লাইফস্টাইল

যে ৯ অভ্যাস ক্যানসারের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ায়

উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোতে হৃদরোগের পরে ক্যানসার এখনো মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। গ্লোবোকান (গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, (সারা বিশ্বে ক্যানসারের তথ্য সংগ্রহ করে) ২০২০ সালে ১৯.৩ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন ও মারা যান ১০ মিলিয়ন রোগী। ২০৪০ সালে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

তুর্কির ইস্তানবুলের অ্যাসিবাদেম মাসলাক হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজির অধ্যাপক ইয়েসিম ইরাল্প, এমডি’র মতে, বিশ্বব্যাপী ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভুল অভ্যাস।

অধ্যাপক ইয়েসিম ইরাল্প জানান, আসীন জীবন-যাপন, তামাক ব্যবহার, অ্যালকোহল সেবন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই মূলত ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য।

তামাক ব্যবহার শুধু ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায় না, বরং এটি মাথা ও ঘাড়, অগ্ন্যাশয় ও মূত্রাশয়ের ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়ায়।

Advertisement

এই বিশেষজ্ঞের মতে, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ভারী অ্যালকোহল সেবন ও শরীরচর্চার অভাব ক্যানসারের ঝুঁকি ৩০-৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন ভুলে ক্যানসারের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়-

তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার

তামাক ব্যবহারকারীদের ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে। নিকোটিন ছাড়াও এতে থাকা শত শত ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে, যা পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে।

তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ১৪ ধরনের ক্যানসারের বিকাশে ভূমিকা রাখে। যেমন- মাথা-ঘাড়, ফুসফুস, মূত্রাশয় ও অগ্ন্যাশয় ক্যানসার, ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ২৫-৩০ ও ৮৭ শতাংশ শুধু তামাক ব্যবহারের জন্য দায়ী। ফুসফুসের ক্যানসারজনিত মৃত্যু তো আছেই।

Advertisement

অধূমপায়ীদের তুলনায়, ধূমপায়ী পুরুষদের ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি ২৩ গুণ বেশি ও ধূমপায়ী নারীদের মধ্যে ১৭ গুণ বেশি।

বসে থাকা জীবন ও পশ্চিমা ধাঁচের খাবার

যারা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করে কিংবা স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার বেশি খান তাদের মধ্যেও ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।

এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ফলে স্থূলতা জরায়ু, স্তন, অগ্ন্যাশয় ও পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

ভারী অ্যালকোহল সেবন

খাদ্যনালি, স্তন ও যকৃতের ক্যানসারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের বিকাশে ভারী অ্যালকোহল সেবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিভিন্ন গবেষণা নির্দেশ করে, প্রতিদিন ১৪ গ্রাম ও তার বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ, কোলন ক্যানসারের ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

বারবিকিউ করা মাংস ঘন ঘন খাওয়া

পোড়া খাবারে পাইরোলাইসেট ও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, বলে জানান অধ্যাপক ইয়েসিম ইরাল্প। তার মতে, এই যৌগগুলো বিশেষত গ্যাস্ট্রিক ও অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ায়।

সানস্ক্রিন ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা

সানস্ক্রিন ছাড়া দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি মেলানোমা ও অন্যান্য ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

২৫ বছর বয়সের আগে দৈনিক ৬ বার বা তার বেশি তীব্র রোদে পোড়া মেলানোমার ঝুঁকি ২.৭ গুণ ও অন্যান্য ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি ১.৭-২ গুণ বাড়িয়ে দেয়।

মেডিকেল অনকোলজির অধ্যাপক ইয়েসিম ইরাল্প বলেছেন, সোলারিয়াম ডিভাইসে ট্যানিং ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি ৬ গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

তার মতে, সোলারিয়াম এড়াতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসলে ৩০ মিনিটের বেশি সময় পর্যন্ত থাকবেন না, আর অবশ্যেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া

টিনজাত খাবারে নাইট্রাইট থাকে, আর যে খাবারে অ্যাজো ডাই থাকে সেগুলো সরাসরি কার্সিনোজেনিক। অধ্যাপক ইয়েসিম ইরাল্প আরও জানান, প্লাস্টিকের আবরণযুক্ত পণ্য যেগুলোতে বিসফেনল থাকে সেগুলো স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

আর যেসব পণ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট অ্যাসিড, পরিশোধিত চিনি ও ময়দা আছে সেগুলো অক্সিডেশন ও প্রদাহকে ট্রিগার করে ক্যানসারের দিকে নিয়ে যায়।

অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক ব্যবহার ও ভারী অ্যালকোহল সেবনের মতো খারাপ অভ্যাস সরাসরি ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর মানসিক চাপের মধ্যে থাকলেই মানুষ অত্যধিক তামাক বা অ্যালকোহল ব্যবহার করেন।

প্রফেসর ইয়েসিম ইরাল্পর মতে, ভালো ঘুমানো, সক্রিয় জীবনধারা ও নিয়মিত বিরতিতে ব্যায়ামের জন্য অতিরিক্ত সময় (সপ্তাহে তিনবার) চাপ এড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা

রাত জেগে থাকার অভ্যাস শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলে। যেমন টিভির সামনে ঘুমানো ও গভীর রাত পর্যন্ত না ঘুমানো, ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়। মেলাটোনিন একটি হরমোন ,যা ঘুমের চক্র ও শরীরের জৈবিক ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে, যাকে বলা হয় ‘সার্কেডিয়ান রিদম’।

খারাপ ঘুমের অভ্যাসের কারণে, এপিফাইসিস (মস্তিষ্কের মাঝখানে অবস্থিত একটি ছোট অঙ্গ) মেলাটোনিন সঠিকভাবে নিঃসরণ করে না। ফলে ক্যানসার কোষ বিকাশের ঝুঁকি বাড়ে।

বিছানায় মোবাইল ফোন রেখে ঘুমানো

মোবাইল ফোন ও মাইক্রোওয়েভ ওভেনও (যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের উৎস) ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ ধরনের অ-আয়নাইজিং বিকিরণগুলো হেমাটোলজিক ক্যানসারের কারণ হতে পারে। যাকে বলা হয় ‘মাইলোমা’ বা নরম টিস্যু টিউমার।

এটি প্রস্তাব করা হয়েছে, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ পার্শ্ববর্তী টিস্যুতে গ্লুকোজ বিপাককে ত্বরান্বিত করে বা ভাস্কুলার প্রসারণ ও তাপের পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই অধ্যাপক ইয়েসিম ইরাল্প পরামর্শ দেন, বিছানার পাশে মোবাইল ফোন নিয়ে ঘুমানো উচিত নয়।

সূত্র: অ্যাসিবাদেম ইন্টারন্যাশনাল

জেএমএস/এমএস