শিয়া মসজিদ থেকে তাজমহল রোড ধরে একটু সামনে এগোলে রাস্তার ধারে অনেকগুলো বাড়ির মধ্যে দোকান সংলগ্ন একটি বাড়ি। গৃহকর্তা চিকিৎসক, তার স্ত্রী ঢাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক। গৃহস্বামীর পোস্টিং সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। বাড়ির সদস্য ছয়জন। তারা দুজন, এক ছেলে, এক মেয়ে আর কাজের লোক। তারা আগে রাজিয়া সুলতানা রোডে থাকতেন। একদম ওইদিকে আসাদ এভিনিউ সংলগ্ন অর্থাৎ তাজমহল রোডের এ মাথায় নয়। পরপর কয়েকটি রোডের মতো এর রোডে ভিড় তেমন নেই। শুধু তাজমহল রোড থেকে আসাদ এভিনিউতে বের হওয়ার রাস্তা থাকলে রাজিয়া সুলতানা রোডে বেশ ভিড় থাকত। ডাক্তার সাহেব তখন কখনো রিকশায় আবার কখনো হেঁটে যেতেন সোহরাওয়ার্দীতে। এখন ডাক্তার সাহেবের অবস্থা আগের চেয়ে স্বচ্ছল। সোহরাওয়ার্দীকে ভিত্তি করেই বাসা মোহাম্মদপুরে নতুবা অন্য এলাকায় হতো। গৃহকর্ত্রী কলেজের বাসে চড়ে ঢাকা কলেজে যাতায়াত করেন।
Advertisement
বাড়ির আরেকজন সদস্য রাজীব। সে ইন্টারমিডিয়েট থেকে এই বাসায় থাকে। ইন্টারমিডিয়েট ঢাকা কলেজে, এসএসসিতে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে পড়েছে। সে গ্রামের স্কুলে শুরু থেকে অর্থাৎ প্রথম শ্রেণি-ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। রাজীব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। ইন্টারমিডিয়েট পড়া অবস্থায় রাজিয়া সুলতানা রোডে থাকত এবং শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। রাজীব গৃহকর্তা ডাক্তার সাহেবের বড় ভাইয়ের ছেলে, রাজীবের ছোট একটি বোন রয়েছে।
রাজীবদের গ্রামের নাম আহমপুর। রাজীবের বাবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং এলাকার বেশ প্রভাবশালী চেয়ারম্যান। পরপর তিনবার নির্বাচিত। নিজ দলের উপজেলা শাখার প্রভাবশালী নেতা। আগামী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে রাজীবের বাবা লড়াই করবেন নিজ দলের হয়ে। এলাকার রাজনীতিতে রাজীবদের ফ্যামিলির সুনাম রয়েছে। উপজেলা সদরের একপ্রান্তে আহমপুর ইউনিয়ন জেলা সদর থেকে মোটরসাইকেলে আধঘণ্টার পথ। রাজীবের বাবারা চার ভাই। সবাই যে যার মতো প্রতিষ্ঠিত; একজন ঢাকায়, একজন ফরিদপুরে সরকারি চাকুরিতে, অন্যজন নাটোরে ব্যবসা করছেন। রাজীবের বাবা সবার বড়।
রাজীবের বাবা মজিদ চেয়ারম্যান। রাজীবরা যখন রাজিয়া সুলতানা রোডে থাকত; তখন লিলিরা পাশের ফ্ল্যাটে থাকত। লিলি থাকত ওর চাচার বাসায়। লিলির চাচা ও রাজীবের চাচা বন্ধু; একই এলাকায় পাশাপাশি গ্রামে তাদের বাড়ি। লিলি তখন লালমাটিয়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। লিলি ছোট থেকেই ওর চাচার বাসায়। গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তারপর থেকেই ঢাকায়। লিলিকে আগে রাজীব দেখেছে, যখন চাচার বাসায় বেড়াতে এসেছে। রাজীব যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়তে ঢাকায় এলো; তখন লিলির সঙ্গে প্রথম পরিচয়।
Advertisement
