মোসা. নাইমা সুলতানা পাখি একজন খর্বাকৃতির মানুষ। বয়স ২২ বছর। উচ্চতা মাত্র ২৯ ইঞ্চি। ওজন ২০ কেজি। অভাব অনটনের সংসার তাদের। তবুও বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রতিনিয়ত করছেন জীবনযুদ্ধ। বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা। যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার শহরতলীর কানাইপুর ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের নাদের মাতুব্বর ও সাহিদা বেগম দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে পাখি সবার বড়। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন পাখি। বর্তমানে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অনার্স (বাংলা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নাদের মাতুব্বর একসময় পাট-ভুষামালের ব্যবসা করতেন। ১২ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন তিনি। একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না।
আরও পড়ুন: গোলাম রাব্বানীর কাছ থেকে হুইল চেয়ার পেয়ে কেঁদে ফেললেন আমির হোসেন
পাখির মেজো বোন আফসা আক্তার নার্সিংয়ের ছাত্রী, ছোট বোন সামিয়া সুলতানা নবম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারে আয় করার মতো কেউ নেই। বাবার জমানো কিছু টাকা আর কৃষি জমি বর্গা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের পরিবার।
Advertisement
পাখি বলেন, ‘বাবা অসুস্থ। সংসারে রোজগারের মতো কেউ নেই। পড়াশোনা তো দূরে থাক ঠিকমতো সংসারই তো চলে না। পদে পদে বাধা। এরপরও কষ্টের মধ্য দিয়ে পড়া চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষ ছোট হলেও আমার স্বপ্নটা বড়। চাই লেখাপড়া করে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে। বাবা-মা, বোনদের মুখে হাসি ফোটাতে। কারও করুণা কিংবা ভিক্ষা করে নয়, মাথা উঁচু করে বাঁচবো। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের দৃষ্টান্ত হতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিবার ছাড়াও দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমি হাল ছাড়বো না। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। কিন্তু সমাজের প্রতিবন্ধী হয়ে থাকতে চাই না। পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকটি টেকনিক্যাল কোর্সও করেছি। এখন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নিজের কোনো কম্পিউটার নেই। একসঙ্গে এত টাকা দিয়ে কম্পিউটার কেনা সম্ভব নয়। ফলে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।’
আরও পড়ুন: শিশু সাফীরের জন্য প্রয়োজন প্রায় দেড় কোটি টাকা
পাখির মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘদিন ঘরে পড়ে আছে। তিন মেয়ের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতে খুবই কষ্ট হয়। পাখির স্বপ্ন পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। বর্তমানে তার একটি কম্পিউটার খুব প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য নেই। মানুষের সাহায্য সহযোগিতাও পাই না। এ কারণে নিজেদের কাছে খুব খারাপ লাগে।’
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা ও সামাজিক সংগঠন ছায়ানীড়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইনামুল হাসান মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় আমরা সমাজের অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়াই। পাখি অদম্য মেধাবী ছাত্রী। তিনি সমাজের একজন অনুকরণীয়। আমাদের সাধ্য মতো তার পাশে থাকার চেষ্টা করি। এরপরও তার পাশে দাঁড়াতে সমাজের মানবিক ও বৃত্তবানদের আহ্বান জানাচ্ছি।
ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কাজী গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, পাখি অদম্য মেধাবী ছাত্রী। সে বাংলা বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সবার সহযোগিতা পেলে অনেক ভালো ফলাফল করবে।
আরও পড়ুন: বাঁচতে চান লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হৃদয়
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পাখির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। বাবা নাদের মাতুব্বর অসুস্থ হয়ে ঘরে শয্যাশায়ী। কিছু জমি বর্গা দেওয়া আছে। তা থেকে যা আসে তা দিয়েই কোনোমতে চলছে তাদের সংসার। বিভিন্ন সময়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করি।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জানা নেই। এরপরও যেহেতু জানতে পারলাম। তাদের বিষয়ে তথ্য নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যের চেষ্টা করবো।
এসজে/এমএস