জাতীয়

১৪ এপ্রিল থেকে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু: ভূমিমন্ত্রী

আগামী পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু করা হবে এবং এর পর থেকে আর সরাসরি এলডি ট্যাক্স গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনের সপ্তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ভূমিমন্ত্রী।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধ ভূমি দখল ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে প্রস্তুত করা ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূমির অপ্রতূলতার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রথমবারের মতো অকৃষি জমিতেও সিলিং রাখার বিধান করেছে। প্রাথমিকভাবে ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন-এ ৪০ বিঘা সিলিংয়ের (সর্বোচ্চ সীমা) প্রস্তাব করা হয়েছে।

Advertisement

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনে এমন বিধানও রাখা হবে যেন বৃহৎ শিল্প স্থাপনে অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমা কোনো বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ আবেদনে সরকার অকৃষি জমির ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত শিল্প স্থাপনে অনুমোদন দিতে পারবে।

অন্যদিকে কৃষিজমি সুরক্ষা, অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমার বিধান, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশ্যে করা ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন-এর খসড়া আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হবে বলে জানান সাইফুজ্জামান।

তিনি বলেন, দলিলাদি যার, জমি তার-এ ভাবনা থেকেই ভূমি অপরাধ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কেউ যত বছরই জোর করে কোনো জমি দখল করে রাখুক না কেন, যথাযথ দলিলাদি ছাড়া বেআইনি দখলদারের মালিকানা এ আইনে কখনই তা স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। আইন প্রণয়নের পর জমি দখল সংক্রান্ত হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, আগামী পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু করা হবে। এরপর থেকে আর সরাসরি এলডি ট্যাক্স গ্রহণ করা হবে না। এরই মধ্যে ক্যাশলেস ই-নামজারি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

Advertisement

নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা, যা তাৎক্ষণিকভাবে অটোমেটেড চালান সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভূমি ভবনে একটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে এ সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। জেলাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকদের ভূমি সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং এ জন্য নীতিমালা করা হচ্ছে। কলসেন্টার ছাড়াও এসব সেবা কেন্দ্রে নাগরিকরা সরাসরি গিয়ে ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া, প্রাইভেট এজেন্ট কার্যক্রম মনিটরের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক নাগরিক কমিটি করা হবে।

সাইউজ্জামান চৌধুরী বলেন, দুটি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ডিজিটাল জরিপ হচ্ছে। একটি প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীতে জরিপ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মৌজার ডিজিটাল জরিপও সম্পন্ন হয়েছে। অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ৩টি সিটি করপোরেশন (চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন), মানিকগঞ্জ পৌরসভা, ধামরাই উপজেলা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ডিজিটাল সার্ভে হবে। এসব এলাকা ছাড়া সারাদেশে পটুয়াখালীতে শুরু হওয়া প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল সার্ভে হবে।

তিন বলেন, বর্তমানে ৫ কোটি ২১ লাখের অধিক জমির মালিকানা এবং ৭৫ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ তথ্য অনলাইনে রয়েছে। এ সিস্টেম থেকে প্রায় ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান পৌঁছে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩ লাখের অধিক খতিয়ান ডাক বিভাগের মাধ্যমে নাগরিকরা হাতে পেয়েছেন। বিদেশেও এ সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত নামজারি খতিয়ান যুক্ত হচ্ছে এ সিস্টেমে। কোনো খতিয়ান থেকে জমি নামজারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মূল খতিয়ান হতে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ানের ট্রি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে এবং মামলা-মোকদ্দমা কমে যাবে।

এমএএস/এমআইএইচএস/জিকেএস