লিলি স্মার্ট মেয়ে, দেহের গড়ন, ভেজা-ভেজা কালো বর্ণের দুটি চোখ, রসালো ঠোঁট, গায়ের রং টান-টান ফর্সা এমনই এক মেয়ে লিলি।রাজীব: লিলি তুমি খুব সুন্দর। (অবাক বিস্ময়ে)লিলি: তুমি খুব ইঁচড়ে পাকা ছেলে। ঠোঁটে আইকা লাগিয়ে দেব। এই বয়সে কী অবস্থা, ছি! রাজীব: তোমার নামের অর্থ শাপলা। অথচ শাপলার শুভ্রতা, কোমলতা নেই তোমার মাঝে। নেই বিন্দুমাত্র!লিলি: তোমার রাজীব নামের অর্থ পদ্ম। তাই তো তোমার কাঁটা দেবার স্বভাব।রাজীব: পদ্মফুলের নিচের অংশে কাঁটা হলেও উপরে পাপড়ি তার সৌন্দর্য।লিলি: (রেগে চলে যাচ্ছে আর বলছে) তোমার স্বভাব ফুলের উল্টো পঙ্কিল আর অসভ্য।লিলির বাবাও দুবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং তার দলের জেলার প্রভাবশালী নেতা। লিলির দাদা রাজাকার ছিলেন। মানে সে রাজাকার পরিবারের মেয়ে। ভুল করলে লিলির দাদা করেছে। লিলি তো ভুল করেনি। এখন নতুনভাবে ভাবার সময়। এলাকায় লিলিদের পরিবার নিয়ে দাম্ভিক হিসেবে দুর্নাম রয়েছে। তাতে কি? তারাও তো প্রতিষ্ঠিত; লিলির বাবারা ছয় ভাই সবাই শিক্ষিত। গ্রামে শুধু লিলির বাবা থাকেন। মজিদ চেয়ারম্যানের তুলনায় লিলির বাবা বেশ ধনী। লিলিদের বাড়ি রাজীবদের পাশের গ্রাম শায়েরপুর। লিলি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া ছাত্রী। লিলি ইন্টারমিডিয়েটে মানবিক বিভাগের ছাত্রী ছিল। রাজীব বিজ্ঞানের ছাত্র। ইচ্ছা ছিল বুয়েটে পড়ার। কিন্তু সব স্রষ্টার ইচ্ছা। কে কোথায় ভর্তি হবে আর কে কোথায় কাজ করবে। লিলির চেয়ে রাজীব ছাত্র হিসেবে ভালো ছিল। লিলি অনেক সুন্দর আর রাজীব বেশ লম্বা। রাজীব অসিত বর্ণের ছেলে।লিলিরা এখনো রাজিয়া সুলতানা রোডেই থাকে।লিলি-রাজীব এখন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।লিলি-রাজীব চলছে ক্লাস শেষে। কলাভবন থেকে শাহবাগ মোড়ের দিকে যেতে পথে দেখা রানার সাথে। রানা জসীম উদদীন হলে থাকে। রানাও সদ্য ঢাবিতে আইন বিভাগে ভর্তি হলো। সে রাজীবের সঙ্গে হাইস্কুলে পড়ত। ইন্টারমিডিয়েটে রানা রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজে পড়ত। রানা-রাজীবের একই জেলায় বাড়ি। এজন্য তাদের ঘনিষ্ঠতাও বেশি।ফার্মগেট যাব, বলল রানা।আমরা বাড়ি যাচ্ছি, বলল রাজীব। লিলিকে রানা চেনে। রানাকে লিলি চেনে না। তবে শুনেছে রাজীবের মুখ থেকে। লিলি, লিলি... কে যেন ডাকছে (মেয়েলি কণ্ঠ)। কেয়া ডাকছে লিলিকে।তোকে খুঁজছি, তোকে দরকার।চল যাই।সবাই রওনা হলো শাহবাগের উদ্দেশে। ফার্মগেটে রানা নেমে গেল। মোহাম্মদপুরের কয়েকজন বন্ধু ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে আছে রানার জন্য। ওরা আনন্দ হলে ‘বিশ্ব প্রেমিক’ ছবি দেখবে। তারপর সন্ধ্যায় সবাই একজোড়া করে জুতা কিনে ফিরবে।কেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী ও লিলির বান্ধবী। কলেজে কেয়া-লিলি একসাথেই পড়াশোনা করেছে। কেয়া আগে থেকেই রাজীবের পরিচিত; রানার সাথে কেয়ার আজ নতুন করে পরিচয় হলো।
রানার রুমে রাজীব রানা কী করিস? লিলি আসছে। চল আজ তোদের সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরব।এ দিকে তোরা? তার চেয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে চল।তোকে ভালো ছেলে জানতাম, তুই!বাজে বকিস না, চল বের হই। আচ্ছা, তুই মাসুদ রানা পড়িস। তাই বলে এত! সর্তক শয়তান, লাল পাহাড়, প্রবেশ নিষেধ, রানা! সাবধান! নর পিশাচ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, হাইজ্যাক, গুপ্তঘাতক, অন্ধকারে চিতা, অপহরণ, শত্রু ভয়ংকর। এত জোগাড় করলি কীভাবে?এগুলো বেশিরভাগই নিলয়ের।নিলয়টা আবার কে?কেন, তোর সঙ্গে পড়ে।আমার সঙ্গে মানে?সাংবাদিকতা বিভাগ।ও, আসার সময় বেশ সুন্দর চেহারার একটা ছেলেকে ওয়াশরুমের সামনে দেখলাম। পরিচিত মনে হলো। কিন্তু চিনতে পারলাম না।এটাই হলো নিলয় চৌধুরী। অভিজাত চেহারা, অভিজাত বংশের ছেলে। রানা নিলয়ের সাথে বের হবে জেনে নিলয় আসার পূর্বেই রাজীবের প্রস্থান।
