লাইফস্টাইল

ভালো কাজের বিনিময়েই খাবার মেলে যেখানে

বখতিয়ার আবিদ চৌধুরী

Advertisement

দিনে একটি ভালো কাজ আর সেটির সরল স্বীকারোক্তিতে মিলবে একবেলা খাবার! এমন খবর শুনলে মুখ দিয়ে আপনা আপনিই বেরিয়ে আসে, অবিশ্বাস্য! কিংবা চমকপ্রদ! কিন্তুু এ জাতীয় শব্দবন্ধের কাঠামোতে এই কার্যক্রমের মানবিক দিকটি প্রকাশ পায় না।

‘ভালো কাজের হোটেল’ এ শিরোনামে কমলাপুরের ছিন্নমূল ভাসমান ক্ষুধার্ত মানুষদের কাছে প্রতিদিন একবেলার খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ নামের স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা। ঢাকা রেলস্টেশনের মূল ফটকের ফুটপাত ধরে দক্ষিণ কমলাপুরের দিকে যেতে আইসিডি গেটের একটু আগে সাদা রং করা দেওয়ালে লাল কালিতে বড় বড় করে লেখা আছে, ‘ভালো কাজের হোটেল, এখানে খেতে টাকা লাগবে না, যে-কোনো একটি ভালো কাজ করলেই হবে।’

সপ্তাহে সাতদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভালো কাজের হোটেলটির কার্যক্রম পরিচালনা করেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রতিদিন প্রায় তিনশ মানুষ খাবার খেয়ে থাকেন, ফুটপাতে এক থেকে ষাট পর্যন্ত সিরিয়াল নম্বর দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করা হয়েছে। অর্থাৎ একসাথে বসে সর্বোচ্চ ষাটজন খাবার খেতে পারেন। খাবারের মেন্যুতে থাকছে, সপ্তাহে তিনদিন ডিম-খিচুড়ি, তিনদিন ডিম-ভাত-সবজি, শুক্রবারে থাকে মুরগির তেহারি কিংবা বিরিয়ানি। তবে কখনো কখনো শনিবারে ভাতের সঙ্গে মুরগি অথবা গরুর মাংস যুক্ত হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: শীতে কোন কোন ফল বেশি খাবেন? 

এখানেই কাজ করছিলেন একজন স্বেচ্ছাসেবক, খাবার বিলিতে তার ব্যস্ততা ছিল বেশ। তবুও একটু আলাপ করার চেষ্টা না করলেই নয়! পরিচয় জানিয়ে আলাপ করতে চাইলে প্রথমে একটু ইতঃস্তত করছিলেন। কিন্তু খুব দ্রুতই স্বাভাবিক হলেন, তার নাম সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন হিমেল। ২০২০ সাল থেকে এ কার্যক্রমের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত আছেন।

হিমেল বলেন, ‘ভালো কাজের হোটেলটি আরও আগে শুরু হলেও ২০২০ সালের করোনার সময় থেকে কার্যক্রম গতিশীল হয়। এখানে খেতে কোনো টাকা লাগে না। শর্ত হচ্ছে একটি ভালো কাজ করতে হবে। প্রতিদিন খাবার দেওয়ার সয়ম ব্যক্তির নাম, বয়স এবং সামর্থ্য অনুযায়ী কী ভালো কাজ করেছেন, তা জিজ্ঞাসা করি এবং সেগুলো একটি খাতায় লিপিবদ্ধ করি, এরপর খাবার প্রদান করি।’

একটু দূরে দাঁড়িয়ে তদারকি করছিলেন মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। তিনি ২০১৭ সাল থেকে ইয়ুথ ফর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই নতুন এসেছেন। কাজ বুঝতে অসুবিধা হয়। তাই দেখাশোনা করছিলাম। আমি যখন ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়তাম; তখন থেকেই ইচ্ছা জন্মাল সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার। সে ইচ্ছা থেকেই এখানে আসা। সংগঠনের যারা সদস্য, তাদের মাসিক চাঁদার টাকা ও বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর অর্থ সাহায্যে কার্যক্রম চলে। কমলাপুর, সাতরাস্তা, কড়াইল বস্তি, কারওয়ানবাজারে বর্তমানে কার্যক্রম চলছে। আরিফুর রহমান শিহাব সংগঠনটির উদ্যোক্তা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে বন্ধুদের নিয়ে এটি শুরু করেন।’

Advertisement

আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় যেসব ‘লোগো’ দেখবেন 

শীতের রাত, জড়োসড়ো হয়ে বসে খাবার খাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সারাদিন পরিশ্রমের পর খাচ্ছেন সবাই। কোনো ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো ভ্রূক্ষেপ! কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য যথার্থই বলেছেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’

লেখক: শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ।

এসইউ/জিকেএস