সূর্য তখনো মাথার উপর থেকে নামেইনি। রোদে চারদিক খাঁ খাঁ করছে। জানালা ধরে দূরের পথে এখন স্পষ্ট মরীচিকা। আমি তখনো অফিসে না যাওয়ার ব্যস্ততাটা পোষাতেই পারিনি। এরই মাঝে ফোনের রিংটা খুব জোরে বেজে উঠলো।
Advertisement
বিরক্তিকর দুপুরে কাজের চাপে এমনিতেই হাঁসফাঁস, তার ওপর ফোনের রিং আরও বিরক্তিকর মনে হলো। এরপরও কবার বাজতেই রিসিভ করলাম কল। কথা বলতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল, ‘বাবার কাছে শুনেছি, অফিস নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকেন। আজও আছে ব্যস্ততা?’আমি তো যথারীতি থতমত খেয়েই বলে উঠলাম, ‘কে!’পরক্ষণেই মনে পড়ল, আজ যে কারণে অফিসে না যাওয়া; সে কারণেই এ কল।
মাসখানেক ধরে আব্বা চাপ দিয়ে যাচ্ছেন শফিক মামার মেয়ে অবন্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। মাস শেষ, সময়ের আর কূল পাই না। চাকরিতে বছর ছুঁইছুঁই। বিয়ে করে ঘরে নতুন সদস্য নিয়ে আসতেই আব্বার যত তাগাদা। সময়ের দৌড়ে পারা যায় না। কিন্তু আজকের দিনটা সময়কেই হারতে বাধ্য করবো ভেবে ছুটি নিয়েছি অফিস থেকে।
অবন্তীর কল পেয়ে মনে হলো, আজ আমাদের দেখা করার কথা। খুব সাদাসিধে লুকেই বের হচ্ছি। আমার বাসা পুরান ঢাকার তিন তলা একটি পুরাতন বাড়িতে। ওই যৎসামান্য যা-ই আয়-রোজগার হয়, এর চেয়ে খুব একটা ভালো বাসায় থাকার মুরোদ নেই। এটা সত্যি।
Advertisement
তড়িঘড়ি করে বেরোতেই জং ধরা গ্রিল থেকে সাদা পাঞ্জাবিতে মরিচা লেগে লাল দাগ পড়ে গেলো। তাতেই বাধলো বিপত্তি। এদিকে মোবাইল ফোনে রিং হচ্ছে, অবন্তীর কল ভেবে ধরছিই না। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে কল ধরতেই আরেকটা অচেনা গলা থেকে ভেসে এলো, ‘আই লাভিউ’।
ভ্রূ কুঁচকে ফোনটা পুনরায় পকেটে রেখেই বাসায় ঢুকে জামা পাল্টে আবার নেমে পড়লাম সদরঘাটের দিকে। খুব একটা জাঁকজমক অপছন্দ করলেও আজ কেমন মন উতলা হয়েই রাস্তা পাড়ি দিচ্ছি।
রিকশা থেকে নেমে তিনটা টুকটুকে গোলাপ টেপ দিয়ে বেঁধে নিলাম। ছোটখাটো একটি গুচ্ছ বানিয়ে পকেটে পুরেই ঢুকে পড়লাম অবন্তী বসা রেস্তোরাঁয়।
রেস্তোরাঁর শেষ বেঞ্চির কোনায় বসা অবন্তী। প্রথম দেখা। কিছু কিছু মেয়ের নামের সাথে চেহারার গঠনের দিব্যি মিল থাকে। অবন্তীর নামের সাথে ও চেহারার মিল আছে। বিধায় চিনতে আমার অসুবিধা হয়নি। কাছে যেতেই পুনরায় কানে বেজে উঠল, ‘আই লাভিউ।’‘অবন্তী?’ চোখ কচলাতে কচলাতে বললাম।‘হ্যাঁ, অবন্তী।’ পাশের বেঞ্চ থেকে জবাব এলো।
Advertisement
আমি পাশের বেঞ্চে তাকাতেই চোখ সরানোর শক্তি হারিয়ে ফেলছি। মেয়েটির মাঝে কেমন একটা ঐশ্বরিক সৌন্দর্য আছে। দেখলাম, একটা টিপ ও পরে এসেছে। কিছু চুল খোঁপার বাঁধনের অবাধ্য হয়েই নেমে এসেছে কানের শেষ সীমান্তে। না বললেও সে এসেছে শাড়ি পরে। মনে হচ্ছে, অবচেতন মনেই কল্পনা করে নিয়েছি তার কাচের চুড়ির একটি সুর আমাকে ক্রমেই হিপনোটাইজ করে ফেলছে। টের পেলাম, পাশের টেবিলে বসা অবন্তীর হাত থেকে আধ-গ্লাস পানি আমার চোখের দিকে এগিয়ে আসছে।
ধপ করেই খুলে গেলো চোখ। রাতে যে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছি, তা জোর করে টেনে সরিয়েই তিশা বলল, ‘অনেক তো হলো ঘুম, আর কত! ন’টা বাজে, সময় আছে অফিসের?’
এসইউ/