দুজন কোন দিকে? নিলয় জিজ্ঞেস করলো।তোর কাছে; রানা বললো।আমার কাছে! আমার কাছে কেন?চল বের হব। বেড়াব আজ, বলল রানা।কি রে রাজীব, তুই কেন এখানে হঠাৎ? বলল নিলয়। আর রানার সাথেই বা পরিচয় কীভাবে?তুই আমাকে চিনলি কীভাবে? রাজীব জিজ্ঞেস করলো।আমি ঢাকা কলেজে তোর আগের বছরের ছাত্র ছিলাম। কলেজে পড়ার সময় একবার পরিচয় হয়েছিল। তুই ভুলে গেছিস, বলল নিলয়।
লিলি কেয়াকে নিয়ে নজরুলের মাজারে থাকার কথা। রানা, রাজীব ও নিলয় মাজারে বসে গল্প করতে থাকলো। কিছুক্ষণ পর লিলি, কেয়া ও জেসমিন চলে এলো।জেসমিনকে রাজীবের চেনা মনে হলো।কি রে, জেসমিন একেবারে সশরীরে। সকালের ড্রেসটা পরলি না যে? বলল নিলয়।জেসমিন নিলয়ের পূর্ব-পরিচিত। সে ইতিহাসে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে।ওদের সার্কেলের সবাই কোনো না কোনোভাবে পূর্বপরিচিত। তাই নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক সহজ করতে বেশি সময় লাগল না। মনে হয় সবাই তারা অনেক দিনের চেনা, আত্মার আত্মীয়।রাজীব, রানা, লিলি, কেয়া, জেসমিন ও নিলয়রা মাঝে মধ্যেই একসঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতো। সমস্যা হয়েছে লিলি ও রাজীবকে নিয়ে। ওরা হলে থাকে না। তাই ওদের দুজনের সাথে যোগাযোগে একটু দূরত্ব থেকেই যায়।মাঝে মাঝে ওরা কজন হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা, চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে। কখনো কখনো সোনারগাঁ, কাঁচপুর ব্রিজে, তিনশ ফুট বা বসিলা ব্রিজের ওপারে। আবার কখনো ক্যাম্পাসেই হারায়, হারায় গল্পের মাঝে। কার্জন হল, কলাভবন, মাজার ওদের আড্ডার প্রিয় জায়গা। ওরা মাঝে মাঝে বই কিনতে নীলক্ষেতে যায়। মাঝে মাঝে বলাকা-বিনাকায় চোখ পড়ে ওদের। ব্যাচেলর, লালন, লাল পাহাড় আরও কত কি!তাদের মনোসংযোগ দারুণ।ওরা সবাই সংস্কৃতিমনা। বিভিন্ন বিভাগের নবীনবরণ-বিদায় অনুষ্ঠানগুলো দেখতে ওরা ওস্তাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদলগুলোর বিভিন্ন নাটক দেখত এবং অন্য অনুষ্ঠান। লিলি রাজীবের ক্যাম্পাস ভালো লাগল। সিদ্ধান্ত নিলো লিলি ও রাজীব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠবে। ওদের বন্ধুদের ভেতরে শুধু দুজনই হলের বাইরে থাকত। যেই বলা সেই কাজ! তাছাড়া ওদের চাচার বাসায় চাচাতো ভাই-বোনগুলো বড় হচ্ছে। নিজের-ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার তো থাকেই। সব কথা চিন্তা-ভাবনা করে রাজীব তার এলাকার বড় ভাইদের সাহায্যে এফ রহমান হলে আর লিলি রাজীবের সহায়তায় সামসুন্নাহার হলে উঠে পড়লো।
Advertisement
চাচার বাসায় আর কতদিন? নিজেদেরও তো সাবলম্বী হতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যলয় জীবন হলের বাইরে, তা ভাবনারও বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে থাকতে এটা সেটা করতে করতে অনেক কিছু শিখে নেওয়া যাবে। হাজার শিক্ষার্থী একই বাড়িতে, একই পরিবারের সন্তান; আর এরই নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল। হল থেকে ক্যাম্পাসের বন্ধুদের কাছেও সহযোগিতা পাওয়া যায় সব সময়।
