আন্তর্জাতিক

তুরস্কে উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ

তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৮২৩ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৩৭৯ জন। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪৪ জনে।

Advertisement

শক্তিশালী এ ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে তুরস্ক। দেশটির উদ্ধারকর্মীরা দিনভর তৎপরতা চালিয়েছেন। তবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদ্ধার তৎপরতায় গতি আনতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশের পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র গ্রিসও দুর্দিনে তুরস্ককে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এরইমধ্যে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।

এছাড়া চিকিৎসক দল, ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারে প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াডও পাঠিয়েছে দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সৌদি আরব, কাতারও সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: তুরস্কে ১০ শহর ক্ষতিগ্রস্ত, কিছু এলাকায় এখনও পৌঁছেনি উদ্ধার দল

বিবিসি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি উদ্ধারকারী দল তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। এ দলে ৭০ সদস্য রয়েছেন। জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। দেশটি উদ্ধার দলের সঙ্গে বিশেষ ডগ স্কোয়াডও পাঠিয়েছে। সোমবার রাতে বন এয়ারপোর্ট থেকে এ টিম তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করে।

প্রায় একই সময়ে সুইজারল্যান্ডের একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল ও ডগ স্কোয়াড টিম জুরিখ বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। ৫০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলকে তুরস্কে পাঠিয়েছে হাঙ্গেরি। তাদের সঙ্গেও রয়েছে একটি বিশেষ ডগ স্কোয়াড। সোমবার রাতে বুদাপেস্ট বিমানবন্দর থেকে এ উদ্ধারকারী দল তুরস্কে যাত্রা করে।

আরও পড়ুন: জীবিত উদ্ধার শিশুর মা-ভাই-বোনের মৃত্যু, সংকটাপন্ন বাবাও

Advertisement

তুরস্কের প্রতিবেশী রাষ্ট্র গ্রিসও একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর একটি বিমানে করে উদ্ধারকারী দল তুরস্কে পৌঁছে। যুক্তরাজ্য ৭৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলকে তুরস্কে পাঠিয়েছে। এ দলে রয়েছে উচ্চ প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াডও। এছাড়া নিরাপদ হেলমেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দিতে প্রস্তুত দেশটি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিয়েপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে দ্রুতই টেলিফোনে কথা বলবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এর আগে টুইটবার্তায় বাইডেন লেখেন, তুরস্কে সব ধরনের সহায়তা পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কিও সাধ্যমতো তুরস্ককে সহায়তা করার কথা জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম তাৎক্ষণিক সাড়ে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। কাতারও তুরস্কে সহায়তা ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে।

আরও পড়ুন: কম্পনের আকস্মিকতায় শরীর হিম হয়ে আসছিল, নড়তেই পারিনি

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা এ ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও।

ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার ভোরে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলোতে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে। কর্মীরা ধ্বসংস্তূপের মধ্য থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপড়তা জোড়ালো করেছে।

আরও পড়ুন>> ঘর নেই, খাবার নেই, বেঁচে থাকার কিছুই নেই: তুর্কি নারী

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে তুরস্কের অন্তত ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শহর দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আল-জাজিরার সাংবাদিক সিনেম কোসেওগ্লু ইস্তাম্বুল থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

১৯৯৯ সালের পর এটাই তুরস্কে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই বছরের আগস্টে সাত দশমিক ছয় মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল মারমারায় আঘাত হানে। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে দেশটিতে সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়।

এএএইচ