সাহিত্য

ফকির ইলিয়াসের চারটি কবিতা

বর্ষার বার্তাকক্ষ

Advertisement

কোনো খবর নেই তবু উল্টাই শাদা পত্রিকার পাতা,একটি ছায়া উড়ে যায়। কেউ খুব সাহস করে আকাশথেকে বৃষ্টি নামায়। তারপর ছিটিয়ে দেয় মাটির শিকড়েআবার একটি বীজের জন্মোৎসব হবে, আমার এই মন স্পর্শ করবে ভুলের পাতাল।

আমি একাই বসে আছি বর্ষার বার্তাকক্ষে। পালকের নীলরং ঝরে পড়া ছবির দিকে তাকিয়ে দেখছি মিসিসিপি নদীরশান্ত উজান। মিহিন সুতোয় গাঁথা অন্য কয়েকটি বর্ষাদানা দিয়েপরখ করছি সেইসব দিনের দক্ষিণ।যেখানে ভালোবাসার দ্বীপ, কেবলই তোমার চোখের গহীন।

****

Advertisement

ভাঙন ও কৃতিত্বের গান

পাখিগুলো উড়ে গেল অন্য আকাশ ছুঁয়ে। এই সিঁড়ি, এই ভুলের প্রান্তরথেকে গেল এক ফোঁটা রক্তের দাগ বহন করে। গোলাপের লাল রক্ত লেগেছিল আমার হাতে। আমিও আততায়ী ছিলাম, ভাবতেই কেঁপে উঠলো বুকেরপাঁজর। যে জোনাকপোকা পুষেছিলাম বুকের গভীরে, তার ছটফট ধ্বনিশুনে পুনরায় কাঁদলো বৃহস্পতির ভোর। আগামীকাল শুক্রবার। এই শুক্রগ্রহেমানুষের প্রাণ ছিল হাজার শতাব্দী আগে। হয়তো থাকবে আগামী লক্ষ বছর। পাখিগুলো উড়ে গেল আমাদের ভাঙনের নীরব সাক্ষী হয়ে। ভাঙায় কৃতিত্ব আছে,এই সত্য বুকে নিয়ে খুঁজলাম পথ। দুদিকে চলে গেছে সবুজ ঘাসের চত্বর। আমারস্বপ্ন বলে কোনো ইতিহাস ছিল না। ছিল কেবল সমুদ্রের আর্যকণ্ঠে নিম্নচাপের স্বর।

****

অকৃপণ প্রাণগুলো

Advertisement

অনেকগুলো আয়না ঝুলে আছে,ছোট-বড়-মাঝারিকাচবনের ভেতর সামুদ্রিক জোসনায় হাঁটছেকাচের ঝিনুক, কে এঁকেছে এমন কাচেরভাস্কর্য, কে!ক্রিস্টালে নির্মাণ করে রেখেছে নানা রকম প্রাণচিত্র!

প্রাণগুলো সব সময়ই অকৃপণ হয়। তারা জানে না-জাগতিক সংঘর্ষের ভেতরই বেড়ে ওঠেবংশানুক্রমিক বিষ!

পৃথিবীর সকল বিষই বরাদ্দ থাকে শুধু সংহারের জন্য!না- এমন কথা বিশ্বাস না করেই সূর্য প্রতিদিনবাজায় যে নিরাময় সংগীত,এই মমির একদিন প্রাণ ছিল বলতে বলতে-কাচঘেরা চাঁদটিও খুঁজে নিজের ভিত!

****

নির্মাণের নৃত্যকলা

মানুষ বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টা করে কী করে না-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।আবার কেউ জানতে চাইতে পারে মূলত মানুষেরআয়ু কত সহস্র বছর।

রবীন্দ্রনাথ কত বছর ধরে বেঁচে আছেন,কিংবা সক্রেটিস বেঁচে থাকবেন আরওকত শতাব্দ, তা নিয়ে যারা ভাবে-তাদের ছায়া হয়ে থাকে অন্য কোনওচাঁদ; লিথোগ্রাফিক সারফেসে নক্ষত্রের ক্ষুদ্রাংশ গুলোকে বড় করে এঁকেছিলেন যে চিত্রশিল্পী রাত ঘুমিয়ে থাকে তার ডেরায়।

আমরা শুধু নির্মাণের জন্য নৃত্যগুলোকে সুতোয়বেধে রাখি। কখনো আকাশে উড়াই। কখনোমিশাই পায়ের ঘুঙুরে।

এসইউ/এএসএম