মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির
Advertisement
বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক সবুজ ইউনুস। গত শতাব্দির শেষ দশকের শুরুতে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন নামকরা জাতীয় পত্রিকা দৈনিক বাংলার বাণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে। তারপর তিনি কাজ করেন দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়। বর্তমানে সবুজ ইউনুস বহুল প্রচারিত দৈনিক সমকালে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে একই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রধান প্রতিবেদক ও বার্তা সম্পাদকের গুরুদায়িত্বও পালন করেন।
সবুজ ইউনুসের কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে সমকাল অনলাইনের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন। ডিজিটাল সাংবাতিদকায় খুব বেশি জানাশোনা না থাকায় তিনি তা বুঝতে পড়াশোনার তাগিদ বোধ করেন। সেই তাগিদ থেকেই ডিজিটাল সাংবাদিকতার বিভিন্ন বইপত্র, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ফিচার পড়েন ও উপলব্ধি করেন বর্তমান যুগ ডিজিটাল সাংবাতিদকার যুগ। অডিও, ভিডিও, টেক্সট ডিজিটাল সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়। তিনি বিষয়টি ডিজিটাল পাঠক, দর্শক, শ্রোতা, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন ‘মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম’ বইটিতে। বইটিতে মূলত অনলাইন সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়সমূহ সহজ-সরল ভাষায় বলার চেষ্টা করা হয়েছে। মোবাইল সাংবাদিকতা, অনলাইন সাংবাদিকতার সাংগঠনিক কাঠামো, ডাটা জার্নালিজম, পডকাস্ট, সংবাদপত্রে প্রযুক্তির বিবর্তন, আধুনিক সমাজে গণমাধ্যমের প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। যারা সাংবাদিকতায় শিক্ষানবিশ তাদের জন্য সহায়ক হবে বইটি।
সবুজ ইউনুসের শৈশব কেটেছে যশোরের শহরতলী সুজলপুর গ্রামে। পড়াশোনার হাতেখড়ি মুক্তেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর বাংলাদেশ এয়ারফোর্স শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেছেন। লেখাপড়া করেছেন যশোর দাউদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং এম এম কলেজে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স। ডিপ্লোমা করেছেন ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যাস কমিউনিকেশন (আইআইএমসি) থেকে।
Advertisement
আরও পড়ুন: রাহেল রাজিবের প্রেমের কবিতা: বাস্তবতার অভিজ্ঞান
আমরা অনেকেই জানি, বর্তমানের সাংবাদিকতার প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সাংবাদিকতায় মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গণমানুষের কাছে সংবাদ প্রচার ও প্রসার।
সাংবাদিকতায় প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হলেও সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়সমূহ অভিন্ন ও অপরিবর্তনশীল। যেমন- সংবাদ কী, সংবাদের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য, সংবাদ চেতনা, সংবাদের উপাদান, সংবাদ সংগ্রহ প্রক্রিয়া ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, মৌলিক বিষয়গুলো সর্বপ্রথম জানতে হবে, বুঝতে হবে। তাই এ বইয়ের প্রথমভাগে সংবাদের নানা প্রয়োজনীয় দিক আলোকপাত করা হয়েছে।
অনলাইন সংবাদপত্রের কার্যধারা গতানুগতিক সংবাদমাধ্যমের সংবাদকক্ষের কার্যধারা থেকে অনেকটাই আলাদা। অনলাইন সংবাদকক্ষে নিত্যদিন যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। বইটিতে অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে অনলাইন সংবাদপত্রের কার্যধারা, যা নবীন সাংবাদিকদের দারুণ কাজে লাগবে।
Advertisement
সাংবাদিকতার অন্যতম একটি মৌলিক বিষয় সংবাদ সম্পাদনা। সংবাদ সম্পাদনার নিপুণতার ওপর নির্ভর করে যে কোনো সংবাদমাধ্যমের পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও সফলতা। সংবাদ সম্পাদনার নানা কৌশল অত্যন্ত সুন্দর, প্রাঞ্জল ও মনোজ্ঞ ভাষায় বর্ণিত হয়েছে ‘মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম’ বইটিতে।
বইটিতে সাংবাদিকতার নীতিমালার বিভিন্ন বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে। যাতে এ পেশার মানুষ দ্বারা কারও কোনো ক্ষতি না হয়। যেহেতু সাংবাদিকতা করা হয়ে থাকে সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ ও পৃথিবীর মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে।
আরও পড়ুন: পার্কবেঞ্চের কবিতা: মরণ ও প্রেমের সিংহাসন
সাংবাদিকতায় নিউ মিডিয়ার আর্বিভাব ঘটেছে প্রযুক্তির বিবর্তনের হাত ধরে। এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা যে নিউ মিডিয়া সাংবাদিতাকে দারুণভাবে নাড়া দিচ্ছে। নিউ মিডিয়ার নতুন নতুন রূপের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম, ডাটা জার্নালিজম, পডকাস্ট জার্নালিজম, মোবাইল জার্নালিজম। গণমাধ্যমকর্মী ও অধ্যয়নকারীদের মাথায় রেখে গ্রন্থটি নিউ মিডিয়ার নানা ধরনের স্বরূপ সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যায়সমূহ পড়ে অনেকটাই উপকৃত হওয়া যাবে।
আগামী দিনের সাংবাদিকতা পুরোপুরিই মোবাইল প্রযুক্তির ওপর ভর করে এগিয়ে যাবে। সাংবাদিকতা পেশায় টিকতে হলে মোবাইল সাংবাদিকতা বুঝতে হবে ও চর্চা করতে হবে। এটি বুঝতে যত বেশি দেরি হবে; তত বেশি পিছিয়ে থাকতে হবে। তাই মোবাইল সাংবাদিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর বিভিন্ন দিক সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোকপাত করা হয়েছে।
বইটির শেষে দেওয়া সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের নাম পাঠকের জানার আগ্রহকে আরও বেশি জাগিয়ে তুলবে।
এক কথায় বলা যায়, চলমান সাংবাদিকতার নানা সংযোজন, বিয়োজন, বিবর্তন বুঝতে ‘মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম’ গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় বই। এ দাবি করাই যায় যে, বইটি বিশেষ করে ডিজিটাল গণমাধ্যমকর্মীদের ও যারা ডিজিটাল গণমাধ্যম পেশায় আসতে আগ্রহী, তাদের উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
এসইউ/জিকেএস