কৃষি ও প্রকৃতি

রঙিন ফুলকপি চাষে সফল ভৈরবের সাদ্দাম হোসেন

হলুদ, বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার সাদ্দাম হোসেন। বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। প্রতিদিনই হলুদ, বেগুনি রঙের ফুলকপি দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আকারে বড় এবং দামেও বেশি এসব ফুলকপি থেকে লাভবানও হয়েছেন তিনি।

Advertisement

কৃষক সাদ্দাম হোসেন উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পরিখারপাড় এলাকার বাসিন্দা। গত বছর উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। প্রশিক্ষণ চলাকালীন জামালপুর জেলার হর্টিকালচার সেন্টারে রঙিন ফুলকপি চাষ পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৭শ গাছ এনে জমিতে রোপণ করেন।

সাদ্দাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যখন জমিতে ফুলকপি চাষ করি; তখন বাবা বলছিলেন এই ফুলকপি কি বিক্রি করতে পারবো? তবে বাবার কথায় ভেঙে পড়িনি। আমার মনে জোর ছিল যে বাজারে বিক্রি করতে পারবো। সেই আশায় চাষ করে বেশ সাড়া পেয়েছি এবং আর্থিকভাবেও সফল হয়েছি। ১৫ শতক জমিতে দুই রকমের ফুলকপি চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। এই কপি চাষে কষ্ট কম বলে নিজেই চাষ করেছি, তাতে খরচও কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার মতো ফুলকপি বিক্রি করেছি।’

আরও পড়ুন: টমেটোর নতুন জাত ‘সাউ রেড রুবি’ উদ্ভাবন 

Advertisement

তিনি বলেন, ‘জমিতে যে পরিমাণ ফুলকপি আছে, তা বর্তমান বাজার দরে আরও ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। ১০ হাজার টাকা খরচ করে ১ লাখ টাকার রঙিন ফুলকপি বিক্রি করতে পারবো। আমার জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে এলাকার কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আগামী বছর অনেকেই বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাহারি রঙের ফুলকপি চীনে খাওয়া হয় সালাদ হিসেবে। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ বেশি। বাজারেও চাহিদা বেশি। দেখতে সুন্দর এ কপি অর্ধসিদ্ধ করেই খাওয়া যায়। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে ভৈরবে রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার। চারা রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই কপি বিক্রি করা যায়। একেকটি কপির ওজন হয় প্রায় দেড় কেজি।

মানিকদি গ্রামের পরিখারপাড় এলাকায় ফুলকপি দেখতে ও কিনতে আসেন কুলিয়ারচর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরে দেখতে এলাম। প্রথমবার এমন বাহারি রঙের ফুলকপি দেখলাম। কৃষক ভাইয়ের কাছ থেকে দুটি হলুদ ও বেগুনি রংয়ের ফুলকপি কিনে নিলাম। আসলে বাহারি ফুলকপি দেখতে বেশ ভালো লাগছে।’

'

Advertisement

আরও পড়ুন: টমেটো চাষে হেক্টরপ্রতি ৫ লাখ টাকা লাভ 

ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বাইতুল হক বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে এ সবজির প্রদর্শনী হয়েছিল। সফলতা আসায় আগামীতে এ অঞ্চলে সবজিটি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করানো হবে। কৃষক সাদ্দাম হোসেনের মাধ্যমে এ বাহারি ফুলকপির আবাদ করানো হয়। ভৈরবের কৃষিতে এটি একটি নতুন সংযোজন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, ‘প্রথমবার সাদ্দাম হোসেন বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে। রঙিন ফুলকপিতে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্টসহ মানবদেহে উপকারী বিভিন্ন উপাদান আছে। সাধারণ ফুলকপি যেখানে ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়; সেখানে এটি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে রঙিন ফুলকপি চাষ অনেকটাই বাড়বে।’

রাজীবুল হাসান/এসইউ/জিকেএস