আন্তর্জাতিক

বেঁচে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্মানো শিশুটি

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক-সিরিয়ায় সীমান্ত অঞ্চল। ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপ পড়ে মারা গেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন হতভাগ্য এক অন্তসত্ত্বা নারীও। ধ্বংসস্তূপে চাপ পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার আগে জন্ম দিয়েছেন ফুটফুটে এক সন্তানকে। মৃত মায়ের পাশে ধুলো-বালি আর তীব্র ঠান্ডার মধ্যে নাড়ি জোড়ানো অবস্থাতে পড়েছিল শিশুটি। কয়েক ঘণ্টা পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে। তবে সে জীবিত না মৃত তা নিয়ে সন্দেহ কাটছিল না। অবশেষে জানা গেলো, নবজাতকটি অক্ষত এবং সুস্থ রয়েছে। হাসপাতালে নিবিড় যত্নে রয়েছে সে।

Advertisement

গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তুরস্ক-সিরিয়ায় এ শতাব্দীর ভয়াবহতম ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে দুটি কন্যাশিশু, চোখে-মুখে উদ্ধারের করুণ আকুতি তাদের; ধসে পড়া ছাদে ঝুলে থাকা এক বালক দোয়া পড়ছে; ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া লাইভে উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছে এক কিশোর- হৃদয়বিদারক এমন অসংখ্য দৃশের অবতারণা হয়েছে ভূমিকম্পের পর।

আরও পড়ুন>> ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্ম নিলো ফুটফুটে শিশু

শরীর ধুলোয় ঢাকা, রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে অনেককে। তবে বাকিদের ভাগ্য অতটা প্রসন্ন নয়। কাপড়ে মোড়ানো তাদের মরদেহগুলো রাখা হয়েছে রাস্তার পাশে, নাহয় তুলে দেওয়া হচ্ছে শোকে স্তব্ধ বাবা-মায়ের কাছে। উদ্ধার হওয়া অনেক শিশুর পরিচয় মেলেনি এখনো। হয়তো পরিবারের সব সদস্যকেই হারিয়ে ফেলেছে তারা।

Advertisement

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জো ইংলিশের মতে, ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে পুরোপুরি অক্ষত কোনো শিশুকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারা শারীরিক বা মানসিকভাবে অবশ্যই বিধ্বস্ত।

আরও পড়ুন>> তুরস্কে ৪৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো আরেক মা ও শিশু

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ঠিক কত শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন ইউনিসেফের এ কর্মকর্তা।

নিউইয়র্ক টাইমসের খবর অনুসারে, ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অনেক এলাকায় মানুষজন খালি হাতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেভাবে গত সোমবার সিরিয়ায় আলেপ্পোয় জিনদায়ার্স শহরে ধসে পড়া একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছিলেন খলিল আল শামি। ওই ভবনে তার ভাইয়ের পরিবার থাকতো। একপর্যায়ে খলিল তার ভাবির পা দেখতে পান। আরেকটু খেয়াল করতেই দেখেন, নাড়ির সঙ্গে যুক্ত একটি নবজাতকও পড়ে রয়েছে পাশে। ধ্বংসস্তূপের নিচেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন ওই নারী।

Advertisement

A baby born under the rubble and rescued hours later. Two little girls lying flat in a collapsed building. A boy dangling from a roof.Across Turkey and Syria, harrowing tales of rescue and survival have emerged after this week's deadly earthquakes. https://t.co/0R6eJR0ICj pic.twitter.com/VQ0NP0le14

— The New York Times (@nytimes) February 8, 2023

খলিল জানান, ধুলোয় মাখামাখি হয়ে থাকা মাতৃনাড়ি কেটে দিতেই কেঁদে ওঠে শিশুটি। ৩৪ বছর বয়সী এ যুবক জানান, তিনি দ্রুত খুঁড়তে থাকেন। ভাবছিলেন, তার ভাবিও হয়তো বেঁচে রয়েছেন। কিন্তু না, তার ভাগ্য অতটা ভালো ছিল না। মারা গেছেন ওই নারী। তবে তার সন্তান, অর্থাৎ খলিলের ভাতিজি হাসপাতালে নিরাপদে রয়েছে।

আরও পড়ুন>> ৪০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী উদ্ধার

খলিল জানান, একদিন পরেই তার ভাবির সন্তান ডেলিভারির দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আঘাতের কারণে হয়তো আগেই বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন তিনি।

কেএএ/