আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে এবার ভারতের পার্লামেন্টে ব্যাপক শোরগোল হয়েছে। এমনকি, বিরোধীদলগুলোর চেচামেচিতে লোকসভা ও রাজ্যসভা- দুই কক্ষের অধিবেশনই মুলতবি রাখা হয়। অন্যদিকে, কংগ্রেসসহ তাদের সমর্থনকারী বিরোধী দলগুলো আদানি গ্রুপের জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয় তদন্তে সংসদীয় কমিটি অথবা সুপ্রিম কোর্ট মনোনীত কমিটি গঠনের দাবি করে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বিরোধীদলীয় কক্ষে একত্র হন কংগ্রেস ও তার সমর্থনকারী দলের নেতারা। সেখান থেকেই দাবি ওঠে, আদানি ও হিনডেনবার্গের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হোক।
আরও পড়ুন> আদানি গ্রুপের ভবিষ্যৎ কী?
শেয়ার বাজারে আদানি গ্রুপের ধস নিয়ে আলোচনার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্যসভা। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা দাবি করেন, এলআইসি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিনিয়োগ থাকায় কোটি কোটি ভারতীয় সঞ্চয় বিপদের মুখে আছে।
Advertisement
তবে বিরোধীদের সব দাবি খারিজ করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। এরপরই বিরোধী দলগুলোর নেতারা হইচই শুরু করেন। আসন থেকে উঠে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, বিরোধীদের দাবি না মানায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় লোকসভাতেও। পরে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয় বাজেট অধিবেশন।
আরও পড়ুন> আদানির কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করলেন বরিস জনসনের ভাই
বর্তমানে ভারত ও বিশ্বব্যাপী তুমুল আলোচনার বিষয় হলো, আদানি গ্রুপের অনিয়ম ও জালিয়াতের অভিযোগ। ২৪ জানুয়ারি মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা ‘হিনডেনবার্গ রিসার্চ’ আদানির ‘করপোরেট জালিয়াতি’ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশক ধরে শেয়ারের দামে কারচুপি করছে আদানি গ্রুপ। আর্থিক লেনদেনেও প্রতারণা করে এসেছে গ্রুপটি। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে আদানি গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গ্রুপটি।
Advertisement
গত বছরের আগস্টে মুকেশ আম্বানিকে টপকে ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির স্থান দখল করেন গৌতম আদানি। এমনকি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তকমাও অর্জন করেন তিনি।
আরও পড়ুন> এবার এশিয়ার শীর্ষ ধনীর তকমা হারালেন আদানি, আবারও শীর্ষে আম্বানি
সেসময় ‘ক্রেডিট সাইট’ নামের একটি বিদেশি আর্থিক লগ্নি সংক্রান্ত পরামর্শদাতা সংস্থা জানিয়েছিল, আদানি গ্রুপের ব্যবসার প্রসারের পেছনে রয়েছে বিশাল পরিমান আর্থিক দেনা। তাছাড়া গ্রুপটি বিদেশি মুদ্রায় যে ঋণ নিয়েছে, তার পরিমাণও অনেক। এসব কারণে গ্রুপটি বিপদে পড়তে পারে।
অন্যদিকে, হিনডেনবার্গ রিসার্চ তাদের প্রতিবেদনে বলে, কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে ও কারচুপি করেই তিন বছরে আদানির শেয়ারসংক্রান্ত সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশেরও বেশি।
আরও পড়ুন> ভারতের পতাকায় শরীর ঢেকে দেশ লুট করছেন আদানি
ধোঁকাবাজির এ অভিযোগ ওঠার পর থেকেই আদানি গ্রুপের ১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়, যা কোনোভাবেই থামছে না। আদানি গ্রুপকে নিয়ে দুই বছর তদন্তের পর গত মাসে গুরুতর অভিযোগের বিশদ বিবরণসহ একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এতে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজি’র অভিযোগও তোলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থাটি।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাব দেয় আদানি গ্রুপ। সেখানে বলা হয়, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এটি কেবল নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির ওপর অন্যায় আক্রমণ নয়, বরং ভারতের ওপর, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, অখণ্ডতা-গুণমান ও ভারতের আকাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।
আরও পড়ুন> আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ‘ভারতের ওপর আক্রমণ’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছিলেন আদানি। ওই সময় এ ধনকুবের ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিশাল জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন ও কিছু প্রমাণও দেখিয়েছে আদানি গ্রুপ। কিন্তু এসবের পরও শেয়ার পতন ও সম্পদ খোয়ানো থামাতে পারছেন না আদানি।
আরও পড়ুন> আদানি গ্রুপের ‘কেলেঙ্কারি’/ ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে
সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স, ব্লুমবার্গ
এসএএইচ