বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দুইটা ম্যাচ খেলে ফেলেছে। দু’টা ম্যাচে দু’রকম পারফরম্যান্স। এ দু’টা ম্যাচের নিরিখেই বলবো, বাংলাদেশ দলটি এখন বোলিংয়ের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। যদি উইকেটের সহায়তা পায়, তাহলে বাংলাদেশের এই বোলিং দিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। যদিও প্রথম ম্যাচে বোলাররা একদম ভালো বোলিং করেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ভালো বোলিং করেছে; কিন্তু ব্যাটিং ভালা করেনি। তো আগামীকালের ম্যাচে যদি উইকেট চায়, তাহলে বাংলাদেশকে ভালো ব্যাটিং করতে হবে। তবেই বোলিং দিয়ে ফিরে আসা সম্ভব হবে। কারণ বাংলাদেশের বোলিংয়ে এখন দারুণ বৈচিত্র্য আছে।সাকিবের ফর্মে না থাকাটা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা দুশ্চিন্তার বিষয়। এটা দলকে বেশ ভোগাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশকে খুব সিম্পল একটা পরিকল্পনা করেই মাঠে নামতে হবে। টি-টোয়েন্টি বলে একেবারে মারমার, কাটকাট করে খেললে হবে না।শ্রীলঙ্কার যে দলটা রয়েছে, আমি মনে করি এ দলটাকে বাংলাদেশের পক্ষে হারানো খুব সম্ভব। কারণ টি-টোয়েন্টি বলে কথা। খাতা-কলমে অনেক পার্থক্য হতে পারে। ১০-২০। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে সেটা হয়ে যায় ১৯-২০। টি-টোয়েন্টিতে ১০-২০ ওভার লাগে না, ১-২ ওভারের মধ্যেই খেলা চেঞ্জ হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা আর আরব আমিরাতের ম্যাচটির দিতে তাকালেই বোঝা যাবে, এই ফরম্যাটে শক্তির তারতম্য খুব একটা থাকে না। এ কারণেই বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বেশি ধরে রাখবো। বাংলাদেশ তো এমন না যে ১০টা খেলে, ১০টাতেই কিংবা ৯টাতে হারবে। বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে, যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখে।আমি আবারও বলছি, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে সুন্দর একটি প্ল্যান করেই মাঠে নামতে হবে। টি-টোয়েন্টি বলে শুরু থেকেই মারমার কাটকাট করা যাবে না। কারণ, এখনও পর্যন্ত উইকেট থেকে ব্যাটসম্যানরা তেমন সুবিধা পাচ্ছে না। বাংলাদেশকে শুধু বোলিংযের ওপর জোর দিলেই হবে না, রানও করতে হবে। বোলিং হয়তো ভালো করছে, কিন্তু বোর্ডে যখন রান থাকবে না, তখন কিছু হবে না। রান করলেই সব হবে। গতকাল পাকিস্তান রান করতে পারেনি বলেই এমন হারা হেরেছে।টি-টোয়েন্টি যেহেতু মারমার কাটকাট খেলা। কিন্তু উইকেটের চরিত্র বুঝে, উইকেট কী চায় সেটা বুঝে প্ল্যান অনুযায়ী ব্যাট করতে হবে এবং রান তুলতে হবে। কারণ এই উইকেট থেকে জোর করে রান তুলতে গেলেই বিপদ। উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে যেতে হবে খুব দ্রুত। উইকেট যদি হয় ১৩০ রান তোলার মতো তাহলে সেভাবে ব্যাট করতে হবে। যদি শুরুটা খুব ভালো হয়ে যায় তাহলে ১৫০ করার চেষ্টা করতে হবে। আর যদি দেখা যায় যে নরমাল উইকেট, তাহলে ১৬০-৭০ করার চেষ্টা করতে হবে। তবে, সবচেয়ে বড় কথা, এই উইকেট কী চায় সেটা বুঝে নিয়ে মাঠে নামতে হবে।আত্মবিশ্বাসই জিতিয়েছে ভারতকেভারত-পাকিস্তান মানেই অনেক বড় ম্যাচ। আগেই বলেছিলাম, যে ভালো প্ল্যান করবে, তারই জয়ের সম্ভাবনা থাকবে বেশি। পাকিস্তান অবশ্যই সেভাবে ভালো প্ল্যান করে মাঠে নামেনি। উইকেট অবশ্যই রান তোলার জন্য কঠিন। তবুও পাকিস্তানের মতো দলের প্ল্যান কী ছিল বুঝলাম না। আফ্রিদি ওভাবে উইকেট থ্রো করে দিয়ে আসবে, এটা অকল্পনীয়। ওই সময় তার দুই রান নেয়ার কি প্রয়োজন ছিল? ম্যাচের বয়স তো তখন মাত্র ৮ কিংবা ৯ ওভার। এমন রিস্ক নিতে পারতো সে ম্যাচের ২-৩ ওভার বাকি থাকলে।ভারতের খুব ভালো প্ল্যান করেই মাঠে নেমেছে। এটা ওদের খেলা দেখেই বোঝা গেছে। শুধু তাই নয়, অধিনায়ক ধোনিই টসের পর বলেছিলেন, এই উইকেটে প্রয়োজন হলে প্রথম ৫/৬ ওভার বোলারদেরক দিয়ে আসবো। তবুও টিকে থাকতে হবে আমাদের। রান উঠবে শেষের দিকে গিয়ে। এই উইকেটে চরিত্র বোঝা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। উইকেট কী চা তা বোঝা যায় না।সুতরাং, প্রথম ৫/৬ ওভার রান খুব বেশি না হলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু পাকিস্তান এ বিষয়টার দিকে নজরই দেয়নি। ওই জায়গাটাতেই তারা ছিটকে পড়েছে। আর পাকিস্তান একদমই ছিটকে গেছে আফ্রিদির রান আউটটার কারণে। তার আউটটাই পাকিস্তানের জন্য ছিল টার্নিং পয়েন্ট।পাকিস্তান যদি আরেকটু প্ল্যানমাফিক খেলতো এবং ১২০-১৩০ টার্গেট দিতে পারলেও খেলাটা খুব কঠিন হয়ে যেতো ভারতের জন্য। পাকিস্তান নিশ্চিতভাবে উইনিং ফাইট দিতে পারতো। তবুও মোহাম্মদ আমিরের সূচনাটা ছিল দুর্দান্ত; কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, সংগ্রহ যখন মাত্র ৮৩, তখন আমিরের আগুণ ঝরানো বোলিংয়েও কোনো লাভ হওয়ার কথা নয়।তবুও ম্যাড়মাড়ে একতরফা হয়ে ওঠা ম্যাচটিতে কিছুটা বিনোদনের ব্যবস্থা করেছিলেন আমির। প্রথম ওভারেই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের সবচেয়ে বড় নির্ভরতার প্রতীক রোহিত শর্মাকে। এরপর ফেরালেন আজিঙ্কা রাহানেকেও। মোহাম্মদ আমির আসলে বিশ্বসেরা একজন পেসার যে, তা নতুন করে প্রমাণের কোনো প্রয়োজন নেই। আগেও অনেক পরিণত ছিল সে। আর এখন তো বয়সও একটু বেড়েছে। তাতে তিনি আরও বেশি পরিণত হয়েছেন। এতবছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকার পরও এমন পারফরম্যান্স করা, সত্যিই বিস্ময়কর।লেখক: জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার।আইএইচএস/বিএ
Advertisement