হলে ওঠার পর ওদের সম্পর্কের মাত্রাটা আরও বেড়ে গেল। এখন লিলি-রাজীব সম্পূর্ণ স্বাধীন। বাড়ির শাসন এখানে নেই। যখন তখন যে যার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। ক্লাসের অনেক আগে ক্লাসের জন্য রেডি হতে হয় না। যাওয়া-আসার সময় ভিড়ের মাঝে গাড়ির বিড়ম্বনা সইতে হয় না। আরও কত কী!
অনেকদিন তাদের বাড়ি যাওয়া হয় না। রাজীব ও লিলি দুজনই বাড়ি গেল। ঢাকা থেকে চার-পাঁচ ঘণ্টার পথ ওদের গ্রামের বাড়ি। অনেক দিন পর বাড়িতে এসে ভালো লাগল দুজনের। বাবা-মা খুশি হলেন, সাথে বাড়ির লোকজনও খুশি। চেয়ারম্যান বাড়ি অনেক লোকের যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া। রাজীবকে দেখে তারা সবাই খুব খুশি। রাজীবের বাবা বাজারে নতুন ঢেউটিন-সিমেন্টের দোকান দিয়েছেন, ভালোই চলছে। লিলির দাদার বড় মনোহারী দোকান ছিল বাজারে। ওটা এখন লিলির বাবা দেখেন। দোকানে লিলি বিউটি সোপের ডিলারশিপ নিয়েছে। বাড়িতে অল্প কিছুদিন থেকে আবার রওনা হলো দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। পড়াশোনা করলে বাড়িতে খুব বেশি থাকা যায় না।
বাড়ি থেকে ফিরে এসে রাজীবের ভালো লাগছে না। বাবা-মাকে আবার দেখতে ইচ্ছা করছে। যা-ই হোক ক্লাস আর বন্ধুদের আড্ডার মাঝে ভুলে গেল লিলি-রাজীব বাড়ির স্মৃতি। আবার সেই রমনার বটমূল, বলধা গার্ডেন, জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন। একদিন সকালে রাজীব পেপার রুমে গেল। পেপার পড়ল। ইতিমধ্যে আহমপুরে একজন মার্ডার হয়েছে গতকাল বিকেলে। রাজীবদের বিরোধী দলের নেতার ভাই। গ্রামসহ গোটা এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। পেপার রুম থেকে ফিরল রাজীব। রাজীবের কোন বেজে উঠল। ফোনে কিছু কথা হলো, রাজীব রুমে ফিরল। কাপড় গোছ-গাছ করে রানাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। এর মধ্যে লিলির সাথে আর দেখা হয়নি।
মার্ডারের সময় মজিদ চেয়ারম্যান বাজারে ছিল। সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফেরার পথে একদল উশৃঙ্খল যুবকের পিটুনিতে মজিদ চেয়ারম্যান আহত হন। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়, পরদিন সকালে তার মৃত্যু হয়। সামনে যাকে পাবে তাকেই ধরবে- প্রতিপক্ষের এই নীতির ভিত্তিতে সম্ভবত মজিদ চেয়ারম্যানকে পেয়েই মারধর করেছে ওরা। ফোনে রাজীব এ খবরই পেয়েছে। মজিদ চেয়ারম্যান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বারা খুন হয়েছেন। অন্য দলের কেউ কিংবা তার দলের কেউ তার জনপ্রিয়তায় ক্ষুণ্ন হয়েছে। ঈর্ষান্বিত হয়েই তাকে খুন করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য। এটা রাজীবের সন্দেহ, তার বাবার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা অথবা হঠাৎ আক্রমণ, এটা মনে নিতে নারাজ। আপাতত কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখতে চায় না রাজীব।বাড়ি ফিরে রাজীব কান্নার বিষাদ রোল শুনতে পায়। তাকে পেয়ে কান্না আরও বেড়ে গেল। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই এসেছে। দলের নেতা-কর্মীরাও বাদ যাননি।
