যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশ কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সেনা অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের দুই বছর পর দেশটির সামরিক শাসকদের ওপর চাপ প্রয়োগে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো ছয় ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান জান্তা সরকারকে জ্বালানিখাতের প্রসার, বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব তৈরিসহ রাজস্ব ও অস্ত্র সংগ্রহে সাহায্য করেছে।
তিনি আরও জানান, দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন, খনি কোম্পানি, জ্বালানি বিষয়ক কর্মকর্তা ও সাবেক-বর্তমান কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাছাড়া প্রথমবারের মতো মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের (এমওজিই) কর্মকর্তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন> জান্তা সরকারকে অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করছে ১৩ দেশের কোম্পানি
Advertisement
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জান্তা সরকার যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে অবাধ নিরেপক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে- এমন আকাঙ্ক্ষায় দৃড় অবস্থানে রয়েছে।
জানা যায়, মিয়ানমারের জান্তা সরকার এ বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য যোগ্য হতে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে কঠোর সব শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, রাজনীতিতে বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্য যুক্ত করা। যাতে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ জান্তা সরকারের হাতেই থাকে ও বিরোধীরা চাপের মধ্যে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোর দাবি, জান্তা সরকার যেসব নিয়ম বেঁধে দিয়েছে, তার সবই সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্মতাদের নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির পক্ষে গেছে। ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে এ দলটিকে হারিয়েই ক্ষমতায় গিয়েছিল অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)।
আরও পড়ুন> নির্বাচন দেওয়ার আগে মিয়ানমার জান্তার কঠোর আইন
Advertisement
মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে জানা যায়, জান্তা সরকার এখন জরুরি শাসনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না ও সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। আর নতুন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের মন্তব্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকার উৎখাত করার সময় নোবেলজয়ী সু চি গ্রেফতার হন। সে সময় জান্তা সরকার ক্ষমতা দখল করলেও, দেশটির সিংহভাগ জনগণ তা মেনে নেয়নি।
ক্ষমতা দখলের পর তীব্র বিক্ষোভ, সরকারি কাজকর্ম বয়কটসহ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এখনও কিছুদিন পরপরই বিদো্রহী গোষ্ঠী ও জান্তা বাহিনীর সদস্যদের লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন> নির্বাচন নিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার
স্থানীয় মনিটরিং গ্রুপগুলো বলছে, মিয়ানমারে সেনা অভূত্থানের পর সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করারও অভিযোগ ওঠে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন দেশটির সেনাদের নির্যাতনে। শুধু তাই নয়, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের অর্থনীতি।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
এসএএইচ