রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) টমেটোর নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল ফয়েজ মো. জামাল উদ্দিন। জাপানের জেব্রা টমেটো নিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর ক্রস, ব্রিডিং এবং রিয়ারিং করে গবেষণার পর সফলতা পেয়েছেন তিনি। নতুন জাতটির নাম রাখা হয়েছে ‘সাউ রেড রুবি’।
Advertisement
অধ্যাপক জামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে দেশি টমেটোর বিভিন্ন জাতের সঙ্গে ক্রস করেছি, ব্রিডিং করেছি। তারপর রিয়ারিং (রোপণ) করে যখন আর ভ্যারিয়েশন হচ্ছে না; তখন জাতটি সিলেকশন করেছি। বাংলাদেশের অন্য জাতের টমেটোর তুলনায় রেড রুবির ফলন একটু বেশি। একটি গাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৪-৫ কেজি পর্যন্ত টমেটো পাওয়া যায়। একটি টমেটোর ওজন প্রায় ৯০-১০০ গ্রাম।’
তিনি বলেন, ‘এই জাতের টমেটো দেখতে খুবই সুন্দর এবং কিছুটা লম্বাটে ধরনের। মাঝখানে স্ট্রাইপ (ডোরাকাটা) দাগ আছে। টমেটোর পুরোটাই মাংসল এবং মিষ্টি স্বাদের। বাংলাদেশের অন্য জাতের টমেটোগুলোয় পানির পরিমাণ এবং বীজের পরিমাণ বেশি থাকে, চামড়া কিছুটা মোটা। কিন্তু রেড রুবিতে মাত্র ১৫টির মতো বীজ থাকে, চামড়া খুবই পাতলা এবং পাকলে বেশ শক্ত ও মাংসল। শক্ত হওয়ায় সাধারণ টমেটোর চেয়ে এর স্থায়িত্ব বেশি। এজন্যই এ টমেটোর নামকরণ করা হয়েছে দামি শক্ত পাথরের নামে ‘সাউ রেড রুবি’।’
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে বেগুনি ফুলকপি চাষে সফল দম্পতি
Advertisement
রেড রুবির চাষপদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রেড রুবি শীতকালে ভালো হয়। তবে পলিশেডের নিচে বর্ষাকালেও চাষ করা যায়। জাতটি ইনডিটারমিনেট টাইপের। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বীজ লাগাতে হয়। ২১-২২ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হয়। সাধারণ টমেটোর মতোই পরিমাণমতো জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করে সারি থেকে সারি ৬০ সেন্টিমিটার আর গাছ থেকে গাছের ৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা লাগাতে হয়। গাছ প্রায় ১২৫-১৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। রোপণের ৬০-৬৫ দিনেই ফল আসে। ৭৫-৮০ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। একেকটি টমেটো গড়ে ৯০-১০০ গ্রাম হয়। একেকটি গাছ থেকে গড়ে সাড়ে ৪ কেজি টমেটো সংগ্রহ করা যায়।’
বাজারে সাউ রেড রুবির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বড় পরিসরে এখনো বাজারজাত করতে পারিনি। তবে ফেসবুকে এটি খুবই সাড়া জাগিয়েছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এটি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে। আমি মূলত ছাদ বাগান নিয়ে কাজ করি। প্রতি বছরই আমরা চাষ করে বীজ তৈরি করছি এবং ছাদ বাগানীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এখন আমাদের পরিকল্পনা, বড় পরিসরে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এ বছর আরও বেশি বীজ তৈরি করা হবে। আগামী বছর কৃষকরা চাষ করবে। শেকৃবিতেও প্রদর্শনী প্লট করা হবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বের ভেতরেই পরে।’
অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘কৃষকরা এটি চাষ করলে বেশিদিন ভালো ও ফ্রেশ রাখতে পারবেন। এর স্বাদে টক ভাবটা না থাকায় ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে আলাদা চাহিদা জোগাবে। অন্যদিকে পানির পরিমাণ কম থাকায় সালাদ হিসেবেও বাজারে চাহিদা থাকবে। সবকিছু মিলে কৃষকরা এটি চাষ করলে বেশি ফলন পাবে। বাজারে ভালো দাম পাবে। বাজারে চাহিদা সব সময়ই থাকবে। বাজারে টমেটো কিনতে গেলে সুন্দর দেখায় অন্য টমেটোর চেয়ে রেড রুবিই প্রথম পছন্দে রাখবেন।’
আরও পড়ুন: বছরে ৭ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেন রুবেল
Advertisement
টমেটো সবজি জাত ফসলের মাঝে একটি রসাল ফল জাতীয় সবজি। উৎপন্নের দিক থেকে বিশ্বে আলুর পরই টমেটোর অবস্থান। অধিকাংশ দেশেই টমেটো অন্যতম প্রধান সবজি। টমেটো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি হওয়ায় কাঁচা, পাকা এবং রান্না করে খাওয়া হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী অংশে যে পুষ্টি উপাদান আছে, তা হলো পানি ৯৩.১ গ্রাম, প্রোটিন ১.৯ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খনিজ ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, শর্করা ৩.৬ গ্রাম, সোডিয়াম ৪৫.৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১১৪ মিলিগ্রাম, কপার ০.১৯ মিলিগ্রাম, সালফার ২৪ মিলিগ্রাম, ক্লোরিন ৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিনএ ৩২০ একক, থায়ামিন ০.০৭ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.০১ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক অ্যাসিড ০.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৩১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড ২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৬ মিলিগ্রাম এবং লৌহ আছে ১.৮ মিলিগ্রাম।
টমেটোর পুষ্টির পাশাপাশি ভেষজ মূল্যও অনেক। এর শাঁস ও জুস হজমকারক, ক্ষুধাবর্ধক ও রক্ত শোধক হিসেবেও কাজ করে।
তাসনিম আহমেদ তানিম/এসইউ/জেআইএম