এসেছেন রাজীবের চাচারাও।পুলিশের কড়া পাহারায় দাফন সম্পন্ন হলো। আবেগপ্রবণ, উত্তেজিত জনতার সামনে বক্তব্য রাখলেন নেতারা। বিচার চাই! ফাঁসি দিতে হবে! কেন এ হত্যা; অবরোধ, হরতালের প্রস্তাব, আলটিমেটাম, ষড়যন্ত্র, নস্যাৎ করতে হবে ষড়যন্ত্রে জাল। কোনো কোনো বক্তা নিহত মজিদকে আপন ভালো বলতে লাগলেন, মাঝে মাঝে হাততালিও পড়ল। এত ভালো লোকের জানাজায় আবেগপ্রবণ কথায় অনেকের চোখের জল গড়িয়ে পড়ল, বিশেষত আত্মীয়দের।
রাজীবকে কিছু বলার জন্য বলা হলো। রাজীব কিছু বলতে চাচ্ছিল না, পারলও না। রাজীব রাজনীতিবিদের ছেলে। কিন্তু ও তো আর রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নয়। সবাই বিচারের জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্থান ত্যাগ করল। সুষ্ঠু বিচার হবে কি?
দুই-একদিন পর চলে গেলেন মজিদ চেয়ারম্যানের ভাইরা। চলে গেল রানা, বন্ধুর বাড়িতে আর কতদিন? ওর ক্লাস করতে হবে। রানা অবশ্য সপ্তাহ খানেক ছিল। চলে আসতে পারল না রাজীব; কারণ রাজীবকে থাকতেই হবে। সে-ই একমাত্র পুত্র, বংশের প্রদীপ। তার মায়ের কাছে থেকে গেল রাজীব। তাছাড়া ওদের সম্পত্তি, জমি-জমা, ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করার মতো কেউই নেই। সঙ্গত কারণেই রাজীবকে বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। রাজীবের বাবাই সবকিছু দেখাশোনা করতেন। রাজীবের মা এসব কিছুর খোঁজ-খবর নিতেন না।
বিভিন্ন বিষয়ে রাজীব কাজ বুঝে নিতে লাগল। অনেক মানুষের সাথে মিশতে ও কথা বলতে লাগল। এতেই এলাকাবাসী ওর বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার পরিচয় পেয়েছে। গ্রামবাসী আগামী ইউপি নির্বাচনে রাজীবকে চায় প্রার্থী হিসেবে। তারা রাজীবকে বোঝালো, এলাকার এবং বংশের নেতৃত্বের শূন্যস্থান পূরণ হবে। রাজীবের নিজেরও উন্নতি হবে। গ্রামবাসী রাজীবের হাতে পায়ে ধরল, তবুও কাজ হলো না।
রাজীব কিছুতেই রাজি হলো না। তারা রাজীবের মাকে কিছুইতে রাজি করাতে পারলেন না। গ্রামবাসী নিরাশ মনে ফিরল। হায়রে এত ভালো চেয়ারম্যান আমরা কি আর পাব? আসলে যা হারায় তা পাওয়া যায় না। জমি লিজ দেওয়ার টাকা, বাজারের দোকানগুলোর ভাড়া, সিমেন্টের দোকানের খোঁজ-খবর সবকিছুই রাজীবকে বুঝতে হচ্ছে। আসলে কেউই জন্ম থেকে সব কিছু শিখে জন্মগ্রহণ করেন না, ধীরে ধীরে শিখে ওঠে সবকিছু।অনেক মানুষ ওর বাবার কাছে টাকা পেত। রাজীব সেগুলো পরিশোধ করল। আবার অনেকের কাছে তার বাবা টাকা পেত। সংসারের সব মাকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাজীব। ছোট বোন রিলা ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। যা আছে তা দিয়ে তিনজনের সংসার চলে যাবে স্রষ্টার ইচ্ছায়। রাজীবের কাজ আপাতত শেষ। ও ঢাকা চলে যাবে। প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় সে বাড়িতে। তার ঢাকা যাওয়া দরকার।
ব্যাংকের একটি চিঠি পেল রাজীব। ওর বাবা দশ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিল। কিন্তু ওই টাকা কখন নিয়েছিলেন এবং কেন কী কাজে ব্যয় করেন, তার কোনো কথাই ওর মাসহ কেউই বলতে পারল না। কিন্তু ব্যাংকের স্পষ্ট নির্দেশ, টাকা ওর বাবা নিয়েছেন এবং তা পরিশোধ করতেই হবে। ব্যাংক কখনো ভুল অভিযোগ উত্থাপন করে না। দশ লক্ষ টাকা এবং তার সুদ!
