প্রকৃতির দরজায় কড়া নাড়ছে ঋতুরাজ বসন্ত। ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে হিমেল হাওয়ার ক্ষণ। ঠান্ডা-গরমের সংমিশ্রণ ছোঁয়া নিতে শীতের শেষ সময়ে কক্সবাজারে বেড়েছে পর্যটক উপস্থিতি। সাপ্তাহিক বা অন্য ছুটিতে এ উপস্থিতি দ্বিগুণ হচ্ছে। এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, সি-গাল, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি ও ইনানী সৈকতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। তারা সৈকতের নির্মল হাওয়ায় পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।
Advertisement
এছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন বার্মিজ মার্কেট, রামুর বৌদ্ধ বিহার, ১০০ ফুট বৌদ্ধমূর্তি, নাইক্ষ্যংছড়ির লেক, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ সব পর্যটন স্পট পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ছিল।
পর্যটকদের মাঝে শিশু-কিশোর ও যুবাদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ী রুমেল আহমেদ। তিনি বলেন, এ বয়সীদের কথা চিন্তা করে অনেক হোটেল শিশুবান্ধব বেশকিছু রাইড চালু করেছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বাড়তি আনন্দ জোগান দিচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। সেখানে সব বয়সীদের জন্য নাগরদোলা, হাওয়ায় ভাসা দোলনা, ঘোড়ার রাইড, নৌকা দোল, ওয়াটার রাইডসহ নানা খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
ঈদগাঁও এলাকার স্কুল শিক্ষার্থী নিশিরাজ (১৫) বললো, স্কুলে এখনো তেমন ক্লাস শুরু হয়নি। তাই বড় বোন, বান্ধবী ও ভাবিকে নিয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে সৈকতে ঘুরতে এসেছি। অটোরিকশায় হিমছড়ি, দরিয়ানগর, কলাতলী বিচে অন্য পর্যটকদের সঙ্গে আমরাও ঢেউ ছুঁয়ে দেখেছি। ফেরার পথে তারকা হোটেলে খেয়েছি সবাই।
Advertisement
দেখা যায়, সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে দূরে সাগরের জলরাশিতে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এ আনন্দঘন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত অনেকেই। পর্যটকরা বেশি ভিড় করছেন সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে। যাচ্ছেন হিমছড়ি ও পাথুরে সৈকত ইনানীতেও। মুগ্ধ হয়ে দেখছেন মেরিন ড্রাইভ সড়কের সৌন্দর্য।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোটেল হোয়াইট অর্কিডের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও ফ্ল্যাটে প্রায় দুই লাখ পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কর্মদিবসগুলোতে পর্যটক কম এলেও সাপ্তাহিক ও অন্য ছুটিতে পর্যটক বাড়ছে। তবে, আবাসন হোটেলে অতিথি কম। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের নানা উপজেলা এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী রাতেই বাড়ি ফিরে যান। এ কারণে বালিয়াড়িতে লোক সংখ্যা বেশি হলেও আবাসন বুকিং কম।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, করোনাকালের মন্দার পর এবার মোটামুটি ব্যবসা ভালো চলছে। পর্যটক কম থাকলেও স্থানীয় সব শ্রেণির অতিথি সেবা নিতে আসছেন। কিছু কিছু কোম্পানি করপোরেট বুকিংয়ে হোটেলে বাৎসরিক সভা করছে, যা সন্তোষজনকই বলা চলে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, আগাম বুকিং কম থাকলেও ওয়াকিং গেস্ট কিছুটা আসছেন। বৃহস্পতি-শুক্র-শনিবার উল্লেখ করার মতো পর্যটক উপস্থিতি পাচ্ছি আমরা। এসময়ে স্থানীয় ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার লাখো পর্যটকের পদচারণা থাকছে কক্সবাজারে।
Advertisement
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিচিত পর্যটন স্পট হিমছড়ি ঝরনা ও আশপাশ এলাকায় পর্যটক উপস্থিতি বাড়ছে। আমাদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনকারী ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সৈকত ও আশপাশ এলাকায় আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। সেই অনুযায়ী পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তাসহ পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজারে দর্শনার্থী ও পর্যটক মিলিয়ে লাখো মানুষের সমাগম হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকতে শতাধিক পোশাকধারী পুলিশ ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি হোটেল সি-গাল রোড, কবিতা চত্বর ও ডায়াবেটিকস পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের মোটরবাইক এবং বিচ বাইক দিয়ে টহল জোরদার করার পাশাপাশি কলাতলী, সি ইন এবং লাবণী পয়েন্ট ওয়াচ টাওয়ার থেকে বাইনোকুলারের মাধ্যমে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। এছাড়া সাগরের দুর্ঘটনা থেকে পর্যটকদের রক্ষারয় ওয়াটার বাইক ও উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হোটেল-মোটেল জোন, সৈকত, হিমছড়ি, দরিয়ানগর এবং ইনানীতে কয়েক ভাগে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। রয়েছে স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকিও। এছাড়া সাদা পোশাকেও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন এলাকায় পর্যটক বাড়লেই সংশ্লিষ্টরা তৃপ্ত হন। পর্যটন জেলার প্রশাসক হিসেবে সৈকতে লোকসমাগম বাড়লে আমরাও খুশি। হয়রানি রোধে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ দল সব জায়গায় নজরদারি রাখছে।
সৈকতে গোসল করার সময় বিপদ এড়াতে ভ্রমণপিপাসুদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ডিসি।
সায়ীদ আলমগীর/এমআরআর/জিকেএস