আন্তর্জাতিক

বেঁচে যাওয়াদের মুখে ভয়াবহতার বর্ণনা

তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত অঞ্চলে সৃষ্ট ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে হয়েছে। যার শকি্তশালী আঘাত লেগেছে পাশের দেশ সিরিয়াতেও। এ ঘটনায় দুদেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজা ২০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ধসে যাওয়া অসংখ্য ভবনের নিচে চাপা পড়েছেন আরও বহু মানুষ। এর মধ্যেই ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তি।

Advertisement

তুরস্কের মালত্য শহরের তরুণি ওজগুল কনাকচি (২৫) বিবিসি তুর্কিকে বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমি ও আমার ভাই সোফায় ঘুমাচ্ছিলাম। একপর্যায়ে কম্পন অনুভূত হলে ভাইকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কি কাঁপছো। আমার ভাইও আমাকে, একই প্রশ্ন করে। তখনই বুঝেতে পারি, আমরা ভূমিকম্পের কবলে পড়েছি।

আরও পড়ুন>> তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প/ আফটারশক চলতে পারে কয়েকদিন, এমনকি মাসও: বিশেষজ্ঞ

ওজগুল আরও বলেন, আমি ঘরের বৈদ্যুতিক বাতির দিকে তাকিয়ে দেখি, সেটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। পরে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তিন বছর বয়সী ভাতিজাকে নিয়ে আমরা সবাই ঘর থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে যাই। পরে আফটার শকের ফলে আমাদের চোখের একটি ভবনের কাচের জানালাগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

Advertisement

‘ভূমিকম্পে আমাদের ভবনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশেপাশের পাঁচটি ভবন ধসে পড়েছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চললেও, প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়া ও তুষাপাত পরিস্থিতি খুব কঠিন করে তুলেছে। সবাই এখন রাস্তা ও খালি জায়গাগুলোতে বসে রয়েছেন। কী করবেন, কী হবে তা সবাই খুব চিন্তিত।’

আরও পড়ুন>> তুরস্কে ভূমিকম্প: ধসে পড়লো ১৭০০ ভবন

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দা সামের রয়টার্সকে বলেন, ভোরের দিকে হঠাৎ ঘরের দেয়ালে টাঙানো ছবিটি বিকট শব্দে পড়ে যায়। আমি হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। বুঝতে পারি, ভূমিকম্প হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে হুড়মুড় করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিজের বাড়িটি মাটিতে মিশে যায়।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে নিহাত আলতুন্ডাগ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার চারপাশে ভবনের ধ্বংসস্তূপ। সেখানে আগুন লেগেছে। যেসব ভবন টিকে আছে সেগুলোতেও বড় বড় ফাটল। শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে, তাদের মধ্যে কত যে শিশু আছে তার ঠিক নেই। তারা বেঁচে আছে কি না, তা আমরা কেউই জানি না।

Advertisement

আরও পড়ুন>> তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আদানার নিলুফার আসলান নামের এক নারী বলেন, ভূমিকম্পে আমাদের পাঁচতলার অ্যাপার্টমেন্টটি কেঁপে ওঠে। প্রায় ১ মিনিট ধরে পুরো ভবন কাঁপতে থাকে। এ সময় আমি পরিবারের অন্য সদস্যদের এক জায়গায় জড়ো হওয়ার জন্য বলি। আমার মাথায় তখন শুধু একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, মারা গেলে অন্তত সবাই একই জায়গায় একসঙ্গে মরে যাই।

‘ভূমিকম্প থামলে, দৌঁড়ে বাইরে চলে আসি। এর পরপরই আমাদের ভবনটিসহ আশেপাশের চারটি ভবন ধসে পড়ে। বেরিয়ে আসার সময় আমার সঙ্গে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। সব শেষ হয়ে গেছে। তবে, বেঁচে আছি সেটিই এখন সবচেয়ে ভাগ্যের বিষয়।’

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান

এসএএইচ