রাজীব তার চাচাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এখন ঠিকঠাক মতো ব্যবসা পরিচালনা করে কারও পক্ষেই ওই টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। আর টাকা ব্যাংকে থাকলেই সুদ বাড়বে। তা-ও আবার দশ লক্ষ টাকা। অর্থ পরিশোধের অন্য কোনো পথও খোলা নেই। বাধ্য হয়েই রাজীব ওদের সম্পদ কম সময়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বিক্রি করে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধের চেষ্টা করল। ওর চাচারা তিন লক্ষ টাকা দিলো। ধার হিসেবে নয়, চাচা হিসেবে।
মানসিকভাবে বিধ্বস্ত রাজীব দুই মাসেরও বেশি সময় পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফিরল। ওর চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল, কিছুই করার ছিল না।কিছু কি করার ছিল ওর? কমবয়স্ক, ছাত্র বেচারা। রাজীব যতটুকু করেছে তা এই দেশের অনেক আনাড়ী ছেলেই করতে পারবে না।চোখের সামনে একটি সুশৃঙ্খল ও সুন্দর পরিবার পড়ে গেল। পৃথিবীর সবার সব কিছুই তো ঠিকঠাক রয়েছে। শুধু একটি মানুষের জন্য সব ধ্বংস হয়ে গেল, শুধু তিনি নেই বলে।চেয়ারম্যান বাড়িতে এখন কেউ সাহায্য চাইতে আসে না, আসে না কেউ সৌজন্য সাক্ষাতে। আসে না শালিসে ডাকার জন্য; কেউ আসে না উপঢৌকন নিয়ে। চেয়ারম্যান বাড়িতে এখন আর লোকে গিজগিজ করে না, নেই আর অত কাজের মানুষ।
এখন আর কিছু নেই। রাজীবদের সংসার তার মামা-চাচাদের সাহায্য নির্ভর। সেই দশ লক্ষ টাকার কী হলো, কাকে দিলো, কী জন্য দিলো? বাড়ি থাকাকালীন রাজীব তা বের করতে পারল না। দশ লক্ষ টাকার জন্যই বুঝি মজিদ চেয়ারম্যান খুন হলেন। রাজীব মনে মনে ভাবল সে কথা। ভেবে লাভ কি। কিছুই করতে পারবে না।
জেসমিন বলল, পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে জানিস?রাজীব বলল, কবে?জেসমিন জানায়, দুই মাস পর। হলে ফিরে নিলয়ের কাছেও একই খবর পেল। অথচ তার কিছুই পড়া হয়নি। লিলিও রাজীবের সাথে দেখা করতে এলো। সব ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা সামনে, বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টের ক্লাস প্রায়ই শেষ। কারও দুই মাস, কারো চার মাস অথবা কারও দেড় মাস পর পরীক্ষা হবে। রাজীবের ক্লাস চলছে। তবে ক্লাস শেষের দিকে। ক্লাস এবং পড়ার সাথে কিছুতেই তাল মিলিয়ে নিতে পারছে না রাজীব। পড়ায় মন বসছে না, আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না।রাজীবকে এক ধরনের বিষণ্নতা গ্রাস করেছে। মাথা ঝিমঝিম করে, ক্লান্ত লাগে, হৃৎস্পন্দনও বেশি। মাথার ভেতরে কী যেন আছে!
