ধৃমল দত্ত, কলকাতা
Advertisement
বেআইনিভাবে ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রয়েছেন অমর্ত্য সেন- এমন অভিযোগে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) জমি ফেরত চেয়ে নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনার তিনদিনের মাথায় আরেকটি চিঠি পাঠিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে অমর্ত্য সেনকে।
রোববারের (২৯ জানুয়ারি) চিঠিতে বলা হয়, আপনি (অমর্ত্য সেন) ওই জমি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বভারতীকে ফিরিয়ে দিন। না হলে দেশের আইন আপনাকে ও আপনার ভালোবাসার বিশ্বভারতী, দুপক্ষকেই বিড়ম্বনায় ফেলবে। আপনি জানেন, অবৈধভাবে দখল করে রাখা জমি পুনরুদ্ধারের নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।
আরও পড়ুন> বিশ্বভারতীর জমি দখলের অভিযোগে অমর্ত্য সেনকে চিঠি
Advertisement
এদিকে, জমি নিয়ে দুপক্ষের বিবাদের মধ্যেই শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’তে দেখা করতে যান পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এ সময় মুখ্যমন্ত্রী অমর্ত্য সেনের হাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে থাকা ওই জমিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র তুলে দেন। সেখানে বসেই অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা ব্যানার্জী।
বিষয়টি নিয়ে একটি মহল সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে দাবি করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জমির সব রেকর্ড সঙ্গে নিয়ে এসেছি, যা আসল নথিপত্র। অনেক দিন ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে সার্ভে করিয়েছি। একজন মানুষকে বহুদিন ধরে অসম্মান করা হচ্ছে। অনেক সহ্য করেছি, আর নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেবো।
পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জী প্রতীচীতে বসেই রাজ্য পুলিশির ডিজি মনোজ মাল্যকে অমর্ত্য সেনের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা বলয় ‘জেড প্লাস’র ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন> অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে আবারও বিশ্বভারতীর চিঠি
Advertisement
পরে মমতা বলেন, বিজেপি যেন ভবিষ্যতে স্যারকে অসম্মান না করে। জমির রেকর্ড দেখভাল করে রাজ্য সরকার। বিশ্বভারতীর জমি আমরাই দিয়েছি। রাজ্য সরকার অতীতেও বিশ্বভারতীকে জমি দিয়েছে। সেই জমি লিজে দেওয়া হয়েছে, না কি পুরোপুরি দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে জমিসংক্রান্ত এ বিতর্ক প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি আদালতে যাচ্ছি না। তবে তা জমি হাতছাড়া হয়ে যাবে, সে ভয়ে নয়। বিশ্বভারতীর উপাচার্য যদি এমনটা ভেবে থাকেন, তাহলে তার চিন্তাশক্তি নিয়ে আমাদের ভাববার কারণ আছে। ‘উপাচার্য যদি মাথা খাটিয়ে নতুন তথ্য বের করে থাকেন, তাহলে সেটি কোথা থেকে এলো সে জবাব তাকেই দিতে হবে।
তবে বিশ্বভারতীর পাঠানো নতুন চিঠির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি বিশ্বখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ। তবে জমি নিয়ে বিশ্বভারতী উপাচার্যের ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে এদিন হাসির ছলে তিনি বলেন, উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে আমিও তো বলতে পারি, এটা তার নয়। এখানে আমার ছোট মামা থাকতেন।
আরও পড়ুন> ভারতের পতাকায় শরীর ঢেকে দেশ লুট করছেন আদানি
এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, জমি দখল পুরনো বিষয়। আমাদের অভিযোগ, দলিলে তাকে স্পষ্ট ১ দশমিক ২৫ একর জমি দেওয়ার কথা লেখা আছে। কিন্তু তিনি নথিভুক্ত করেছেন ১ দশমিক ৩৮ একর জমি। অর্থাৎ ১৩ ডেসিমেল জমি তিনি দখল করেছেন।
এ বিষয়ে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য, যখন জমি কেনা হয়েছিল, তখন জমির পুরোটা বাড়ি করা কিংবা অন্যান্য কাজে লাগাইনি। তাছাড়া লিজ়ের বাইরেও বাবা বেশকিছু পরিমাণ জমি কিনেছিলেন। তারপরে বাড়ি তৈরি হয়। আমাদের যতটুকু জমি ছিল, তার বাইরে থেকে অতিরিক্ত জমি নেওয়ার কোনো কারণ ছিল না, এখনও নেই।
অমর্ত্য সেন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হলেও উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষা করা নিজের কর্তব্য বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এর আগে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বলেছিলেন, পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসা, সাহিত্য, রসায়ন ও বিশ্বশান্তি- এ পাঁচ বিষয়ের বাইরে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয় না। সুতরাং অমরত্য সেন নোবেল পুরস্কার পাননি।
আরও পড়ুন> অমর্ত্য সেন নোবেল পাননি, দাবি বিশ্বভারতীর উপাচার্যের
এসএএইচ