রাষ্ট্রপতি পদে কে আসছেন, এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। এরই মধ্যে ডালপালা ছড়িয়েছে নানান গুঞ্জন। দুজনকে ফোন দেওয়ার খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। ফেসবুকসহ নানান মাধ্যমে আকারে ইঙ্গিতে এলাকা বা সেক্টর উল্লেখ করে নানান জন ইঙ্গিতও দিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে, কে হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি সেটি নির্ধারণ হবে মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি।
Advertisement
মঙ্গলবার হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা। ওই সভা থেকেই মূলত দলটির মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে রাষ্ট্রপতি পদে। আর সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন রাষ্ট্রপতি।
সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোট
Advertisement
আগামী ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের। পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী, তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে নতুন কাউকে দেখা যাবে তার জায়গায়।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ করতে হবে। সে হিসেবে, নির্বাচন কমিশন তফসিলও ঘোষণা করেছে।
তফসিল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে ভোট গ্রহণ করা হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। এখানে ভোটার খোদ সংসদ সদস্যরা। আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন।
Advertisement
যেহেতু জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, তাই ধরে নেওয়া হয়, তারা যাকেই এ পদে প্রার্থী করবে, সে প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
আরও পড়ুন: আলোচনায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
এরই মধ্যে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, এ নিয়ে চলছে গুঞ্জন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে জাগো নিউজের।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে ১ ফেব্রুয়ারী সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/পিআইডি
তারা বলছেন, ব্যাপারটি একান্তই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ারে। এটি আগাম কারও পক্ষে বলা সমীচীন নয়, সহজও নয়। তিনি যেটি ঠিক করেন, দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী তাকে সহযোগিতা করেন।
তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক আড্ডায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের নানান সমীকরণ উঠে এসেছে। এসব আলোচনায় সবচেয়ে বেশি আসছে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নাম। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। স্বচ্ছ রাজনীতিক, উচ্চশিক্ষিত ও মার্জিত শিরীন শারমিন বেশ দক্ষতার সঙ্গে সংসদ সামলাচ্ছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকেও স্পিকার পদ থেকে এনে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে মন্ত্রিপরিষদের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হককে এগিয়ে রাখছেন অনেকে। আবার প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও চাউর হয়েছে।
তবে অনেকে বলছেন, সরাসরি রাজনীতি করে আসা ছাড়া কারও রাষ্ট্রপতি পদে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বেশি হলেও দেশের যেকোনো সংকটে রাষ্ট্রপতিকেও শক্ত ভূমিকা রাখতে হয়। নজির আছে- সাবেক আমলা বা বিশিষ্টজনদের অনেকে এ পদে এসে সেই ভূমিকা রাখতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসকেন্দ্রিক আড্ডায় দলটির সম্মেলনপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম রাষ্ট্রপতি পদে বেশি উচ্চারিত হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী বলে আসছেন, সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের সিরিয়ালে পরিবর্তন আনা হয়েছে। যাতে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে রাষ্ট্রপতি করা হলে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নাম আলোচনায় সর্বাগ্রে। তবে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ সারথী হিসেবে ওবায়দুল কাদের যেভাবে দল ও সরকারের কাজ নিরলসভাবে করছেন, তাকে রাষ্ট্রপতি করা হলে দলীয় এবং সরকারি সেসব কাজে ব্যাঘাত বা ছন্দপতন হয় কি না, সে ভাবনা এখন সামনে আসছে। যে কারণে আলোচনায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও আছেন।
তবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্য মনে করেন না বলে দাবি করেছেন ওবায়দুল কাদের। ১২ জানুয়ারি সচিবালয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার নাম আলোচনায় আসছে জানিয়ে প্রশ্ন করলে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ওই পদে বসার যোগ্যতা আমার নেই।
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর নামও আসছে আলোচনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নামও অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ সফরে গিয়ে রিকশায় চড়ে ঘোরেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ/ফাইল ছবি
রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এটি একান্তই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনা বা পছন্দের বিষয়। উনার আস্থায় যিনি আছেন, তাকে তিনি ঠিক করবেন। উনি যেটি ঠিক করেন, দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী সেভাবে সহযোগিতা করে। সুতরাং এই ব্যাপার একান্তই উনার এখতিয়ারে। এটি আগাম কারও পক্ষে বলা সমীচীন নয়, সহজও নয়। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই, ধারণাও নেই।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে কে আসছেন এটি এখনো স্পষ্ট নয়। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তার সিনিয়র সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়ন নির্ধারণ করবেন।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, কে বা কারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করছেন, এই তথ্য আমার কাছে নেই। তবে এটি আমাদের সাংবিধানিক তিন প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকত্বের পদ। বেশ কয়েকজন যোগ্য ব্যক্তি আমাদের আছেন, আমার জানা মতে। নিশ্চয়ই নেত্রী যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবেন এই পদে নির্বাচনের জন্য।
এসইউজে/এমএইচআর/জিকেএস