ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিষদ নিজেদের নাগরিকদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বহনের আইনটি আরও সহজ করার অনুমোদন দিয়েছে। গত দুদিনে জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের পৃথক দুটি হামলার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আহ্বানে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
নতুন পদক্ষেপের মধ্যে হামলাকারীর পরিবারের সদস্যদের জেরুজালেমে বসবাস ও সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার তুলে নেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। রোববার (২৯ জানুয়ারি) পূর্ণ মন্ত্রিসভা নতুন উপস্থাপিত ব্যবস্থাগুলো বিবেচনা করবে বলে জানা যায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমি বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুক্র ও শনিবার ফিলিস্তিনের অধিকৃত জেরুজালেমে পৃথক দুটি হামলার ঘটনার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে কঠোর জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন> পূর্ব জেরুজালেমে বন্দুক হামলা, নিহত ৭
Advertisement
মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সম্পর্কিত বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে সেনাসংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক হলোকাস্ট স্মরণ দিবসে সাবাথের প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার জন্য ইহুদি ধর্মানুরাগীরা জেরুজালেমের একটি সিনাগগে উপস্থিত হন। রাত সোয়া ৮টার দিকে প্রার্থনাকারীরা যখন সিনাগগটি থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, তখন এক বন্দুকধারী সেখানে উপস্থিত হয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ওই বন্দুকধারী নিহত হন।
পরে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ওল্ড সিটির পাশ্ববর্তী শহর সিলওয়ানে আরেকটি হামলায় দুই ইসরায়েলি ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। এ হামলায় জড়িত সন্দেহে ১৩ বছরের এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে আটক করে পুলিশ।
আরও পড়ুন> জেরুজালেমে ১৩ বছরের বালকের গুলিতে দুই ইসরায়েলি আহত
Advertisement
ইসরায়েলি পুলিশ জানায়, শনিবার পাঁচ ইহুদি প্রার্থনার জন্য সিনাগগ যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক কিশোর তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে এক বাবা ও তার ছেলে গুরুতর আহত হন। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত শুক্রবারের হামলার ঘটনায় পুলিশ ৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এ হামলার প্রশংসা করেছে। তবে তাদের কোনোটিই হামলাকারীদের নিজেদের সদস্য বলে দাবি করেনি।
এরপরই সরব হন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি ইসরায়েলিদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের কাজ সম্পাদন করার জন্য নাগরিকদের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
নেতানিয়াহু বলেন, আমি আবারও সব ইসরায়েলিকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। এসময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতাকে ইসরায়েলকে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
মূলত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বাড়ে। পরে গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়। জবাবে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
আরও পড়ুন> পশ্চিম তীরে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী
চলতি মাসের শুরু থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে যোদ্ধাদের পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকরাও রয়েছেন। এদিকে, জেনিনে গত বৃহস্পতিবারের অভিযানে ৯ জন নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থগিত করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
গাজায় হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম রয়টার্সকে বলেন, শুক্রবারের এ হামলা ছিল ইসরায়েলি দখলদারদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কারণ এর আগে দখলদাররা জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায়।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ও প্রাচীন এ শহরের পুরোটাকেই নিজেদের রাজধানী দাবি করতে থাকে। যদিও ইসরায়েলের এ দাবিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজধানী হিসেবে মনে করেন।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