ইসতিয়াক আহমেদ
Advertisement
বাংলাদেশের একমাত্র নীল পানির দ্বীপ বা সৈকতের জন্য সেন্টমার্টিন জনপ্রিয়। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে সৈকত।
অনেক জল্পনা কল্পনার শেষে, এই বছর আবারো শুরু হয়েছে সেন্টমার্টিনের সঙ্গে সব রুটের জাহাজ চলাচল। কেউ হয়তো প্রথমবার, কেউ হয়তো অসংখ্যবারের মতো আবারো ছুটছেন সেন্টমার্টিনের পথে।
তবে কিছু কথা সেন্টমার্টিন নিয়ে অন্তত প্রতি সিজনের শুরুতে না বললেই হয়তো নয়। সেন্টমার্টিন ভ্রমণ যাতে কারো কাছে মর্মান্তিক হয়ে না ওঠে তাই সেখানে যাওয়ার আগে বেশ কিছু বিষয় জেনে রাখা দরকার।
Advertisement
আরও পড়ুন: একদিনেই ঘুরে আসুন নোয়াখালীর ‘মিনি কক্সবাজারে’
মনে আছে, কিছুদিন আগে ভাইরাল হওয়া নেটওয়ার্কের বাইরে নাটকের কথা। কিংবা বহু বছর আগে সেন্টমার্টিনে আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের দুঃখজনক মৃত্যুর কথা। আজ সে বিষয়েই বলবো কিছু কথা-
যদি সেন্টমার্টিনের ম্যাপ দেখেন তাহলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন বিষয়টি। খেয়াল করলে দেখবেন, সেন্টমার্টিনের যে প্রান্তে সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা সেটি কিন্তু মাথা বা কোণার দিকে।
বাংলাদেশের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য সৈকতে মানুষ মারা যাওয়ার মধ্যে একটি পার্থক্য হলো, ভাটার সময় কোনো দেশ পর্যটকদের সমুদ্রে নামার অনুমতি দেয় না।
Advertisement
আরও পড়ুন: কম খরচে কক্সবাজার ভ্রমণের ৭ উপায়
তবে দেশের অনেক মানুষ অজান্তেই ভাটার সময় সমুদ্রে নেমে পানিতে ভেসে যায়। এজন্য কক্সবাজার বা কুয়াকাটায় যাওয়ার আগে গুগল করে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিতে পারেন।
ভাটার সময় মানুষের ভেসে যাওয়া বাদেও আরও একটি বিপজ্জনক বিষয় আছে। যাকে বলা হয়, রিপ কারেন্ট বা উল্টো স্রোত।
সমুদ্রসৈকতে ৮০ ভাগ মৃত্যু এই রিপ কারেন্ট বা উল্টো স্রোতের কারণে হয়। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও প্রতিবছর গড়ে ২২ জন মারা যায় রিপ কারেন্টের কারণে।
এদেশেও সমুদ্রসৈকতে যেসব মৃত্যু হয়, তার বেশিরভাগই রিপ কারেন্টের জন্যই হওয়ার কথা। আবার সেন্টমার্টিনের মাথার দিকে যে সরু অংশ সেটিও কিন্তু রিপ কারেন্টের একটি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে যায়।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন ও ছেড়াদ্বীপে যা যা দেখবেন
রিপ কারেন্ট বা উল্টো স্রোত কী?
এটি এক ধরনের ঢেউ, যা সমুদ্রের তটে ধাক্কা খেয়ে উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে, এই ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাওয়া ঢেউ বাতাসের কারণে বা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে চিকন একটি পথ ধরে সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে।
আর ওই সরু পথে যদি কেউ থাকে তবে ঢেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে সমুদ্রে নিয়ে ফেলতে পারে। এই সরু পথের ঢেউকেই বলা হয়, রিপ কারেন্ট বা উল্টো স্রোত।
এটি যে কোনো সমুদ্রে হতে পারে, তবে কিছু কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নিয়মিত রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত হতে পারে।
কীভাবে রিপ কারেন্ট বা উল্টো স্রোত চিনবেন?
