মতামত

‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল’

গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নবনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হিজ অ্যাক্সিলেন্সি ইয়াও ওয়েন ঢাকায় পৌঁছান। পরে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে নিজের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র পেশ করেন। সে সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের সম্পর্ক আরও স্থিতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে তিনি কাজ করে যাবেন।

Advertisement

সম্প্রতি হিজ অ্যাক্সিলেন্সি ইয়াও ওয়েন চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)র বাংলা বিভাগকে একটি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে তার প্রথম অনুভূতি এবং চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারটির বাংলা অনুবাদ এখানে তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও, এটি কী আপনার প্রথম বাংলাদেশ সফর? ঢাকায় আসার পর আপনার প্রাথমিক অনুভূতি কেমন?

উত্তর: আমি রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গর্ববোধ করছি। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন, সুস্বাদু ইলিশ, সিলেটের সুগন্ধী কালো চা আমাকে মুগ্ধ করে। শতবার বলার চেয়ে, একবার নিজের চোখে দেখা ভালো। ‘বঙ্গোপসাগরের মুক্তা’ নামে সুপরিচিত বাংলাদেশে এসে আমি সত্যিকার অর্থে এর মাটিতে বিদ্যমান আশা-ভরসা অনুভব করতে পেরেছি।

Advertisement

আমি বাংলাদেশের সমাজের প্রাণশক্তি অনুভব করেছি। আমি বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছি। তারা আমার সঙ্গে সাক্ষাতে ‘উন্নয়ন’ ও ‘ভবিষ্যৎ’— এই শব্দ দুটি সবচেয়ে বেশিবার উল্লেখ করেছেন।

তাদের কথায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ইতিবাচক মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে। আমি মনে করি, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অদ্বিতীয়; দেশটির অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। বলা যায়, বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে, যা চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করবে।

চীনের প্রতি বাংলাদেশী জনগণের বন্ধুভাবাপন্ন আবেগ আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে। তাদের উষ্ণ ও আন্তরিক দৃষ্টিতে আমি অনুভব করেছি যে, চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব জনগণের আন্তরিক আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

প্রশ্ন: গত তিন বছর মহামারির কারণে সারা বিশ্বেই মানুষের যাতায়াত অনেক সীমিত ছিল। কিন্তু এর মধ্যেও বাংলাদেশে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলেছে। দুই দেশের যোগাযোগ ও মৈত্রী মহামারির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়নি। আপনার দৃষ্টিতে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে?

Advertisement

উত্তর: সবাই জানেন, ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশ সফর করেন এবং দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের সম্পর্কে উন্নতি করেন। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন। বর্তমানে চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দ্রুতগতিতে বিকশিত হচ্ছে। আমি তিনটি চাবিকাঠি শব্দ দিয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বর্ণনা করতে চাই-

প্রথম শব্দ হচ্ছে বন্ধুত্ব। চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রী দুই দেশের প্রবীণ নেতাদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে এবং সবসময় দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের যত্ন ও নির্দেশনা পেয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর ১০০তম জন্মবার্ষিকী আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশেষভাবে অভিনন্দন জানিয়ে একটি ভিডিও-বার্তা পাঠান। একই সালের জুলাই মাসে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংকেও অভিনন্দন জানিয়ে ভিডিও-বার্তা পাঠান।

দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে সহযোগিতা। সর্বাত্মক ও বিস্তৃত ক্ষেত্রের সহযোগিতা বরাবরই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত্তি ও নিশ্চয়তা। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। চীন ও বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টায় ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণকাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে, আন্তঃসংযোগের মান উন্নত হয়েছে, দুই দেশের জনগণের জন্য বাস্তব কল্যাণ সৃষ্টি হয়েছে। এটা জনগণের সুবিধার পথ, সমৃদ্ধির পথ ও উন্নয়নের পথে পরিণত হয়েছে।

তৃতীয় শব্দ হচ্ছে সম্ভাবনা। চীন প্রথম শত বছরের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছে, এখন সার্বিক সমাজতান্ত্রিক শক্তিশালী আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার দ্বিতীয় শত বছরের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিঃসন্দেহে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও বেশি চালিকাশক্তির জোগান দেবে এবং ব্যাপক সহযোগিতার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

প্রশ্ন: চীনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয় গত ৮ জানুয়ারি। চীন কেন এ সময় এমন বড় পরিবর্তন এনেছে এবং এ ব্যবস্থা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিময়ের জন্য কী কী নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে?

