দেশজুড়ে

জামিন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হাজতিরা, আত্মহত্যার হুমকি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। দুই বিচারকের অপসারণ ও এক নাজিরের বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কারণে জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হাজতিরা। জামিন না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তারা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটকে ও হাজতে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময়ও কাভার্ডভ্যানে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে নানান স্লোগান দেন হাজতিরা।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কারাবন্দিদের স্লোগান

এসময় রুবেল মিয়া নামের এক হাজতি সাংবাদিকদের দেখে বলেন, ‘আমাকে মুক্ত করুন। গত তিনমাস ধরে একটি তুচ্ছ মামলায় হাজতে আছি। আদালতে বিভিন্ন সময় তোলা হয়। কিন্তু শুধু উকিলের কারণে আবেদন করতে না পাড়ায় জামিন হচ্ছে না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। জামিন না হলে জেলখানায় আত্মহত্যা করবো।’

Advertisement

রবিউল নামের আরেক হাজতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। প্রায় চারমাস ধরে অযথা জেলে আছি। উকিলদের কারণে জামিন আবেদন করা যাচ্ছে না। আজও আদালতে ধার্য তারিখ ছিল, কিন্তু তারা আসেননি।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ৬৯ হাজতি নিয়ে একটি প্রিজন ভ্যান জেলা কারাগার থেকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ফটকে যায়। এসময় ভ্যান থেকে নামার সময় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় হাজতিদের। এসময় তাদেরকে বেশ উগ্র আচরণ করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হাজতে প্রবেশ করান। হাজতেও তারা স্লোগান দিতে থাকেন।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ-

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান চৌধুরী কানন বলেন, ‘এটি পেশকারদের উসকানি। তারাই হাজতির উত্তেজিত করেছেন।’

Advertisement

তবে পেশকারদের ভাষ্য, আমরা কেন আসামিদের উসকে দিতে যাবো? দীর্ঘদিন হাজতে থেকে আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে গেছেন।

আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিচারপ্রার্থীদের জামিন চাওয়া আইনগত অধিকার। যদি কোনো বিচারপ্রার্থী আইন সম্পর্কে অবগত থাকেন, তিনি নিজেই জামিনের আবেদন করতে পারবেন। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হবে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলে আদালত বর্জন করে আসছেন আইনজীবীরা। গত ১ ডিসেম্বর আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে তাদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ আইনজীবীদের। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে বিচারক ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা।

আরও পড়ুন: বিচারপ্রার্থীদের শুনানিতেই মিলছে জামিন, হচ্ছে নিষ্পত্তি

এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এবং আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরে দফায় দফায় ৭ কর্মদিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা। সবশেষ ৮ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।

বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছেন উচ্চ আদালত।

 

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/জিকেএস