তুরস্ক-সিরিয়ায় গত সোমবারের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। কেবল তুরস্কেই মারা গেছেন ১৬ হাজার ১৭০ জন। সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৯২ জনে। এর মধ্যে সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রাণহানি হয়েছে ১ হাজার ২৬২ জন এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ হাজার ৯৩০ জন। ফলে দুই দেশ মিলিয়ে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৬২ জন।
Advertisement
গত কয়েক বছর ধরে মহামারি করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং এ সংখ্যা এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপর দিকে ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদ-আপদ একের পর এক আঘাত হানছে? কার মৃত্যু কখন এবং কীভাবে হয় তা আমরা কেউ বলতে পারি না।
গত কয়েক বছরে অনেকেই আমরা নিজ আপনজনদের হারিয়েছি। তারপরও আমাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না? প্রতিনিয়ত পাপ কাজ করেই যাচ্ছি। খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ব্যবসায় অধিক মুনাফা, মিথ্যা বলাসহ এমন কোন পাপ আছে যা আমার দ্বারা হচ্ছে না? মতের অমিল হলে হত্যা করতেও দ্বিধা করছি না।
আমাদের পাপের জন্য দয়াময় আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করার সময় কি এখনও আসেনি। আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমার জন্য তাওবা ও ইস্তেগফার করার এখনই সময়।
Advertisement
আমরা যদি আমাদের পাপ সমূহের জন্য ক্ষমা চাই ও ইস্তেগফারে রত থাকি তাহলে হয়তো তিনি আমাদেরকে সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন।
একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘ইস্তেগফার’-এর সাথে আঁকড়ে থাকে অর্থাৎ ইস্তেগফারে সর্বদা নিয়োজিত থাকে আল্লাহ তাআলা তাকে সর্ব প্রকার বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারের পথ সৃষ্টি করে দেন আর প্রত্যেক দূরাবস্থা থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করে দেন আর তাকে ঐ সমস্ত রাস্তায় দান করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না’ (সুনান আবি দাউদ, কিতাবুল বিতর, বাব ফিল ইস্তেগফার)।
তাই আমাদেরও উচিত হবে সর্বদা ইস্তেগফারে রত থাকা। আমরা যখন যেই অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমরা ইচ্ছা করলেই মহান আল্লাহপাককে স্মরণ করতে পারি। আমাদের কারো জানা নেই যে, কখন, কোন অবস্থায় মৃত্যু ঘটবে। তাই আামরা যদি আমাদের দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করাতে চাই, তাহলে ইস্তেগফারের বিকল্প নেই।
তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমি ভুল করেছি, তারপর আমার মাঝে উপলব্ধি হলো আর আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা চাইলাম আর তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাই বলে বার বার ভুল করবো আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবো তা ঠিক নায়।
Advertisement
মুমিন একই ভুল বার বার করেন না। আমাদেরকে এমনভাবে ইস্তেগফার করতে হবে যেন আমার দ্বারা দ্বিতীয়বার এমন ভুল আর কখনও সংঘটিত না হয়।
একটি হাদিসে এসেছে, হজরত নুমান বিন বশির (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বল্পে তুষ্ট হয় না সে অধিক পেলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না সে আল্লাহতায়ালার করুণারাজিরও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না। আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহরাজির উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ করাটাও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আর আল্লাহতয়ালার আশিস সমূহের উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ না করাটা অকৃতজ্ঞতা’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে বিশ্ববাসীকে সব ধরনের প্রাকৃতিক বিপদাবলী থেকে রক্ষা করুন, আমিন।
লেখক: গবেষক।
এইচঅার/জেআইএম