আইন-আদালত

চট্টগ্রামের ৫ জেলার পাহাড়ের তালিকা ও অবস্থা জানতে চান হাইকোর্ট

চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলার সব পাহাড়ের তালিকা (দাগ ও খতিয়ানসহ) এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।

Advertisement

একই সঙ্গে এরই মধ্যে কাটা হয়েছে এমন পাহাড়গুলোতে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ এবং দেয়াল দিয়ে সেসব পাহাড় সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আগামী তিন মাসের মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

Advertisement

আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার সঙ্গে থাকা আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ চট্টগ্রাম বিভাগে (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি) অবস্থিত সব পাহাড় কাটা বন্ধে ২০১১ সালে জনস্বার্থে রিট করে বেলা। এর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন।

তখন আদালত এসব জেলায় পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই এলাকায় পাহাড় কেটে কোনো আবাসন প্রকল্প বা ইটভাটা স্থাপন করা হয়ে থাকলে তা ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বন উজাড় বন্ধ ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

বেলা জানায়, আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড় (গরিবুল্লাহশাহ হাউজিংয়ের মুখে), ষোলশহর, শেরশাহ, আরেফিননগর, আকবরশাহ, ফিরোজশাহ এবং উপজেলার মধ্যে সীতাকুণ্ড, বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন, সাতকানিয়ার লোহাগাড়া এলাকার পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা ট্রাংক রোডের ফৌজদারহাট অংশ থেকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ১৮টি পাহাড় কেটে প্রায় ছয় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়।

Advertisement

কক্সবাজার জেলার ঈদগাহ, ইসলামপুর, পিএমখালী, খুরুশকুল, বাদশাগোনা, বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, ফাতেরঘোনা, সাহিত্যকা পল্লি ও কলাতলী ও রামু উপজেলার উখিয়ারঘোনা, জোয়ারিয়ানালা এবং উখিয়া উপজেলায় নির্বিচার চলছে পাহাড় কাটা। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে যেসব স্থানে পাহাড় কাটা চলছে এরমধ্যে রাঙ্গামাটি উপজেলার কাউখালী, নামিয়ারচর, লংগদু, রাজস্থালি, বাঘাইছড়ি ও কাপ্তাই, বান্দরবানের লামা ও ফাইতং এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, রামগড়, পানছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, সাজেক ও মহালছড়ি উল্লেখযোগ্য।

এসব জেলায় পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে মহাসড়ক, রেললাইন, আবাসন। এছাড়াও চলছে শিল্পকারখানার সম্প্রসারণ ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বিভাগে পাহাড় কাটা বন্ধে আদালতের রায় বাস্তবায়ন চেয়ে প্রায় এক যুগ আগে ওই রিট আবেদন করে বেলা।

আইনজীবী এস হাসানুল বান্না জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের ওই পাঁচ জেলায় বিদ্যমান পাহাড়গুলো ক্ষতি, ধ্বংস ও কাটা থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে, পাহাড় ও টিলা কাটার বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রতিপালন করতে এবং প্রতিটি পাহাড় প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে এরই মধ্যে কাটা হয়েছে এমন পাহাড়ে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ এবং দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রিটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব; ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, সিডিএ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; উল্লিখিত পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার; চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালককে বিবাদী করা হয়।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস