ছিপখান তিন-দাঁড়তিনজন মাল্লাচৌপর দিন-ভোরদ্যায় দূর-পাল্লা!
Advertisement
পাড়ময় ঝোপঝাড়জঙ্গল-জঞ্জাল,জলময় শৈবালপান্নার টাঁকশাল।
কিংবা পালকির গান কবিতার সঙ্গে পরিচিত নন এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোটবেলায় বাংলা বোর্ড বইয়ে এই কবিতা পড়া হয়েছে শত বার। এই বিখ্যাত কবিতাগুলোর রচয়িতা সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় কবি ও ছড়াকার। রবীন্দ্রযুগের খ্যাতনামা ‘ছন্দোরাজ’ কবি। তার কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘ছন্দের যাদুকর’ নামে আখ্যায়িত করেন। মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী।
১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান এর চুপী গ্রামে। কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই।
Advertisement
অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। তীর্থ সলীল, তীর্থ রেণু, ফুলের ফসল তার অনুবাদ গ্রন্থ। নবকুমার কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতার বিষয়বস্তু। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। তার অপর কৃতিত্ব বিদেশি কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি-ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন। কবিতায় ছন্দের সমৃদ্ধতার জন্য তিনি ছন্দের রাজা ও ছন্দের যাদুকর বলে খ্যাত।
তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোমশিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, মনিমঞ্জুষা, অভ্র-আবীর, হসন্তিকা, বেলা শেষের গান, বিদায় আরতি। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সত্যেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-
“তুমি বঙ্গভারতীর তন্ত্রী-‘পরে একটি অপূর্ব তন্ত্র এসেছিলে পরাবার তরে এ শুধু প্রিয়জনের প্রশংসা নয়, এ এক ঐতিহাসিক সত্য।”
কেএসকে/জিকেএস
Advertisement