মেডিকো ইন্টারন্যাশনালের হয়ে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সহায়তায় নিয়োজিত অনিতা স্টারোস্তা জানান, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল এবং এমনকি তার আশপাশের এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো বড় ধরনের চ্যলেঞ্জ। আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আলেপ্পোর মতো জায়গাতেও সাহায্য পাঠানো কঠিন।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এর মানে হচ্ছে, এসব এলাকায় আসাদ সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বয় করা যায় না।
অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে অনিতা বলেন, সিরীয় সরকারের মাধ্যমে সাহায্যের যেসব অর্থ যায়, তা সরকারের তহবিল বাড়াতে সহায়তা করে। কারণ এই অর্থ আসাদ পরিবারের ঘনিষ্ঠ সংস্থাগুলোতে যায়। এটি বড় সমস্যা। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ই ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন>> ভূমিকম্পে সিরিয়ায় ৫৩ লাখ বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা
Advertisement
হামবুর্গভিত্তিক জিআইজিএ ইনস্টিটিউট অব মিডল ইস্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আন্দ্রে ব্যাংক বলেন, কোভিডের সময় বিরোধীদের বঞ্চিত করে আসাদ সরকার তার পছন্দের এলাকাগুলোতে টিকা বিতরণ করেছিল। সাহায্য-সহযোগিতার বেলায় তারা কতটা নির্বাচনমূলক এবং কীভাবে আধিপত্য বজায় রাখতে চায় এটি তার প্রমাণ। এ কারণে পশ্চিমা দেশগুলো আসাদ প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারে না।
ভূমিকম্পের সুযোগ নেওয়াভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, সিরিয়ার সরকার কীভাবে এই দুর্যোগকে তার নিজের লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহারের পায়তারা করছে।
আন্দ্রে ব্যাংক বলেন, সিরিয়ান আরব রেড ক্রিসেন্ট সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ৷ এরই মধ্যে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ত্রাণ সংস্থাটি।
আরও পড়ুন>> রাজনীতি রেখে সাহায্য বাড়ান: জাতিসংঘ
তার মতে, সিরিয়ার রাজনৈতিক এলিটরা কীভাবে এই দুর্যোগকে কৌশলে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন, তা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
বার্লিনে জার্মান-সিরিয়ান এইড অ্যাসোসিয়েশনের (ভিডিএসএইচ) বোর্ডের ডেপুটি চেয়ার সাফোহ লাবানিহও একই সন্দেহ করছেন। তার কথায়, অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, সিরিয়ার সরকার তার জনগণকে সাহায্য করতে চায় না। সরকার এই ট্র্যাজেডিকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বৈধতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলেকেএএ/