পাবনার চাটমোহর উপজেলার বরদানগর বাজারে গুমানী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। নদীর দুই পাড়ে অবস্থিত নিমাইচড়া ইউনিয়ন ও ছাইকোলা ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ গ্রীষ্ম মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে ডিঙি নৌকায় চলাচল করেন।
Advertisement
জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলার গুমানী নদীর পাশে নিমাইচড়া ইউনিয়নের বরদানগর গ্রাম ও একটি বাজার রয়েছে। নদীর আশপাশে রয়েছে নিমাইচড়া ইউনিয়ন ও ছাইকোলা ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া, মামাখালি, বিন্নাবাড়ী, ছাইকোলা, কাটেঙ্গা, কুকড়াগাড়ি, ধানকুনিয়া, চরনবীণ, বনমালী নগর, চিনাভাতকুর, বহরমপুর, করিমপুর, গৌর নগর, নিমাইচড়া গ্রাম। এসব গ্রামে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। সেতুর অভাবে নদীপাড়ের মানুষ বর্ষায় নৌকা এবং খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর পূর্বপাড়ে রয়েছে বরদানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরদানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বরদানগর দাখিল মাদরাসা, বরদানগর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বাজার এবং আর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, হাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
বর্ষাকালে নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব গ্রামের বাসিন্দাদের হাট-বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা সদরে আসার জন্য দীর্ঘসময় খেয়া নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চেপে শিক্ষার্থীদের নদী পারাপার হতে হয়। চাষিরা ফসল ঘরে তুলতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তাদের খরচ বেশি হচ্ছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। ফসল বাজারে নেওয়ার সময়ও চরম কষ্ট করতে হয় চাষিদের।
Advertisement
দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী বরদানগর বাজারে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
চাটমোহর উপজেলার বরদানগর গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বুঝার বয়েস হওয়ার পরের থেনে দেখতিছি এহেনে বিরিজ (ব্রিজ) নাই। নৌকায় পার অওয়া লাগে। হাট-বাজার, হাসপাতালে আসা-যাওয়া সব কামে কষ্ট অয়। ছাওয়ালপাল স্কুলে যাবের লাগলিও ভয় করে। মাঝে মদ্যি নদীত পইড়ে যায়। এভাবে আর কতদিন চলা লাগবি কিডা জানে! চিয়েরমেন-মেম্বাররা ভোট আসলি কয় বিরিজ (ব্রিজ) করবি, কিন্তুক পরে আর হয় না। আমারে কষ্ট দেহার মানুষ নাই।’
নদীপাড়ে অবস্থিত বরদানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন, শরিফুল ইসলাম, আ. রাজ্জাক তাদের চলাচলে দুর্ভোগের কথা জানিয়েছে। তারা জানায়, সেতু না থাকায় বর্ষাকালে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়।
বরদানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, নদীর ওপর একটি সেতু খুব প্রয়োজন। সেতু না থাকায় আমাদের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। প্রায় দুই বছর আগে এলজিইডি বিভাগ এখান থেকে মাটি পরীক্ষা করে নিয়ে গেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ব্রিজটি নির্মাণ হলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসা-যাওয়া সহজ হবে। এছাড়া দুই ইউনিয়নের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ গড়ে উঠে এলাকায় উন্নয়ন বেগবান হবে।
Advertisement
নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক নূরজাহান বেগম মুক্তি বলেন, এলাকাবাসীর স্বার্থে ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন অফিসে তদবির করেছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া এখনো কিছুই পাইনি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সেতু নির্মাণ হলে এলাকার পিছিয়ে পড়া জনসাধারণের জীবনমানেরও উন্নতি হবে।
স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, তিনি এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দিয়েছেন। এরইমধ্যে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে সেখানে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এমআরআর/জেআইএম