পড়াশোনা আগের মতো আর ফ্রেশ হয় না। সবাইকে বেঈমান মনে হয় রাজীবের। আরে ওসব কিছু নয়! যে ধকল গেছে রাজীবের ওপর দিয়ে। মানসিক চাপ পড়াই স্বাভাবিক নয় কি? পড়াশোনা করলে ধীরে ধীরে সময়ই সব সহ্য করে নেবে। মানুষের জীবন কখনোই নিরবচ্ছিন্ন সুখের হতে পারে না। একাধিক সমস্যা পাড়ি দিয়েই মানুষকে বড় হতে হয়। যদি কেউ সমস্যা গুরুতর ভাবে, তাহলেই তা বড় আকার ধারণ করে। কিছু না মনে করলে, সমস্যা কিছু মনে হয় না। জেসমিন ও নিলয়ের কাছ থেকে নোট ফটোকপি করে রাজীব পড়ায় মন দিলো। পড়ালেখা ভালো হচ্ছিল না। তবুও রাজীব সাহস করে বেশি বেশি পড়তে লাগল। লিলি রাজীবের কাছে খুব কম আসত। আসত সে জেসমিনকে সাথে নিয়ে। রাজীবকে বোঝাত ওর বাবার দুর্ঘটনা সম্পর্কে। ওটা দুর্ঘটনা ছিল মাত্র। রাজীবকে ভালোভাবে পড়তে হবে। ওসব ভুলে রাজীবকে অনেক বড় হতে হবে। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। ভালো রেজাল্ট করতে হবে। তবেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
রাজীব, রানা, লিলি, কেয়া, জেসমিন ও নিলয় একসাথে আর বসে না। পরীক্ষা নিয়ে সবাই ব্যস্ত; কারও সময় নেই। রাজীবের পড়াশোনার গতি খুব বেশি ভালো নয়। রাজীব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভালো তাকে করতেই হবে; না হলে সে রাজীবই নয়। এটা তার চ্যালেঞ্জ! রাজীবের পরীক্ষার ত্রিশ দিন বাকি।
লিলির পরীক্ষা শেষ হতে দেরী আছে। রাজীব পরীক্ষা শেষ হলে বাড়ি গেল। গিয়ে দেখল সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে। সেই দশ লক্ষ টাকার হিসেবটা সে কিছুতেই মেলাতে পারল না। ইচ্ছে ছিল বাড়িতে থেকে আসল রহস্য বের করার। কিন্তু সময় আর হলো কোথায়? রাজীবের বোনের পড়াশোনা ভালোই চলছে। রাজীব তার বোন রিলাকে ইন্টারমিডিয়েটে ঢাকায় ভর্তি করাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজীব কিছুদিন পর বাড়ি থেকে ফিরল। লিলিদের পরীক্ষা হতে আরও দু-চার দিন লাগবে। অন্য বন্ধুদের এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। পরীক্ষার পর আবার তারা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকতে পারবে। রানা ও লিলি একই রিকশায় বসা। তারা রাজীবকে দেখেও না দেখার ভান করল। হয়তো দেখতে পায়নি! লিলির পরীক্ষা শেষ হলেও সে রাজীবের সাথে দেখা করতে আসেনি। রাজীব লিলির সাথে দেখা করতে গেলে লিলি খুব জরুরি কাজ বলে রাজীবকে ফেলে চলে গেল।লিলি ও রানা একসাথে বেড়াচ্ছে দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমিতে। রাজীব ডাকল, ওরা শুনল না। মনে হলো কী যেন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। তাই বলে রাজিবকে অবহেলা!হলে রানার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হলো। লিলির প্রসঙ্গ তুলতেই রানা প্রসঙ্গ বদলে ফেললো। রানার সঙ্গে রাজীব এসব ব্যাপারে বাক-বিতণ্ডা করতে চায় না, তাছাড়া রানা ভালো ছেলে। হয়তো পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বলছে। রাজীবকে পরে জানাবে।
রানা লিলির সঙ্গে প্রেম করছে না তো? মানুষের মন পরিবর্তন হতে কতক্ষণ! প্রেম না করলে এত কাছাকাছি হবার কথা নয়! আর রাজীবকেই এড়িয়ে চলছে কেন?
