ধৃমল দত্ত, কলকাতা: হঠাৎ করেই কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে লাল শাড়ির অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস হাজির হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটা নাগাদ বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করেন তিনি। পরনে বিশ্বরঙের শাড়ি, হালকা মেকআপ, মুখে সর্বদা হাসি।
Advertisement
প্যাভিলিয়নে ঢোকার মুখেই অপুকে ঘিরে ধরলেন গণমাধ্যমকর্মী, অপুভক্ত ও বইপ্রেমীরা। এসময় অপুর সঙ্গে ছিলেন মেলার আয়োজক সংস্থা ‘বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ড’-এর সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
এরপর ভিড় ঠেলে বিভিন্ন বুক স্টল ঘুরে দেখেন তিনি। একসময় দাঁড়িয়ে পড়েন ‘ইকরিমিকরি’ প্রকাশনীর স্টলে। ছড়ার বই হাতে নিয়ে ছড়াও পাঠ করে শোনালেন তিনি। অন্য ভূমিকায় অপুকে কাছে পেয়ে বই বিক্রেতা, বইপ্রেমীরাও বেজায় খুশি।
কেউ দূর থেকেই তার ছবি তুললেন, কাউকে আবার দেখা গেল সেলফি তুলতে। অপুও কাউকে নিরাশ করলেন না। শেষে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের কার্যালয়ে প্রায় বিশ মিনিটের বেশি সময় কাটান, এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বাংলাদেশের বঙ্গভবনের আদলে এই প্যাভিলিয়নের প্রশংসা করেন তিনি।
Advertisement
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অপু বলেন, ‘এই মেলায় আসবো বলে আমি বিশ্বরঙের কাছ থেকে বিশেষভাবে অর্ডার দিয়ে এই শাড়ি বানিয়ে নিয়েছি।’
অপুর অভিমত, ‘কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ স্টল সবসময় একটা আলাদা গুরুত্ব পায়। অনেক বাংলাদেশি মানুষ এখানে যোগদান করেন।’
অপুর যদিও কলকাতার এই ঝটিকা সফরের প্রধান কারণ ছিল বইমেলা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এদিন মেলা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অপুকে উত্তরীয়সহ অন্য গিফট তার হাতে তুলে দেন সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়সহ মেলা কর্তৃপক্ষের অন্য কর্মকর্তারা।
পরে অপু বলেন, ‘আমি আবারও আসতে পেরে আনন্দিত। আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে যে আমার দেশের পরিচিত গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মুখগুলো দেখতে পারছি। আমার সৌভাগ্য হয়েছে যে কলকাতায় প্রথম ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের তরফে আমায় সংবর্ধিত করা হয়েছিল। আজকের সৌভাগ্য আরও বড়। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, কারণ বইমেলায় সংবর্ধনা পাওয়াটা বড় গর্বের। যেখান থেকে শিক্ষা শুরু হয় তারই একটা ভালো লাগার জায়গা এই বইমেলা।’
Advertisement
অপু নিজের লাল শাড়ি সিনেমাটি করার পেছনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ নেন, তার ফলেই এই সিনেমাটি করতে পেরেছি।’
সিনেমা প্রসঙ্গে তিনি আবারও বলেন, ‘আসন্ন সিনেমার কাজটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে, সামান্য একটু বাকি আছে। ডাবিংসহ দুই একটি কাজ শিগগির শেষ হয়ে যাবে।’
অপুর আশা, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে খুব সুন্দর একটি দিনক্ষণ দেখে আগামী ঈদেই হয়তো আমরা এর রিলিজ করতে পারবো।’ এদিন অপু বিশ্বাসের মাধ্যমেই বাংলাদেশ সরকারকে কলকাতার প্রকাশক ও গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় আবদার করেন, ‘এপার বাংলার বই প্রকাশকদের যাতে ওপার বাংলায় জায়গা দেওয়া হয়।’ ত্রিদিবের অভিমত, ‘কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের বইয়ের খুব চাহিদা আছে, ওপর বাংলাতেও ঠিক তেমনি চাহিদা রয়েছে এপার বাংলার কবি, সাহিত্যিকদের বইয়ের।’
এ প্রসঙ্গে অপু বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। বন্ধুত্ব কিন্তু ছোটবেলা থেকেই শুরু হয়। আমি যেমন গল্পের বই, কার্টুন বা ভূতের বই দিয়ে বন্ধুত্ব শুরু করেছিলাম। আসলে আমরা কেউই বইয়ের বাইরে নই। তাই আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এই বিষয়টি দেখবেন যাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশকদের ওপার বাংলায় জায়গা দেওয়া হয়।’
সংবর্ধিত হওয়ার পরই বই মেলা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সাথে করে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আসেন অপু। অপু বিশ্বাস বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আসার পর কলকাতার প্রকাশক ও গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস আজকে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এসেছেন, ভারতবর্ষে এসেছিলেন সেখান থেকে তিনি বইয়ের টানে চলে এসেছেন, প্রথমে আমাদের গিল্ডের স্টলে ছিলেন, তারপর তিনি যে দেশ থেকে এসেছেন তাদের যে বিশাল প্যাভিলিয়ন এখানে আছে, সেই বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন উনি এসছেন আমরাও সেখানে এসছি। আমরা মনে করি দুই বাংলার আদান-প্রদানে সেতুবন্ধের কাজ করবেন।’
এমএমএফ