দেখতে দেখতে নবম দিন পার করলো বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলায় প্রতিদিন নতুন নতুন বইয়ের পাশাপাশি আসছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক বিষয়ের ওপর লেখা বই। হাজার বইয়ের রঙিন প্রচ্ছদে বাহারি ফুলের মতো ফুটে উঠেছে এবারের বইমেলা। অনেক ফুলের ভিড়ে সবারই থাকে প্রিয় ফুল। তেমনি বইমেলায় রয়েছে বিশেষ কিছু বইয়ের জনপ্রিয়তা।
Advertisement
বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় কিছু স্টলে পাঠকদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এসব স্টলে রয়েছে বিখ্যাত ও সমসাময়িক লেখকদের রোমান্টিক উপন্যাস, প্রেমের কবিতা আর থ্রিলার বই। কয়েকটি প্রকাশনীর স্টলে কবিতার বই, বিশেষ করে প্রেমের কবিতার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আবার কিছু স্টলে পাঠকের চাহিদা অনুবাদগ্রন্থ, উপন্যাস এবং ভ্রমণকাহিনিতে।
আরও পড়ুন: চমক নেই বইমেলায়, পুরোনো বইয়ের সমাহার
বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবারের বইমেলায় প্রেমের কবিতা আর রোমান্টিক উপন্যাসের বই বেশি কিনছেন মেয়েরা। তবে ছেলেদের পছন্দ থ্রিলার বই।
Advertisement
অক্ষর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী কাদের হাজীজি বলেন, গল্পের বইয়ের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছের চাহিদা বেশি। কবিতার মধ্যে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতার বই পাঠকের পছন্দের শীর্ষে। এছাড়া জীবনীগ্রন্থের মধ্যে চেঙ্গিস খানের জীবনী নিয়ে লেখা বই চলছে বেশ। পাশাপাশি বাচ্চাদের বই তো আছেই। তবে মেলায় নতুন বইয়ের তেমন পাঠক নেই।
তিনি বলেন, মেলায় কবিতার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর মেয়েদের আগ্রহ বেশি প্রেমের কবিতার বইয়ে। তারা প্রেমের কবিতার বই বেশি কিনছেন। ছেলেরা বই কিনতে আসে না। প্রেমিকা নিয়ে আসে, তারপর তাকে বই কিনে দিয়ে ছবি তুলে চলে যায়।
আরও পড়ুন: কাগজের দাম বাড়ার প্রভাব বইমেলায়, কেনাকাটায় হিসাবি পাঠক
সময় প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সুপন্ত চাকমা বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে সায়েন্স ফিকশন বই বেশি চলছে। এসব বইয়ের মধ্যে জাফর ইকবাল স্যারের ‘প্রলয়’, ‘আমি পরামানব’, ‘ইকারাস’ বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে কবিতার বইয়ে তেমন সাড়া নেই। এ বছর জাফর ইকবাল, আনিসুল হক এবং হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ভালো বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
তিনি জানান, মেয়েরা হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস বিশেষ করে ‘নবনী’, ‘তিথির নীল তোয়ালে’, আর ‘আজ চিত্রার বিয়ে’ বেশি কিনছেন।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী শামিম হোসেন বলেন, আমাদের এখানে থ্রিলারধর্মী বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উপন্যাস। তার মধ্যে তৌহিদুর রহমানের ‘স্বপ্নস্নানের ফেরেশতা’ উপন্যাস বেশি বিক্রি হচ্ছে। এবারের বইমেলায় এই বইটি বেশ হিট করেছে। আর হুমায়ূন আহমেদের বই তো ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ।
তিনি বলেন, মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে আছে তৌহিদুর রহমানের উপন্যাস। তার সব উপন্যাস রোমান্টিক টাইপের। আর এসবই মেয়েরা বেশি কিনছেন। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা হুমায়ূন আহমেদ এবং অ্যাডভেঞ্চারের বই বেশি কিনছেন।
আরও পড়ুন: বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন না দিয়ে বই তুলে দিন
চারুলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জিসান জামী বলেন, আমাদের এখানে পাঠকরা বই দেখছেন। এবছর আমাদের এখানে ইমদাদুল হক মিলন, সৈয়দ শামসুল হক, কবি শামসুর রাহমানের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালের বইয়ের বিক্রি সবসময় শীর্ষে।
কথাপ্রকাশ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রিয়াজ জানান, তাদের প্রকাশনী থেকে প্রবন্ধ এবং গবেষণামূলক বই বেশি বিক্রি হয়। হরিশঙ্কর জলদাসের ‘কর্ণ’, রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও সিরাজুল ইসলামের প্রবন্ধগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। মূলত প্রবন্ধই বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে মেয়েদের ঝোঁক রোমান্টিক উপন্যাসে।
ইত্যাদি প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, এখানে অনুবাদগ্রন্থ আর থ্রিলার টাইপের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এরপরে বিজ্ঞানভিত্তিক বই এবং গাণিতিক বইয়ের ভালো চাহিদা আছে। অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে লায়লা ফেরদৌসের ‘কাইজেন’ বই চলছে ভালো। আমাদের কবিতার বই থাকলেও সেগুলোতে সাড়া একটু কম। তবে শিশুদের বই মেলার প্রধান আকর্ষণ। রিয়াজ আহমেদের লেখা শিশুদের বইগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে এ কথা সবাই স্বীকার করবে যে, মেয়েদের রোমান্টিক উপন্যাসের প্রতি আগ্রহ বেশি। ছেলেদের আগ্রহ অনুবাদগ্রন্থে।
আল-সাদী ভূঁইয়া/কেএসআর/জেআইএম