‘বিছানার নিচে আশ্রয় নেওয়া কি ভালো হবে? মূলত আমার জানাই ছিল না কী করা উচিত। শরীরটা যেন হিম হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল- আমি পুরোপুরি থমকে গেছি। কোনোভাবে নড়তেই পারছি না।’
Advertisement
এভাবেই ভূমিকম্পের আকস্মিকতায় আতঙ্কিত হওয়ার মুহূর্ত বর্ণনা করছিলেন মোহাম্মদ হামজা। তিনি সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট শহর আদ-দানার বাসিন্দা। হামজা ‘ইসলামিক রিলিফ’ নামের একটি ত্রাণ সংস্থার কো-অর্ডিনেটর।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে হঠাৎ কম্পন অনুভব করেন মোহাম্মদ হামজা। বিছানা থেকে উঠে বসেন। কম্পনের মাত্রা এতই বেশি ছিল যে তিনি ঠিক কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পাশেই ঘুমাচ্ছিল হামজার তিন শিশুসন্তান।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজআওরে যুক্ত হয়ে আতঙ্কের ওই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে হামজা বলেন, ‘চোখ খুলে আমি দেখলাম, তিন শিশুসন্তান ঘুমাচ্ছে। আমার তখন কী করা উচিত, তা মাথায় আসছিল না। আমি কি তাদের ডেকে তুলবো নাকি ঘুমাতে দেবো? মনে হচ্ছিল, যেভাবেই হোক আমরা মরতে যাচ্ছি! তখন আমি যেটা ভাবছিলাম, তা হলো- শিশুদের ডেকে তুলে পরিস্থিতি দেখিয়ে তাদেরকে কি ভীতসন্ত্রস্ত করা উচিত হবে?’
Advertisement
আরও পড়ুন: জীবিত উদ্ধার শিশুর মা-ভাই-বোনের মৃত্যু, সংকটাপন্ন বাবাও
তার ভবনের আশপাশের বহু বহুতল ভবন ধসে পড়েছে। তবে মোহাম্মদ হামজা নিরাপদে সেখান থেকে সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন বলে জানান। কিন্তু এখনও তিনি সেই আতঙ্কের মুহূর্ত ভুলতেই পারছেন না বলেও উল্লেখ করেন হামজা।
A 7.8 magnitude earthquake shook #Turkey followed by strong aftershocks in several provinces in #Türkiye and the region, knocking down many buildings and high rises including this one in the city of #Şanlıurfa in southern Turkey.#earthquake #DEPREMOLDU #BaşınSağolsunTürkiyem pic.twitter.com/E2TyWqFgEv
— Ahmad Hashemi (@MrAhmadHashemi) February 6, 2023সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা এ ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও।
Advertisement
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় ধসে পড়া ভবন থেকে জীবিত উদ্ধার ছোট্ট শিশু
ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার ভোরে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলোতে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে। কর্মীরা ধ্বসংস্তূপের মধ্য থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা জোরালো করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, তুর্কি দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৬২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৮ জনকে। দেশটিতে অন্তত পাঁচ হাজার ৬০৬টি বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ‘মৃত্যুপুরী’ তুরস্ক-সিরিয়ায় প্রাণহানি তিন হাজার ছাড়ালো
অন্যদিকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার ২৯৩ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দেশটির সরকারনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ৫৯৩ জন এবং বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় ৭০০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সিরিয়ার এ দুই অঞ্চলে যথাক্রমে এক হাজার ৪১১ জন এবং দুই হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
এএএইচ