তার সময়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়া মানেই ভারতের পরাজয় যেন অবধারিত। তবে, সৌরভ গাঙ্গুলি এই ‘অবধারিত’ হয়ে ওঠা অভ্যাসটাকে পাল্টে ফেলেছিলেন। পাকিস্তানের মাটি থেকেও সিরিজ জয় করে ফিরেছিলেন। আর বিশ্বকাপের মঞ্চে তো নিজেদের অপরাজেয় অবস্থাকে নিরঙ্কুশই রেখেছিলেন কলকাতার মহারাজ সৌরভ। নিয়মিত সিরিজ না হলেও কোন টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হচ্ছে নিয়মিতই। গত বিশ্বকাপে হয়েছে, এবার এশিয়া কাপে হচ্ছে। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হবে। তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ড্রেস রিহ্যার্সাল হিসেবেই বলা হোক আর এশিয়া কাপের মূল লড়াই- যাই হোক আবারও ক্রিকেটের ‘এল ক্ল্যাসিকো।’ মুখোমুখি চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দেশ, ভারত এবং পাকিস্তান। কে জিতবে এই ম্যাচে?সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করে ভারতের সফলতম অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বের করার চেষ্টা করেছেন কে জিততে পারে এই ম্যাচে। তার বিচার-বিশ্লেষনে এগিয়ে ভারতই। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা কলাতেই সেটা উঠে এসেছে। সৌরভ গাঙ্গুলির কলামটি আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে হুবহু তুলে ধরা হলো জাগো নিউজ-এর পাঠকদের জন্য।‘প্রতিটা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতো এশিয়া কাপে দু’দলের লড়াই নিয়েও উত্তেজনা আর প্রত্যাশার শেষ নেই। এই যুদ্ধগুলো নার্ভের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়। দু’দেশের ক্রিকেটার শুধু নয়, কোটি কোটি সমর্থকদের আবেগ জড়িয়ে থাকে এই ম্যাচের সঙ্গে। এখন ভারত ভাল ক্রিকেট খেলছে। টিমের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। দলের প্রধান মুখ, ব্যাটসম্যান হোক বা বোলার, সবাই দুর্দান্ত ফর্মে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভারত নিখুঁত পারফর্ম করেছে। ওদিকে পাকিস্তানে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার সহাবস্থান। খাতায়-কলমে ওদের বোলিংটাকে বেশ শক্তিশালী দেখায়; কিন্তু ব্যাটিংকে এই ম্যাচের চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে।একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তানই বেশিরভাগ ম্যাচে ভারতকে হারাত। তবে গত দশ-বারো বছর এই যুদ্ধে ভারত একপেশে কর্তৃত্ব রেখে যাচ্ছে। মাঠে শুধু ক্রিকেটীয় দক্ষতায় যে ভারত এগিয়ে রয়েছে, তা কিন্তু নয়। বিপক্ষের উপর ওরা মানসিকভাবেও রাজত্ব করছে। পাকিস্তানি প্লেয়ারদের সম্মান করেই বলছি, এই দশ-বারো বছরে যে সব ক্রিকেটার ভারতীয় দলে খেলেছে, তারা ওদের পাকিস্তানি সতীর্থদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, বীরেন্দর শেবাগ, অনিল কুম্বলে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর বিরাট কোহলির মতো ক্রিকেটার ওদের আসেনি। পাকিস্তান আগে গর্ব করে বলতে পারত যে, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আক্রাম, ওয়াকার ইউনিস, ইনজামাম-উল হক, সাকলায়েন মুস্তাক, মোহাম্মদ ইউসুফ আর সাঈদ আনোয়ারের মতো ক্রিকেটারকে ওরা একটা টিমে একসঙ্গে খেলাচ্ছে; কিন্তু এই প্লেয়াররা অবসর নেওয়ার পরে পাকিস্তানের হাতে ধারাবাহিকভাবে এত ভাল জাতের ক্রিকেটার আসেনি। আর তাই দুটো টিমের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে।নেতৃত্বের ব্যাপারটাও পাকিস্তানকে খুব ভুগিয়েছে। একটা সময় ওদের অধিনায়ক ছিলেন ইমরান খানের মতো গ্রেট প্লেয়ার। তারপরে জাভেদ ভাই, ওয়াসিম আর ওয়াকার। নেতা হিসেবে এমনকি ইনজামামও যথেষ্ট ভাল ছিল। ব্যক্তিগতভাবে এরা তীব্র প্রতিযোগী ছিল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিত। নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে টিমকে টেনে তুলত। নিজেদের সব সতীর্থের কাছ থেকেও সেরাটা দাবি করত। পাকিস্তানি ক্রিকেটের এই দিকটাতেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। একবার ধোনিকে দেখুন। কী দুর্দান্ত সংযমের সঙ্গে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। তা হলেই তফাতটা বুঝতে পারবেন।ম্যাচের মানসিক দিকটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েকদিন ধরে একটা জিনিস মনে হচ্ছে। হালফিলে পাকিস্তানের উপর ভারত এমন কর্তৃত্ব দেখিয়েছে যে, কয়েকটা ম্যাচে ওদের টিমটাকে দেখে মনে হয়েছে যে এরা ড্রেসিংরুমেই হেরে বসে আছে। আর এখানেই কিন্তু অধিনায়কের চ্যালেঞ্জ। নিজের টিমকে মানসিকভাবে টেনে তোলা। ওদের মনে এই বিশ্বাসটা ঢুকিয়ে দেওয়া যে, বিপক্ষকে কাঁদিয়ে ছাড়ার মতো ক্ষমতা ওদের আছে। অভিজ্ঞ আফ্রিদি কি এই কাজ করতে পারবে? দেখার অপেক্ষায় আছি।ভারত কিন্তু পুরো ছন্দে রয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভাল একটা ইনিংস খেলল রোহিত। ইনিংসটা যে গতিতে গড়ে তুলল, খুব সুন্দর। এই ম্যাচে ভাল করার জন্য মুখিয়ে থাকবে বিরাট, রায়না, ধোনি, যুবরাজ, অশ্বিন আর নেহরা। পাকিস্তানের বোলিংয়ে যথেষ্ট বিষ আছে। ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ ইরফান, মোহাম্মদ আমের আর আফ্রিদি বেশ ভাল কম্বিনেশন। আমি আমেরকে খুব খুঁটিয়ে দেখব। পাঁচটা বছর ও ক্রিকেটের বাইরে ছিল। এই পর্যায়ে ভাল খেলার ক্ষমতা ওর এখনও আছে কি না, দেখতে চাই।ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের মতো এই পিচেও যদি সবুজ আভা থাকে, তাহলে পাক পেসারদের সতর্কভাবে সামলাতে হবে; কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল— নেহরার সুইং, বুমরাহের নিখুঁত নিশানা আর অশ্বিনের চাতুরির সামনে কি পাকিস্তান ব্যাটিং দাঁড়াতে পারবে? দুটো টিমের মধ্যে এটাই কিন্তু তফাত গড়ে দিতে পারে।’আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement