প্রতিদিন কত ধরনের সংবাদই পাই। এরমধ্যে সুসংবাদ খুব কমই পাওয়া যায়। বেশির ভাগই থাকে দুসংবাদ। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। নিজ স্বার্থের জন্য ন্যায়-অন্যায় কোন পরওয়া করছেনা। সবকিছু যিনি দেখছেন, যিনি সমগ্র পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, যিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং সর্বশক্তিমান, যিনি সর্বত্র বিরাজমান তার কাছে যে সবার হিসেব দিতে হবে তা বেমালুম আজ আমরা ভুলে বসেছি।
Advertisement
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে। তাইতো আমাদের প্রতিটি কর্ম আল্লাহপাকের কাছে লিপিবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে। আল্লাহতাআলার কাছে আমাদের প্রতিটি কর্মের হিসেব দিতে হবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আকাশ সমূহে যা আছে এবং পৃথিবীতে যা আছে সবই আল্লাহর। আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ কর বা তা গোপন কর আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে এর হিসাব নিবেন। অতএব, তিনি যাকে চাইবেন ক্ষমা করবেন এবং যাকে চাইবেন আজাব দিবেন। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৪)। এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, মানুষের কোনো চিন্তা বা কাজ বিনা হিসাবে হবে না, তা যতই গোপন হোক না। এর জন্য পুরস্কার, শাস্তি বা ক্ষমা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী পেতেই হবে।
হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, যেমন হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, ‘দুনিয়া পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে আর আখেরাত সম্মুখে আসছে আর এদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়াদার সন্তান হয়ো না। কেননা আজ আমলের সময়, এখানে কোনো হিসেব নেই, আর আগামীকল হিসেব-নিকেশ হবে, সেখানে কোনো আমল নেই’ (বুখারি)।
Advertisement
আমরা যদি ভাবি, এই দুনিয়া হচ্ছে আনন্দ-ফুর্তির দুনিয়া, যখন যা ইচ্ছে করবো, আমাকে ধরার কে আছে? এই ধারণাটি মোটেও ঠিক নয়। কেননা প্রত্যেককে তার নিজ নিজ হিসাব দিতে হবে।
একটি কথা আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এই দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্র। আমরা সবাই পরীক্ষা দিচ্ছি, যে ভালো পরীক্ষা দিবে সে ভালো ফল লাভ করবে এটাই স্বাভাবিক। সেদিন কেউ বলতে পারবে না যে, হায়! আমি যদি আবার দুনিয়াতে যেতে পারতাম তাহলে ভাল কাজ করে আসতাম। আমরা যা কিছুই করি না কেন আল্লাহ তা জানেন ও দেখেন। আমাদেরকে আল্লাহতাআলার সামনে উপস্থিত হতেই হবে এবং প্রত্যেক কর্মের হিসেব দিতে হবে।
আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। তখন দুর্বল লোকেরা অহংকারীদের বলবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। অতএব, তোমরা আমদের কাছ থেকে আল্লাহর আযাবের কিছুটাও কি দূর করতে পার? তারা বলবে, আল্লাহ যদি আমাদের হেদায়াত দিতেন তাহলে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে হেদায়াত দিতাম। আমাদের জন্য এখন বিলাপ করা বা ধৈর্য ধরা উভয়ই সমান। আমাদের রক্ষা পাওয়ার কোনো পথ নেই’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ২১)। আমাদেরকে যেদিন আল্লাহপাকের সামনে উপস্থিত করা হবে সেদিন কেউ কারো বোঝা বহন করার সুযোগ পাবে না। যার যার হিসাব তাকেই দিতে হবে এবং আল্লাহপাক চাইলে তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।
যেভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত সাফওয়ান ইবনে মুহরাব (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হজরত ইবনে ওমর (রা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ ও ঈমানদার বান্দার মধ্যকার গোপন আলোচনা সম্পর্কে মহানবিকে (সা.) আপনি কিভাবে বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি তার রবের নিকটবতীর্ হবে। এমন কি রব তাঁর কুদরতী হাত সেই বান্দার ওপর রেখে দু’বার বলবেন, তুমি (দুনিয়ায়) অমুক অমুক কাজ করেছিলে। সে বলবে, জি হাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি এমন কাজ করেছিলে? সে বলবে, জি হাঁ। এভাবে তার নিকট হতে এর স্বীকৃতি আদায় করা হবে তারপর বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার গুনাহ গোপন করে রেখেছি। আজ আমি তা মাফ করে দিচ্ছি’ (বুখারি, কিতাবুল আজাব)।আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পরকালের কথা চিন্তা করে সবধরনের মন্দ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।
Advertisement
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।masumon83@yagoo.com
এইচআর/এমএস