মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
Advertisement
শখের বশে মানুষ কত কিছুই না করে। আর শখ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়েই যায়। তাহলে মন্দ কী? শখের বাগান থেকেই দারুণ কিছু করেছেন তিনি। ঘরে বসে গাছের ব্যবসা করে আয় করছেন ভালোই। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমানভাবে। ঘরে বসে শখ থেকে যদি আয় রোজগার হয় তাতে ক্ষতি কী! ফেরদৌসী লোমাত জাহান রুম্পা এমনটাই মনে করেন। অনলাইনে গাছ বিক্রি করেন। বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া তার শেষের দিকে। সৌখিন গাছপ্রেমীদের কাছে তিনি এখন পরিচিত নাম।
মা বাগান করতেন। নানুবাড়ির উঠানে ছিল নানা রকম গাছ। এসব তাকে বাগান করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ফেসবুক কেন্দ্রিক গাছের গ্রুপগুলোর নানা রকম ইভেন্ট হয়। রুম্পা নিয়মিত অংশ নেন এসব ইভেন্টে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ১৫-১৬ রকমের জবা-গোলাপ, ইনডোর প্ল্যান্ট, জলজ প্ল্যান্ট, সাকুলেন্ট এবং কয়েক রকম ক্যাকটাস সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ইট পাথরের শহরে জায়গার বড় অভাব। তাই সেভাবে বাগান বড় করা সম্ভব হয়নি। বাগান করতে গিয়ে দেখলেন, বিভিন্ন রকম ইনডোর প্ল্যান্ট ও ক্যাকটাসের প্রচুর চাহিদা আছে। মানুষ সুলভ মূল্যে গাছগুলো কিনতে চায়। উন্নতমানের গাছ মানুষ যাতে সহজে ঘরে বসে পেতে পারে, সে জন্য নিজেই গাছের ব্যবসায় নেমে পড়েন। ২০২১ সালে ‘এলকোভ’ নামে পেজে সেলার হিসেবে যুক্ত হন। তার পেজের নাম ‘লিফ-লাভ’।
আরও পড়ুন: শীতে টবের গাছের যত্ন নেবেন যেভাবে
Advertisement
রুম্পা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পূর্ব কাফরুলে বাবা, ছোটবোনসহ বসবাস করেন। ২০১৯ সালে তার মা মারা যান। অন্যের থেকে গাছ কিনে সেগুলো রুম্পা বিক্রি করেন। তিনি জানান, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করে বিভিন্ন রকম ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট, ইউফোরিয়া এবং সেন্সেভেরিয়া জাতের গাছ আনা হয়। কাঁটাযুক্ত হলেও রঙিন গাছগুলো মানুষের পছন্দের শীর্ষে। ক্যাকটাসের কাঁটার সৌন্দর্য ছাড়াও ফুল খুব সুন্দর। তাই চাহিদা অনেক। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ ছোট হওয়ায় টবে অল্প জায়গায় রাখা যায়। লিলিয়াম, অ্যামারিলিস লিলি, রানানকুলাস, জাফরান, টিউলিপ, কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবেনা, হেলিক্রিসাম, অ্যান্টিরিনাম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, অ্যাস্টার প্রয়োজন হলে রুম্পার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
বর্তমানে তার কাছে প্রায় ৭০-৮০ প্রজাতির ক্যাকটাস এবং অন্য জাতের গাছ আছে। গাছের মূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শুধু গাছ ও বাল্ব বিক্রি নয়। এগুলো কীভাবে লাগাতে হবে এবং কীভাবে যত্ন করতে হবে, সবই বুঝিয়ে দেন রুম্পা। তার থেকে গাছ নিয়ে যখন অন্যরা ভালো করেন। গাছে সুন্দর ফুল ফোটে। সে খবর জানতে পারলে রুম্পার খুব আনন্দ হয়। তিনি বলেন, ‘বীজ থেকে চারাগাছ হয়ে যখন ফুল ফোটে; তখন তারা আমাকে রিভিউ জানান। এতে কতটা প্রশান্তি আসে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমার কাজে অনুপ্রেরণা জাগে। তারা এ আনন্দ আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। ভীষণ এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়।’
আরও পড়ুন: একটুখানি সবুজের ছোঁয়া
অনলাইনে ঘরে বসে নারী ব্যবসা করতেই পারে। সে পরিবেশ, সুবিধা, সুযোগের কমতি নেই। অবসরটা হয়ে উঠতে পারে রঙিন। এ জন্য পরিবারের সমর্থন বেশি জরুরি। রুম্পা সেটি পেয়েছেন। তার বাবা এ কাজে তাকে উৎসাহ দেন। রুম্পা বলেন, ‘বাবা কখনো কোনো কাজে আমাকে বাধা দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। তিনি এ কাজকে সম্মান দেন। তিনি চান, আমি অন্য পেশার পাশাপাশি বাগান বিষয়ক কাজকে বরাবরের মতো যেন প্রাধান্য দিই।’
Advertisement
অন্য কাজের পাশাপাশি রুম্পার গাছের ব্যবসা। সে কারণে ফুল টাইম সময় দিতে পারেন না। তবুও তার মাসে গড়ে আয় ১৫-২৫ হাজার টাকা। আয়ের টাকার কিছু অংশ নিজের জন্য ব্যয় করেন। বাগানে বিনিয়োগও করেন। শুধু কি আয়। নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। শূন্য থেকে উঠে এসেছেন। এইবা কম কীসে। রুম্পা বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা শূন্য থেকে নিজের অবস্থান কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে পেরেছি।’ রুম্পা মনে করেন, সবুজই প্রাণের স্পন্দন। বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। আগামী প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে সবুজের প্রতি বোধোদয়ের জায়গাটা সজাগ করে তুলতে হবে। তবেই ভালো থাকবে আমাদের আগামী প্রজন্ম।
লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশন্স, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।
এসইউ/এএসএম