নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার জিল বাংলা সুগার মিলের আখ মাড়াই। তবে উপজেলার একাধিক জমিতে এখনো আখ দৃশ্যমান।
Advertisement
চাষিরা বলছেন, চিনিকলের চেয়ে গুড় তৈরির কারখানায় আখ বিক্রি করলে তাদের লাভ বেশি হয়। তাই তারা চিনিকলের বদলে আখ দিচ্ছেন গুড় তৈরির কারখানায়।
আরও পড়ুন: আখের দাম পরিশোধে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলো বিএসএফআইসি
কারখানা সূত্র জানায়, গত বছরের ২ ডিসেম্বর এ মৌসুমের আখমাড়াই শুরু হয়। মৌসুমে ৬৮ হাজার টন আখমাড়াইয়ে ৪ হাজার ৭৬০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এ মৌসুমে ৬০ দিন আখমাড়াইয়ের কথা ছিল। কিন্তু ৪১ দিন আখমাড়াইয়ের পর ১২ জানুয়ারি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ৩৫ হাজার ১৭১ টন আখমাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩২২ টন।
Advertisement
এদিকে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও মাঠে এখনো আখ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেওয়ানগঞ্জের মাইছানীরচর, চরকালিকাপুর, তারাটিয়া, কলকিহারা, বকশীগঞ্জের মেরুরচর, ইসলামপুরের গোয়ালেরচর ও গঙ্গাপাড়া এলাকার মাঠে আখ কাটছেন কৃষকরা। এসব আখ ভটভটিতে উঠিয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গুড় তৈরির কারখানায় নিয়ে যাচ্ছেন এবং গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন: ৬৬ কোটি টাকা লোকসান নিয়ে জয়পুরহাট চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু
চাষিদের দাবি, আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল। প্রায় দেড় বছর পর ফসল ঘরে আসে। এ সময়ের মধ্যে অন্য ফসল আসে তিনবার। অথচ সুগার মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে দাম পান তা অনেক কম। এছাড়া আখের দাম পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষের ধীরগতি এবং নানা প্রক্রিয়ায় টাকা দেওয়ার বিষয়ে তারা বিরক্ত। সারাবছর আখচাষ করে নিজের টাকায় গাড়িভাড়া দিয়ে মিলে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু মোবাইলে টাকা আসে অনেক পরে। ধার-দেনা করে মিলে আখ দিয়ে টাকার জন্য বসে থাকতে হয়।
অন্যদিকে গুড় উৎপাদনকারীরা দ্বিগুণ মূল্যে অগ্রিম টাকা দিয়ে আখ কিনে নেন। আখের ওজনেও তারা লাভবান হন।
Advertisement
স্থানীয় আখ চাষি সবুর, আসলাম, ফরিদসহ আরও অনেকে বলেন, চিনিকলে ৪০ মণ আখ বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এরমধ্যে আবার গাড়ি ভাড়া খরচও তাদের বহন করতে হয়। কিন্তু গুড়ের কারখানায় বিক্রি করলে ১১ হাজার-১২ হাজার টাকা পান। তাই তারা আর সুগার মিলে আখ দিতে আগ্রহী নন। তাদের মতো আরও অনেকে এ কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: কষ্টের আখ এখন কৃষকের বোঝা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল কর্মকর্তা জানান, বেশি দাম পেয়ে চাষিরা আখ মিলে না দিয়ে গুড় তৈরির কলে দিচ্ছেন। কিন্তু তারা তাদের বাঁধাও দিতে পারছেন না। আখের দাম না বাড়ালে চাষিদের মিলমুখী করা যাবে না।
জিল বাংলা সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আখ সংকটে নির্ধারিত সময়ের আগেই এ মৌসুমের আখমাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে যে পরিমাণ আখ এখনো মাঠে আছে, তা সরবরাহ করা হলে আরও ১০ দিনের বেশি মাড়াই করা সম্ভব। কিন্তু কৃষকরা উৎপাদিত আখ মিলে সরবরাহ না করে বেশি লাভের আশায় স্থানীয় গুড় তৈরির কারখানায় বিক্রি করছেন।
জিল বাংলা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, চাষিরা এ মৌসুমে সব আখ মিলে সরবরাহ না করে অবৈধভাবে গুড়ের মিলে সরবরাহ করছেন। এতে মিলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা দাবি করেছেন আখের মূল্য বৃদ্ধির। দামের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
দেশের ১৬টি চিনিকলের মধ্যে জিল বাংলা সুগার মিল উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত জেলা জামালপুরের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অধীনে মিলটি পরিচালিত হচ্ছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে মাড়াই কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড সরকারের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় পাকিস্তান সরকার মিলটি স্থাপন করে। শুরুতে এর নাম ছিল জিল পাক সুগার মিলস লিমিটেড। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে জিল বাংলা সুগার মিলস করা হয়।
এসজে/এমএস