ছি! রানা রাজীবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। লিলি রাজীবের সাথে বেঈমানী করল। নিলয়ের পরীক্ষা ভালো হয়েছে লিলিরও ভালো হয়েছে। বাকিদের পরীক্ষাও খারাপ হয়নি। পরীক্ষা খারাপ হয়েছে রাজীবের। কেয়ার সাথে পরীক্ষা নিয়ে কথাবলছিল রাজীব। কেয়ার সাথে কথা বলার সময় লিলির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেনি ও।
দুইমাস পর...
রানা, লিলি, রাজীবের সম্পর্কের উন্নতি হয়নি, ওরা সবাই আর একসাথে বসে না। তবে লিলি দেখা হলে বিভিন্ন অজুহাতে রাজীবের সঙ্গ ত্যাগ করতে চায়। মুখে শুধু বলে, এখন থাক পরে কথা হবে। তবে ও খারাপ ব্যবহার করেনি রাজীবের সাথে। তাদের রহস্যজনক আচরণ, রানাও কিছু বলেনি রাজীবকে। রানা স্মার্ট, বুদ্ধিমান, ভালো ছেলে। লিলি সুন্দরী তন্বী, বুদ্ধিমতী। দুজন দুজনের প্রতি আকর্ষণ হওয়া অসম্ভব নয়। রাজীব লিলিকে অনুরোধ করেনি, রানাকেও না। রাজীবের ভালোবাসা সত্যি হলে লিলি ফিরে আসবেই আসবে। এ রাজীবের ভালোবাসার দৃঢ় বিশ্বাস। লিলিও ভালোবাসে প্রবলভাবে রাজীবকে। এটা প্রায় ঘোষিত। ওরা নিজেদের ভালোবাসার পরিচয় দিতে দ্বিধা করত না।
রাজীব মাকে দেখে পাঁচ দিন হলো হলে ফিরে এসেছে। এর মধ্যে রাজীবদের প্রথম বর্ষ ফাইনালের রেজাল্ট বের হয়েছে। রাজীব ফেল করেছে। দুইদিন হলেও জানানো হয়নি।রাজীব বলল, লিলি জানে?জেসমিন বলল, জানে।রাজীব সোজা পথ চলছে শাহবাগ মোড়ের দিকে। হঠাৎ সে একবার পেছন ফিরে তাকালো। গাড়িতে বসা একটি মেয়েকে পরিচিত মনে হলো। গাড়িটি জাদুঘরের সামনে থামল। লিলি একজন স্মার্ট যুবককে সাথে নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। ওরা জাদুঘরে ঢুকল। লিলি অনেক দিনের চেনা, চিরচেনা কিন্তু এখন অচেনা, অচেনা এক মানুষ।লিলির নতুন ভালোবাসার মানুষ স্মার্ট সেই ছেলেটি তার ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের ভালো ছাত্র।অন্যদিকে সিনেমার পরিচালকের ছেলে। তারা সিনেমা বানাবে ‘লিলি কেন সুখী’। পাত্রের বাবা কোটিপতি। তাই লিলি...রাজীব বলল, বিয়ে হলে লিলি নায়িকা হবে। রানা হাসল। হাঁটতে হাঁটতে রানাকে নানা অজুহাতে বিদায় করে দিলো রাজীব।
একা একা রাজীব এলোপাথারি হাঁটতে লাগল ক্যাম্পাসে। যেন সামনে কেউ নেই। সুন্দর একটু বাতাস হয়ে গেল, বাতাসটা লাগল রাজীবের মাথায়। বেশি ঠান্ডা বাতাস। এই গরমে এমন বাতাস মেলে না।
রাজীবের সামনে ভাড়ায় চালিত টেক্সিটি থামল, রিলা নামল। রিলা বলল, তোকে এখানে পাব ভাবিনি। তোকে অবাক করে দেবার জন্য খবর না দিয়েই এসেছি।রিলাকে দেখে রাজীব খুশি হলো, বিষণ্ন ঠোঁটে হাসি দেখা গেল।
ট্যাক্সিতে চড়ে বসল রাজীব।
এসইউ/জেআইএম