এবার মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হলো। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) আইনজীবী এমএল শর্মা জনস্বার্থে এ মামলা দায়ের করেন।
Advertisement
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আদানি গ্রুপ বাজারে ফলো-অন পাবলিক অফার (এফপিও) ছাড়ার আগেই হিনডেনবার্গ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর ফলে চরম লোকসানের মুখে পড়েছে গ্রুপটি। যদিও শেয়ার বাজারে ধারাবাহিক দরপতন রুখতে জাতীয় বাজেট ঘোষণার দিনই এফপিও প্রত্যাহার করে নেয় আদানি গ্রুপ।
আরও পড়ুন> বিদ্যুৎ আমদানি/ আদানির সঙ্গে চুক্তি সংশোধন চায় বাংলাদেশ, ভারত বললো ‘জড়িত নই’
তবে এর আগে শেয়ার বাজারে ধসের মধ্যেও ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বাজারে ছেড়েছিল আদানি গ্রুপ। শেয়ার পুরোপুরি বিক্রিও হয়েছিল। কিন্তু লাগাতার দাম কমায় বিনিয়োগকারীদের মোটা অংকের লোকসানের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় এফপিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় গ্রুপটি।
Advertisement
আইনজীবী এমএল শর্মা হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তার দাবি, ওই প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক লোকসান হয়েছে। মামলার পিটিশনে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন> গৌতম আদানির করপোরেট কেলেংকারি/ সবার নজরে হিনডেনবার্গ রিসার্চ
জানা যায়, ভারতীয় অর্থনীতিতেও আদানি গ্রুপের এ বাজে পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে। বলা হচ্ছে, এর কারণেই বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির তকমা হারিয়েছে ভারত। সে জায়গায় এখন অবস্থান করছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। ভারতের বাজার মূলধন একবারে তিন দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলার কমে গেছে। মাত্র ১০ কোটি ডলারের ব্যবধানে ভারতের পরেই রয়েছে যুক্তরাজ্য।
আদানি গ্রুপের দাবি, যেসব সংস্থায় তাদের ১০০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে, সেগুলোতে লোকসান হবে না। সুতরাং তাদের নিট নিজস্ব সম্পত্তি কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
Advertisement
আরও পড়ুন> লন্ডভন্ড করপোরেট সাম্রাজ্য/ আদানি গ্রুপের ভবিষ্যৎ কী?
২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গ আদানির ‘করপোরেট জালিয়াতি’ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রতবেদনটিতে বলা হয়, এক দশক ধরে শেয়ারের দামে কারচুপি করছে আদানি গ্রুপ। আর্থিক লেনদেনেও প্রতারণা করে এসেছে গ্রুপটি।
হিনডেনবার্গ আরও বলে, কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে ও কারচুপি করেই তিন বছরে আদানির শেয়ারসংক্রান্ত সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশেরও বেশি। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে থাকে আদানি গ্রুপ।
আরও পড়ুন> আদানি সাম্রাজ্যে পতনের সুর/ একদিনে সম্পদ কমলো পাঁচ হাজার কোটি ডলার
ধোঁকাবাজির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই গ্রুপটির ১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়, যা কোনোভাবেই থামছে না। আদানি গ্রুপকে নিয়ে দুই বছর তদন্তের পর গত মাসে গুরুতর অভিযোগের বিশদ বিবরণসহ বিস্ফোরক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। সেখানে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজি’র অভিযোগও তোলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থাটি।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের ঋণের মাত্রা ও ট্যাক্স হেভেন ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর পর থেকে আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানি তাদের অর্ধেকেরও বেশি বাজার মূলধন হারিয়েছে, যা ১০ হাজার কোটি ডলারের সমান।
আরও পড়ুন> টালমাটাল আদানি গ্রুপ, তিন দিনে উধাও ৭০০০ কোটি ডলার
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর আদানি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির অবস্থান হারিয়েছেন। অন্যদিকে, ফোর্বসের করা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তৃতীয় থেকে ১৭ তে নেমে এসেছেন। এর আগে ইলন মাস্ক ও বার্নার্ড আর্নল্টের পরেই ছিল আদানির অবস্থান।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাব দেয় আদানি গ্রুপ। সেখানে বলা হয়, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এটি কেবল নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির ওপর অন্যায় আক্রমণ নয়, বরং ভারতের ওপর, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, অখণ্ডতা-গুণমান ও ভারতের আকাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।
আরও পড়ুন> আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ‘ভারতের ওপর আক্রমণ’
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিশাল জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন ও কিছু প্রমাণও দেখিয়েছে আদানি গ্রুপ। কিন্তু এসবের পরও শেয়ারের দরপতন ও সম্পদ খোয়ানো থামাতে পারছেন না আদানি।
সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস
এসএএইচ