রিপ কারেন্ট বা উল্টো স্রোতের একটা ভয়ংকর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি দেখতে মনে হয় খুব শান্ত ও উপর থেকে ওই ঢেউয়ের পানির রং গাঢ় নীল দেখায়।
অনেক ক্ষেত্রে রিপ কারেন্ট বা উল্টো স্রোতের সময় দেখবেন কিছু না কিছু ভেসে সাগরের দিকে যাচ্ছে। রিপ কারেন্ট যখন প্রবাহিত হয় তখন সে ফেরার পথে ঢেউয়ের মাথা ভেঙে দেয়। ফলে সেই স্থান বেশি শান্ত দেখায়।
উল্টো স্রোতে পড়লে কীভাবে বাঁচবেন?
যারা সাঁতার জানেন তারা রিপ কারেন্টে পড়লে, তীরের দিকে ফেরার চেষ্টা না করে বরং সৈকতের সমান্তরালভাবে উল্টো স্রোত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।
কারণ সাগরের স্রোত যখন টান দেবে, তখন শক্তি দিয়েও স্রোতের বিপরীতে ফেরা যাবে না। তাই শক্তি নষ্ট করবেন না।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিনের জনপ্রিয় ১০ রিসোর্ট
রিপ কারেন্ট কয় ধরনের?
তিন ধরনের রিপ কারেন্ট আছে। একটি ফিক্সড, আরেকটি হঠাৎ আরেকটি টপোগ্রাফিক যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো হেডল্যান্ডের কারণে রিপ কারেন্ট।
ফিক্সড হয় কিছু কিছু এলাকায় যেমন- যেখানে ব্রিজ আছে বা কোনো গভীর গর্ত আছে। হঠাৎ যেটি হয়, সেটি যে কোনো জায়গায় বাতাসের কারণে হতে পারে।
সেন্ট মার্টিনের বিপজ্জনক অংশ হেডল্যান্ড বৈশিষ্ট্যের এলাকায়, যেখানে রিপ কারেন্ট ঘন ঘন হয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। এক্ষেত্রে বাতাসের কারণে দু’দিকের পানি ধাক্কা দিয়ে এর মাথায় বা তার দু’পাশেই একটি রিপ কারেন্ট তৈরি হতে পারে। এটি একটি মৃত্যুফাঁদ।
এখানে প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে অনেক বড় বড় চ্যানেল তৈরি হয়েছে, যেগুলো দিয়ে ঘন ঘন উলটো স্রোত বা রিপ কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যা শান্ত পানি দেখে নামা পর্যটকদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
তাই ভুলেও জেটি ঘাটে নেমেই উত্তরের বিচে (ছবিতে চিহ্নিত স্থানে) নামতে যাবেন না। যদিও সেন্টমার্টিনের পানিতে নামার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিচ উত্তর বিচ।
তবে এই উত্তর-পূর্বেই আছে ভয়ংকর রিপ কারেন্ট। সেন্টমার্টিনের এলাকাবাসি জানে এই এলাকায় সাঁতার কাটতে নেই। তাই সামনে কাউকে দেখলে তারা মানা করেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই অসাবধানতার কারণে উল্টো স্রোতে পড়ে মারা যায়।
সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হেডল্যান্ড ধরনের টপোগ্রাফিক রিপ কারেন্ট কিন্তু নিয়মিত একটি বৈশিষ্ট্য। এই স্থানে যদি একটি মৃত্যুও ঘটে, আমরা কিন্তু তাকে দুর্ঘটনায় বলতে পারি না।
আমাদের সবারই উচিত এ বিপজ্জনক স্থান সম্পর্কে জানা ও অন্যকে জানানো। যাতে অজান্তে আর কোনো মৃত্যু না ঘটে।
বলে রাখা ভালো, রিপ কারেন্ট পৃথিবীর সব সৈকতেই হয়। এজন্য সতর্কতাও নিতে হয়। রিপ কারেন্টের ভয়ে সমুদ্রযাত্রা বন্ধ করার দরকার নেই। তবে সতর্ক থাকা জরুরি।
জেএমএস/এএসএম