মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের বড়মেহের এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশেই ফেলা হচ্ছে মাদারীপুর পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা। এতে করে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে জনজীবন। স্থানীয়রা দ্রুত এখানে আবর্জনা ফেলা বন্ধের দাবি জানালেও পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে জায়গা সংকটের কারণে এখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা।
Advertisement
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদারীপুর পৌরসভা। ব্রিটিশ আমলের পৌরসভাটি ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১৪৮ বছরেও ময়লার ভাগাড় নির্মাণ করতে না পারায় সচেতন মহল, পৌর ও ইউনিয়নবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের বড়মেহের এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে প্রায় আড়াই বছর ধরে মাদারীপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে। এতে করে মস্তফাপুর ইউনিয়নের পাওয়ার হাউজ, বড়মেহের ও চাপাতলি এলাকার কয়েক হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। মাদারীপুর পৌরসভার নিজস্ব কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় দৈনিক গড়ে ২০ থেকে ৩০ টন ময়লা ট্রাকে করে এনে এখানে ফেলা হচ্ছে।
আরো পড়ুন- এক ঘরে তিন প্রজন্মের ঠাসাঠাসি করে বসবাস
Advertisement
মহাসড়কের পাশেই এ ময়লা ফেলায় প্রতিদিন শত শত পরিবহনে যাতায়াত করা যাত্রী ও পথচারীরাও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও এর আশপাশে বহু পরিবার এই দুর্গন্ধ সহ্য করে বসবাস করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে মাদারীপুর শহরের প্রবেশমুখ শেখ হাসিনা সড়কের মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় সড়কের পাশে ফেলা হতো পৌরসভার ময়লা। পরে স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়। এরপর থেকে এখানেই ফেলা হচ্ছে এই পৌরসভার ময়লা।
ভ্যানচালক আইয়ুব আলী ফকির বলেন, এখানে ময়লা ফেলার কারণে যাতায়াত করতে আমাদের সমস্যা হয়। প্রচণ্ড দুর্গন্ধে বমি এসে যায়।
আরো পড়ুন- ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে ভাগ্য বদল কৃষকের
Advertisement
পথচারী শামীম মোল্যা বলেন, এই ময়লা ফেলার জন্য পথচারীসহ আশপাশের লোকজনের খুবই কষ্ট হয়। গাড়ির চালকরাও এই পথটুকু দ্রুত যেতে চান। আর এতে করে ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। কয়েকদিন আগেই এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই এই মহাসড়কের পাশে ময়লা আর্বজনা ফেলা বন্ধ করে সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
স্থানীয় বাসিন্দা সিমা বেগম, সেলিম মিয়া, আনোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আমাদের এখানে খুব কষ্ট করে থাকতে হয়। প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ঘরে থাকতে কষ্ট হয়। কী করবো। আমরা ইউনিয়নবাসী তবুও পৌরসভার ময়লা আবর্জনা এখানেই ফেলা হচ্ছে। আর এই পৌরসভার ময়লার জন্য আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
মাদারীপুরের স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, কোনো অবস্থাতেই খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা ঠিক না। এতে করে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নানা ধরনের জীবানু বাতাসের সঙ্গে মিশে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে মানুষ। তাই এই ময়লাগুলোকে গর্ত করে মাটিচাপা দিলেও কিছুটা পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
মাদারীপুর সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. খলিলুজ্জামান খান হিমু বলেন, খোলা জায়গায় ময়লা ফেললে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি মানুষেরও শারীরিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খোলা জায়গা থেকে মশা-মাছিও জন্মায়। তাই খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, পৌর বর্জ্য ফেলার জন্য পৌরসভার নিজস্ব কোনো জমি নেই। পৌরসভার জায়গা সংকটের কারণে বাধ্য হয়েই অন্যত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। তবে অনেকদিন ধরেই এর সঠিক সমাধানের চেষ্টা করে আসছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।
এফএ/এএসএম