দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রলীগের দুই নেতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।
Advertisement
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিরসনে দুইপক্ষকে নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রাধ্যক্ষ।
আলোচনার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা উত্তেজিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনা সামাল দিতে এগিয়ে যান নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত। এসময় তাকে ‘তুই’ সম্বোধন করে মারতে তেড়ে যান শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী। এসময় অন্য শিক্ষকরা শান্ত করার চেষ্টা করলে তাদের দিকেও তেড়ে যান ওই ছাত্রলীগ নেতারা।
এসময় কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজী, একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত আহমেদও শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেনস্তার শিকার সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, এখানে আমরা প্রক্টরিয়াল টিম দায়িত্ব পালনকালে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। দুইপক্ষের উত্তেজনা থামাতে গেলে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, সহকারী প্রক্টর হিসেবে যেকোনো জায়গাতে ভূমিকা রাখার জন্য তার ধমক দেওয়াটাই স্বাভাবিক। এটাতে তার রাইট ছিল। তবে পোলাপান বুঝতে না পেরে চিৎকার-চেঁচামেচি করেছে। মারতে যাওয়ার কথা ভিত্তিহীন। তারপরেও যারা স্যারের সঙ্গে উচ্চবাক্য করেছে আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে দিয়ে সারে কাছে ক্ষমা চাওয়ার ব্যবস্থা করবো।
শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমি এরকম কিছুই করিনি। স্যার আমাদের দুইপক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। সেখানে অনেকেই ধাক্কাধাক্কি ও আওয়াজ করছিল। স্যার হয়তো ভুল বুঝেছে তাই অভিযোগ করেছে। স্যারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো।
অভিযুক্ত আরেকজন সালমান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগ্রেসিভ মুডে স্যারের সঙ্গে কথা বলা যাবে না? আমি যদি বলি, স্যার আমাদের মারতে আসছেন? সবকিছু পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আর স্যার যদি বলে থাকেন আমরা তাকে মারতে গিয়েছি এটা ওনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
Advertisement
হল প্রাধ্যক্ষ মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, আজকের ঘটনা আসলেই দুঃখজনক। আমরা আগামীকাল সব হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিলে বসবো। তারপর আমরা তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো। আর অছাত্র কেউ হলে থাকার কোনো সুযোগ নেই। যারা হলে থাকবে তাদের প্রত্যেককে ছাত্র এবং এলটেড হতে হবে।
প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনা আমাদের সবার সামনেই ঘটেছে। অনেক ভিডিও রয়েছে। আমরা তথ্য-প্রমাণ সব যাচাই করে ঘটনায় কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবো।
জাহিদ পাটোয়ারী/এমআরআর/জিকেএস