অর্থনীতি

ঢাকায় ডিমের হালি ৫০, ব্রয়লারের কেজি ২০০ টাকা

কয়েকদিন ধরেই অস্থির হয়ে উঠেছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। এখন প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, ডজন দেড়শ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

Advertisement

সোমবার রাজধানীর বেশকিছু বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এ চিত্র।

অল্প সময়ের ব্যবধানে এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাচ্চা ও ফিডের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পাশাপাশি জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের একটি সংগঠন এ মূল্যবৃদ্ধির জন্য করপোরেট কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটকে দায়ী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

বাজারের এমন পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহ আগেও যারা ব্রয়লার মুরগি কিংবা ডিম কিনেছিলেন, সোমবার বাজারে এসে তাদের পিলে চমকে গেছে। হুট করে এমন মূল্যবৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার বাগবিতণ্ডা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পদক্ষেপ আসছে: কৃষিমন্ত্রী

সেগুনবাগিচা বাজারে পলাশ আহম্মেদ বলেন, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ টাকায় কিনেছি। এখন বলছে ২১০ টাকা। ডিমের দাম চাচ্ছে ৫০ টাকা হালি, যা ৪০ টাকায় কিনেছি। এটা কীভাবে সম্ভব? এমন হলে গরিব মানুষ সংসার চালাবে কীভাবে?

ডিম বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, হুট করে ডিম-মুরগির দাম বেড়ে গেছে। প্রতিদিন আড়তে দাম বাড়ছে। আজ এক রকম তো কাল আরেক রকম। প্রতিদিন ডজনে ৫ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। মুরগি বাড়ছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা করে। জানি না এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে।

অন্যদিকে পাড়া-মহল্লার মুদিদোকান থেকে ডিম কিনলে দিতে হচ্ছে তার চেয়েও কয়েক টাকা বেশি। কোথাও কোথাও ডিম ৫২ টাকা হালিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ডিম একটু কমে, প্রতি হালি ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

Advertisement

অন্যদিকে বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩৪০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত। দেশি মুরগির দাম হাঁকা হচ্ছে ৫০০-৫৬০ টাকা প্রতি কেজি।

কারওয়ান বাজারে এসএম এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা কাশেম সিকদার জানান, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ায় অন্য সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা। তবে বাজারে মুরগির কোনো সংকট নেই বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগি বিক্রির পাইকার পাচ্ছে না পোল্ট্রি খামারিরা

তিনি বলেন, কাঁচামালের দাম মাঝেমধ্যে হেরফের হয়। শীতের সময় ব্রয়লারের চাহিদা বাড়ে, সরবরাহ কিছুটা কমে যায়। তবে সেটা স্বাভাবিক অন্য সময়ের মতোই। তবে হুট করে কেন এমন হলো, সেটা জানা নেই।

এ বিষয়ে খামারিদের সংগঠন পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদারের জাগো নিউজকে বলেন, খামারেই ডিম-মুরগির দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এ দাম বৃদ্ধির কারণ বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বাচ্চার দাম বেড়েছে। গত ৫ জানুয়ারি প্রতি পিস মুরগির বাচ্চা ৯-১০ টাকা ছিল। এখন সেটা ৫৬ টাকা হয়েছে।

তিনি বলেন, যখন রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে খামারিরা বাচ্চা নিচ্ছে, তখন এই অবস্থা। গত বছর ফিডের দামও দ্বিগুণ করেছে এই কোম্পানিগুলো। সেজন্য এখন বাজারে ডিম ও মুরগির দাম অস্বাভাবিক বাড়ছে।

এ খামারির দাবি, পোল্ট্রি খাতে বাচ্চা ও খাবার (ফিড), মেডিসিনসহ অন্যন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছু উৎপাদন করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। আবার তারা ডিম এবং মুরগিও উৎপাদন করছে। পাশাপাশি খামারিদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়েও (চুক্তিভিত্তিক) জড়িত অধিকাংশ কোম্পানি। সে কারণে তাদের সঙ্গে টিকতে পারছে না দেশের সাধারণ খামারিরা। কোম্পানিগুলো বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে এখন।

এসব অভিযোগ তুলে করপোরেট কোম্পানিগুলোর মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদন এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বন্ধের দাবি জানিয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলনও করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘ সময় দেশের প্রান্তিক খামারিরা মুরগি ও ডিমের দাম না পেয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। এক লাখ ৬০ হাজার খামার, এখন বন্ধ হয়ে এখন ৬০ হাজারে ঠেকেছে। তারপরও সব খামারে মুরগি নেই। ফলে প্রান্তিক খামারিদের কাছে এখন মুরগি ও ডিমের নিয়ন্ত্রণ নেই।

সংগঠনটি বলছে, প্রান্তিক খামারিদের একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১১.১১ পয়সা, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ ১৪৮ টাকা, ১ কেজি সোনালি মুরগিতে খরচ ২৬২ টাকা। এখন যে দাম তাতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে এখন সাধারণ খামারিদের কাছে মুরগি নেই। এ মুনাফা যাচ্ছে করপোরেট কোম্পানির ঘরে বলেও দাবি করেন সুমন হাওলাদার।

এনএইচ/এমএইচআর/জেআইএম