মেট্রোরেলে মিলছে না প্রত্যাশিত সংখ্যক যাত্রী। উদ্বোধনের পর প্রথম কদিন যাত্রীচাপ ছিল আশাব্যঞ্জক। মাস না পেরোতেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মগুলো দিনের বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকছে। সরেজমিনে রোববার (২৯ জানুয়ারি) আগারগাঁও, পল্লবী ও উত্তরা উত্তরা স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
Advertisement
সাধারণত ব্যস্ততম নগরী ঢাকায় সরকারি ছুটির দিনে গণপরিবহনে ভিড় কিছুটা কম থাকে। কিন্তু মেট্রোরেলে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। শুক্র ও শনিবার মেট্রোরেলে যাত্রীদের ভিড় বাড়ে। তবে এই যাত্রীদের বেশিরভাগই বিনোদনপ্রেমী। অথচ সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন সরকারি অফিস খোলা থাকলেও মেট্রোরেলে থাকে যাত্রীসংকট। অধিকাংশ কোচ থাকে যাত্রীশূন্য।
সকালে আগারগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন স্টেশন ছাড়ছে। তবে যাত্রীসংখ্যা খুবই কম। এমনকি টিকিট কাউন্টারগুলো বেশ ফাঁকা।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন। ওইদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দুইশোর বেশি সঙ্গী নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করেন সরকারপ্রধান। পরদিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
Advertisement
রোববার আগারগাঁও স্টেশনে দায়িত্বরত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, শুক্র ও শনিবার অনেক ভিড় থাকে। অন্য দিনগুলোতে সে তুলনায় ভিড় থাকে কম। মানুষ মূলত বিনোদন নিতে আসেন। ঢাকায় মানুষের বিনোদনের জায়গা কোথায়? এজন্য ছুটির দিনে অনেক বিনোদনপ্রেমী মেট্রোরেল চড়তে আসেন।
আগারগাঁও স্টেশনে এক স্কাউট কর্মী বলেন, হঠাৎ করে বন্ধের দিনগুলোতে চাপ থাকে। তবে অন্য দিনগুলোতে অনেকটাই রিলাক্স।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নানা কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী মিলছে না মেট্রোরেলে। এরমধ্যে অন্যতম টাইম শিডিউল, মাত্র তিনটি স্টেশন চালু রাখা, কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত রুট না পৌঁছানো, মতিঝিল-উত্তরা পর্যন্ত চালু না হওয়া, আবাসিক এলাকা থেকে আবাসিক এলাকা পর্যন্ত চালু করা। এসব বিষয়কেই যাত্রীখরার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মেট্রোরেলে যাত্রী কম হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, ঢাকার মেট্রোরেল ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরামর্শক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক জাগো নিউজকে বলেন, মেট্রোরেলে যাত্রী কম হচ্ছে, এটা সাময়িক। মানুষ যেখানে কাজ বা চাকরি করে সে পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট চালু হয়নি। আগারগাঁও আবাসিক এলাকা। মিরপুর, উত্তরা ও পল্লবী এলাকাও আবাসিক। পিক টাইমে মেট্রোরেলের যাত্রী সবসময় বেশি। এছাড়া মানুষের বেশিরভাগ গন্তব্য কিন্তু ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিল এলাকায়। এখন অনেকে শখের বশে মেট্রোরেলে চড়ছেন। তবে পুরো রুট চালু হলে কর্মজীবী যাত্রীদের চাপ অনেক বাড়বে।
Advertisement
তিনি বলেন, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, পল্টন ও মতিঝিল ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা। এসব এলাকায় সবসময়ই মানুষের চাপ থাকে। মেট্রোরেল ফুল টাইম চলাচল শুরু হলে যাত্রীচাপ বাড়বে, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এখনো মেট্রোরেল সেই অর্থে বাণিজ্যিক বলা সমীচীন হবে না। মানুষ সবেমাত্র প্রথম প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেলে চড়া শুরু করেছেন। সময়ের একটা ব্যাপারও থাকে।
ড. শামসুল হক বলেন, এখন যখন মন চায় মেট্রোরেলে চড়া যায় না। প্রয়োজনের তুলনায় মেট্রোরেলের স্টেশনও চালু হয়েছে কম। আমি থাকি মিরপুর ১০ নম্বরে, আমি কিন্তু আগারগাঁও থেকে পল্লবী নামবো না। সেক্ষেত্রে আবারও পল্লবী থেকে আমাকে কষ্ট করে মিরপুর ১০ নম্বরে আসতে হবে। পুরো রুট ও সব স্টেশন চালু হলে যাত্রীর সংখ্যাও অনেকে বাড়বে।
তিনি মনে করেন, মেট্রোরেল এখনো অফিস-আদালতের শিডিউলের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। ফলে অনেকে প্রমোদভ্রমণ বা আবেগের জায়গা থেকে মেট্রোরেলে চড়ছেন। পুরো রুট রান করলে প্রকৃত চিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠবে।
শুক্রবার ও শনিবার যাত্রী বেশি হওয়া প্রসঙ্গে মেট্রোরেলের এ পরামর্শক বলেন, ঢাকায় প্রথমবারে মতো মেট্রোরেল চলছে। ফলে অনেকে কৌতুহলের বশে প্রথম প্রথম মেট্রোরেলে চড়তে আসছেন। এক্ষেত্রে ছুটির দিনগুলোই তাদের জন্য বেস্ট। এছাড়া ঢাকায় পাবলিক স্পেস খুবই কম। সে কারণেও অনেকে একটু মুক্ত পরিবেশে সময় কাটাতে মেট্রোরেলকে বেছে নিচ্ছেন।
এমওএস/এমকেআর/জিকেএস