দেশজুড়ে

কাশিমপুর কারাগারে তিন বছরে ৭৭ বন্দির মৃত্যু

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে গত তিন বছরে ৭৭ বন্দির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসেই মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।

Advertisement

এ কারাগারে বন্দি আছেন প্রায় সাত হাজার। তাদের জন্য একটি ২০০ শয্যার হাসপাতাল ও তিনটি চিকিৎসাকেন্দ্র থাকলেও সেগুলোতে নেই স্থায়ী চিকিৎসক। যে কারণে গুরুতর অসুস্থ অনেক বন্দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারসহ জেলার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সেগুলোর বেশিভাগ ময়নাতদন্ত হয় তাদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মাধ্যমে। সেখানে ২০২২ সালে ৬৩৪ জন, ২০২১ সালের ৬৮৫ জন, ২০২০ সালে ৫২০ জনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের চারটি অংশের বন্দিদের মধ্যে ২০২২ সালে ২২ জন, ২০২১ সালের ২০ জন, ২০২০ সালে ২৯ জনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কাশিমপুর কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যু

Advertisement

এছাড়া চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় বন্দির মৃত্যু হয়েছে। সেই হিসাবে, গত তিন বছরে কারাগারে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ কয়েদিদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হৃদরোগে বা বুকে ব্যথায় মৃত্যু হয়েছে।

সবশেষ গত ২৯ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাইসিকিউরিটি কারাগারের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক কয়েদি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে কারারক্ষী রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও দুই সহকারী কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কারা কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারে কোনো বন্দি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে কারাগারের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর সেখানে জটিলতা বা রোগীর অবস্থা খারাপ হতে দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তারা আরও বলছেন, কাশিমপুর কারাগারে ২০০ শয্যার একটি হাসপাতাল রয়েছে। ওই হাসপাতালে বর্তমানে একজন বিডিএস ডেন্টাল চিকিৎসক নিয়মিত থাকেন। এছাড়া সপ্তাহের পাঁচদিন গাজীপুর সিভিল সার্জনের মাধ্যমে কারাগারের চার অংশে তিন চিকিৎসক পালা করে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও রয়েছেন। এছাড়া ওই হাসপাতালে ছয়জন নার্স রয়েছেন, যা রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় খুবই কম। কারাগারের ২০০ শয্যা হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে নিয়মিত চিকিৎসক থাকলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া যেত।

Advertisement

আরও পড়ুন: কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গিদের বিক্ষোভ

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন জানান, কাশিমপুর কারাগারের মৃতদের ময়নাতদন্ত তাদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। গত তিনবছরে ৭৭ বন্দির মৃত্যুর পর তাদের হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। যাদের ময়নাতদন্ত তারা করেছেন। এছাড়া কোনো রোগী যদি আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বা অন্য সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন এবং সেখানে যদি কারও মৃত্যু হয় তবে সেই মরদেহের ময়নাতদন্ত ওই হাসপাতালে হয়ে থাকে।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক তপন কান্তি সরকার বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রায়ই কারাগার থেকে ইমার্জেন্সি রোগীদের নিয়ে আসা হয়। এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের বেশিভাগই হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান বলেন, কারাগারগুলোতে নিজস্ব জনবল দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখনো তা কার্যকর হয়নি। যার কারণে আমরা সপ্তাহে পাঁচদিন চিকিৎসক কারাগারে পাঠাচ্ছি। এছাড়া প্রতি দুই মাসে রোস্টারের মাধ্যমে গাজীপুরের কারাগারগুলোকে ৪৪ দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: কাশিমপুর কারাগারে ধর্ষণ মামলার আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, কয়েক বছর আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ছিল ভাঙাচোরা। প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হতো, এ কারণে ইমার্জেন্সি রোগীদের ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বেশ সময় লাগতো। যার কারণে পথিমধ্যেই অনেক রোগীর মৃত্যু হতো। এখন চান্দনা চৌরাস্তা ও গাজীপুর শহরের রেলক্রসিং ছাড়া তেমন কোনো যানজট নেই। যার কারণে রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছি। এতে পথিমধ্যে অসুস্থ বন্দিদের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।

মো. আমিনুল ইসলাম/এমআরআর/এএসএম