দেশজুড়ে

মাসহ ২৬ বছর ঝুপড়ি ঘরে ষাটোর্ধ্ব মিরা, পেতে চান একটি উপহারের ঘর

সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা মিরা রায় (৬৫)। ৮৫ বছর বয়সী মা সুধারানী চক্রবর্তীকে (৮৫) নিয়ে ভাড়ায় ঝুপড়ি ঘরে বাস করছেন তিনি। একবার সরকারি ঘরের তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছিলেন। কিন্তু নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় সেই নাম আবার কাটাও পড়েছে। সেই থেকে সরকারি একটি ঘরের জন্য বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মিরা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ী পাংশার নারায়নপুরের বাসিন্দা ছিলেন মিরা রায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে ১৯৯৭ সালে পালিয়ে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শোমসপুর গ্রামে আশ্রয় নেন তারা। সেই থেকে অন্যের ঝুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকেন।

স্বামী সুবল রায়ের মৃত্যুর পর তাদের মানবেতর জীবন শুরু হয়। মিরা আনসার ভিডিপির সদস্য ছিলেন। ১০ বছর চাকরিও করেছেন। এখন চোখে ভালো দেখেন না তিনি। তার মার সুধারানী চক্রবর্তী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। এরপরও ভিক্ষাবৃত্তি করে মায়ের ওষুধ আর খাবারের জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সন্তানহীন মিরাকে।

আরও পড়ুন: সংকটাপন্ন শিক্ষক ওবায়েদ, চিকিৎসায় প্রয়োজন ৩৫ লাখ টাকা

Advertisement

অন্যদিকে প্রতিমাসে ঘর ভাড়া গুনতে হয় এক হাজার টাকা। পান থেকে চুন খসলেই ঘর মালিকের গালমন্দ শুনতে হয় তাকে।

মুজিববর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিতরণের ঘোষণার পর থেকে আশায় বুক বেঁধেছেন মিরা ও তার মা। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় প্রথম দিকের তালিকায় তার নাম এসেছিল। কিন্তু নিজের নামে জমি না থাকায় তালিকা থেকে বাদ পড়েন।

২৬ জানুয়ারি সকালে মিরা রায়ের বাড়ি গেলে ঝুপড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তার মসা সুধা রানী চক্রবর্তী। তিনি জানান, তাদের নিজের ঘর ছিল। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তাদের সর্বহারা করেছে। তারা এ সরকারের কাছে একটি ঘর দাবি করেন। যেখানে আপাতত শান্তিতে মরতে পারবেন।

উপজেলা সদর ইউনিয়ন বাজারে বৃদ্ধা মিরার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ী পাংশার নারায়নপুরে আমাদের সব ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সর্বস্বান্ত করেছে। প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর সময় নিজের ঠিকানা থাকা উচিত। কিন্তু আমার কোনো ঠিকানা নাই। নিজের ঘর না থাকায় প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় পূজা অর্চনা করতে পারি না। ঘরে সন্ধ্যা বাতি দিতে পারি না। সরকারের কাছে আমাদের শুধু মাত্র একটি ঘরের দাবি।’

Advertisement

আরও পড়ুন: স্বপ্ন ছুঁতে চান পাখি, প্রয়োজন একটি কম্পিউটার

তিনি আরও বলেন, ‘টাকা পয়সা না থাকায় ২২ বছর ঝুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকছি। উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়াম্যানসহ চারবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। একবার তালিকায় নাম ছিল। কিন্তু জমি না থাকায় বাদ দেওয়া হয়। তবে বর্তমান কর্মকর্তারা আগামীতে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

শোমসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, এ উপজেলায় সর্ব প্রথম ঘরের দাবিদার মিরা। আমি ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু কী কারণে বৃদ্ধা ঘর পাচ্ছেন না, তা আমার বোধগম্য নয়।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান পুনম জাগো নিউজকে বলেন, বৃদ্ধাকে জমিসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কর্মকর্তারা কথা দিয়েছেন, আগামী কিস্তিতে তার নামে ঘর বরাদ্দ হতে পারে।

আরও পড়ুন: গোলাম রাব্বানীর কাছ থেকে হুইল চেয়ার পেয়ে কেঁদে ফেললেন আমির হোসেন

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, অনেকেই ঘরের সমস্যা নিয়ে আসেন। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

এসজে/জেআইএম