ঢাকাবাসীকে বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি জানাতে হবে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
সংশ্লিষ্ট রিটের শুনানিতে হাইকোর্টকে জানানো হয় গত কয়েকদিন ধরে বায়ুদূষণে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এসময় আদালত প্রশ্ন তুলে বলেন, পরিবেশ নষ্ট করে কি আপনারা আমাদের মেরে ফেলবেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করীম। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
আরও পড়ুন: নতুন বছরে একদিনও বিশুদ্ধ বাতাস পায়নি ঢাকাবাসী
ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে মৌখিকভাবে এই আদেশ দিলেন আদালত।
আদালত বলেন, আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলবেন নাকি। নির্দেশনা বাস্তবায়নে বার বার আপনাদের ডাকতে হয়। আমরা নিজেরাই লজ্জা পাচ্ছি। পরিবেশ দূষণ রোধে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা ৫ জানুয়ারি রোববার জানান।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সব পক্ষের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছেন।
Advertisement
ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের যে ৯ দফা নির্দেশনা রয়েছে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন কয়েক দিন ধরে রিপোর্ট হচ্ছে- বিশ্বের সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ শহর হচ্ছে ঢাকা। বায়ুদূষণে ঢাকার এই অবস্থান ধারাবাহিক হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। যেটা দিল্লীতেও করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এখানে কারো কোনো খবর নাই। এখন পর্যন্ত ঢাকা শহর বায়ুদূষণে এক নম্বরে আছে, অথচ কেউ কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত এ বিষয়ে বলে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: শিশুদের শরীর-মনে প্রভাব ফেলছে বায়ুদূষণ, বাড়ছে রোগবালাই
এর আগে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এই নয় দফা নির্দেশনা হলো-
১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহণ করতে হবে।
২. যে সব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গার কনট্রাকটররা তা ঢেকে রাখবে।
৩. এছাড়া ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণ এবং যেসব কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে, যেসব কাজ যেন আইন-কানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. যে যানবাহন কালো ধোয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে হবে।
৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দিতে হবে।
৭. যেসব উটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
৮.পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধের করতে হবে।
৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে বাংলাদেশে বছরে মারা যায় ৮০ হাজার মানুষ: বিশ্বব্যাংক
এর আগে ‘বছরে ৩১৭ দিন মারাত্মক দূষিত থাকে ঢাকার বায়ু’ শিরোনামে ৩০ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, দূষণের মাত্রা বিবেচনায় বছরের বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকে ঢাকার বাতাস। মাঝেমধ্যে এটা ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে গিয়েও ঠেকে। বিশেষত শীতকালে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি থাকে সবচেয়ে খারাপ। ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সময় ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকছে।
এইচআরপিবি’র করা এক রিটের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সে সময় আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করীম, উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী তৌফিক ইনাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমিন।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণ যেসব কঠিন রোগের কারণ
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদলতের ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হলে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বায়ুদূষণ কিছুটা কমতে থাকে। কিন্তু ঢাকা শহর আবার সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের শহর বলে গণমাধ্যমে আসে। তাই গণমাধ্যমের খবর যুক্ত করে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আবেদনটি করা হয়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের যে বর্ণনা আছে, তা সবার জন্য উদ্বেগজনক।
এফএইচ/জেডএইচ/জেআইএম