উত্তর: চীন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনাকে ‘বি’ পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করেই চীন সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভাইরাসের মিউটেশন, মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি, আর চীনের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকাজের সাফল্য বিবেচনায় রেখেই এমন সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চীনের কাজের গুরুত্ব ‘সংক্রমণ প্রতিরোধ’ থেকে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আর মারাত্মক রোগ’ প্রতিরোধে স্থানান্তর হয়েছে। চীন বৈজ্ঞানিক বিচারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা হচ্ছে চীনা জনগণ আর বিশ্বের কল্যাণে নেওয়া চীনা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যবস্থা। এতে আরও একবার জনগণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ও জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চীন সরকারের ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে।

৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর নিয়ম অনুসারে, চীনে প্রবেশের জন্য এখন থেকে কেবল ভিসা, বিমান টিকিট আর রওয়ানা হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে করা নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট দেখালেই হবে। এভাবে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতের সময় ও ব্যয় অনেক সাশ্রয় হবে। অনুমান করা যায়, দুই দেশের সরকার, ব্যবসায়ী আর জনসাধারণের যাতায়াত এতে বাড়বে; বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতা গভীরতর হবে। চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতায় জোরালো উন্নয়নের নতুন পর্যায়ের সূচনা হবে।

প্রশ্ন: গত বছর চীনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা ছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের সফল আয়োজন। এ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং তার কার্যবিবরণীতে বলেছেন, চীনের নতুন বিকাশ বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের ‘ভিশন ২০৪১’ আর ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীন কেমন ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: চীন সর্বদাই বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার। দীর্ঘকাল ধরে দুই দেশ পরস্পরকে বিশ্বাস, সম্মান, সমর্থন ও সাহায্য করে আসছে। চীন আনন্দের সাথে বাংলাদেশকে ‘ভিশন ২০৪১’ আর ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে দেখছে। চীন আগের মতো ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সঙ্গে হাতে হাত রেখে সামনে এগিয়ে যাবে এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় পক্ষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

আমরা চারটি ক্ষেত্রে একসাথে প্রচেষ্টা চালাতে পারবো- এক, অভিন্ন উন্নয়ন সাধন করা। চীন ও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। দুই দেশেরই উন্নয়নের অধিকার এবং সুখী জীবন উপভোগের অধিকার আছে। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নের কৌশল সংযুক্ত করতে, উন্নয়নের অভিজ্ঞতা আর উন্নত প্রযুক্তি শেয়ার করতে, বাংলাদেশের শিল্পায়ন, আধুনিকীকরণ এবং ডিজিটাল নির্মাণ দ্রুততর করতে, বাংলাদেশের জীবিকা উন্নয়নে সহায়তা করতে এবং যৌথভাবে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে চায়।

দুই, অভিন্ন নিরাপত্তা ত্বরান্বিত করা। চীন দৃঢ়তার সাথে বাংলাদেশকে দেশের স্বাধীনতা ও জাতির সম্মান রক্ষার কাজে সমর্থন করে; নিজের রাষ্ট্রীয় অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উন্নয়নের পথ অন্বেষণকে সমর্থন করে; বাংলাদেশে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে; এবং এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার কাজ সমর্থন করে।

তিন, সাধারণ মূল্যবোধ প্রচার করা। শান্তি, উন্নয়ন, ন্যায্যতা, গণতন্ত্র আর স্বাধীনতা হচ্ছে মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ, যাতে বিভিন্ন দেশের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়। চীন ও বাংলাদেশ সংহতি জোরদার করে যৌথভাবে এর প্রচার করবে।

চার, অভিন্ন দায়িত্ব বহন করা। জটিল ও পরিবর্তনশীল যুগে আর শত বছরের বিরল ও অদ্ভুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায়, চীন ও বাংলাদেশ পরস্পরের কেন্দ্রীয় স্বার্থ আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরস্পরকে সমর্থন দিয়ে যাবে; যৌথভাবে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ আর সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা রক্ষা করবে।

প্রশ্ন: ২০২৩ সাল হচ্ছে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রস্তাব উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ সম্পর্কিত অনেকগুলো প্রকল্প নির্মাণাধীন। চলতি বছর আর কোন কোন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জিত হবে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: চলতি বছর হচ্ছে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্থাপিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রস্তাবের দশম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এ যোগ দেওয়ার সপ্তম বর্ষ। গত সাত বছরে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন চালিকাশক্তি জুগিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের জীবিকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।

২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকারের অবকাঠামো নেটের তৃতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হয়েছে। এটা বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রদর্শনীকেন্দ্র। ২০২২ সালে পায়রা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সারাদেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। দেশটিতে দূষিত পানি শোধনাগার চালু হয়েছে। এটা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পানি শোধনাগার। বাংলাদেশের জনগণের ‘স্বপ্নের সেতু’ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষে উন্মুক্ত হয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১.২৩ শতাংশ পয়েন্ট অবদান রাখবে এই সেতু।

চলতি বছর বাংলাদেশে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মাণাধীন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর সম্ভাবনাও অনেক। কর্ণফুলী নদীর খননকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। টেলিযোগাযোগ নেট আধুনিকীকরণ প্রকল্পও সম্পন্ন হবে। আইসলাম কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে। সিঙ্গেল-পয়েন্ট মুরিং এবং ডাবল-লাইন পাইপলাইন প্রকল্পের কাজও শেষ হবে। পদ্মা সেতুর রেলপথ সংযোগ লাইনের প্রথম অংশ উন্মুক্ত হবে। রাজশাহী পৃষ্ঠতল পানি শোধনাগার প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হবে।

আমি বিশ্বাস করি, ২০২৩ সালে চীন ও বাংলাদেশের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বিষয়ক সহযোগিতা থেকে অনেক সাফল্য অর্জিত হবে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ‘বাংলাদেশ অধ্যায়’-কে চমৎকারভাবে রচনা করতে পারবো।

প্রশ্ন: আপনি কর্ণফুলী খনন, পদ্মা সেতু আর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নাম উল্লেখ করেছেন। এ প্রকল্পগুলোর কোনটা আপনি প্রথমে পরিদর্শন করতে চান?

উত্তর: এসব প্রকল্প দেখার আগ্রহ আমার আছে। এখানকার কাজের অবস্থা আরও ভালো করে জেনে নিয়ে চলতি বছর আমি এ প্রকল্পগুলো দেখতে যাবো। দেখবো, এ প্রকল্পগুলো কীভাবে বাংলাদেশের জনগণের জীবিকা উন্নয়নে অবদান রাখছে, কীভাবে চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মৈত্রী বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, এ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন পাবে এবং বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রশংসা কুড়াবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। চীন হচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সুপ্রতিবেশী। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন কী ভূমিকা রাখতে পারে? উত্তর: চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান বুঝতে পারে। এ বিষয়ে চীন সবসময় ন্যায়সঙ্গত মনোভাব নিয়ে কাজ করে আসছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারসংশ্লিষ্ট একটি প্রস্তাবে চীন ভোটদানে বিরত থাকে, ফলে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। চীন তার বাস্তব কর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, দেশটি সবসময়ই বিষয়ের সত্যতা বিবেচনা করে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চীন পরিবেশ সৃষ্টি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছে, যা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সমাজ দেখছে।

গত বছরের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন। আমার আগে দুজন চীনা রাষ্ট্রদূতও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তারা একাধিকবার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনও করেছেন।

চীন অব্যাহতভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ওপর নজর রাখবে, বাংলাদেশের ভার কমানোর জন্য যথাসম্ভব সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সদিচ্ছাকে সম্মান করার ভিত্তিতে, অব্যাহতভাবে সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করে যাবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের কার্যমেয়াদে আপনার প্রত্যাশা কী? চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের জন্য আপনার কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে?

উত্তর: বাংলাদেশে নিযুক্ত ১৬তম চীনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমার কর্তব্য হলো দুই দেশের নেতাদের স্বাক্ষরিত গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য বাস্তবায়ন করা, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বন্ধুদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যোগাযোগ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি চীন ও বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশার ইতিবাচক জবাব দেওয়া, নিরন্তরভাবে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন বৃদ্ধির বিষয় খুঁজে বের করা, চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সোনালী সাইনবোর্ড আরও উজ্জ্বল করে তোলা।

আমি দুই দেশের নেতা আর বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তির সাথে কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করবো; পার্টি, সংসদ, থিঙ্ক ট্যাংক, গণমাধ্যমগুলোর সাথে সহযোগিতা বাড়াবো; দেশ প্রশাসনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবো; আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে আরও বড় ভূমিকা পালন করার উদ্দেশ্যে কাজ করবো। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টি হবে। ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার গ্রহণসাংবাদিক: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।

এইচআর/জেআইএম