অর্থনীতি

জ্বালানি সংকট-যুদ্ধাবসানের অপেক্ষায় রপ্তানিকারকরা

সুষ্ঠু রপ্তানি ব্যবস্থাপনার জন্য কারখানা চালু রাখা ও বৈশ্বিক স্থিতি জরুরি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অস্থির ইউরোপসহ গোটা বিশ্ব। যার আঁচ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। এর মধ্যেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারায় আছে দেশ। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে তীব্র হওয়া জ্বালানি সংকট যদি চলতি বছরও অব্যাহত থাকে এবং যুদ্ধ না থামে তাহলে এই ধারা অব্যাহত রাখা নিয়ে শঙ্কিত রপ্তানিকারকরা।

Advertisement

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বরে) প্রথম ছয় মাসে দুই হাজার ৭৩১ কোটি বা ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন উদ্যোক্তারা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে পাঁচ হাজার ৮শ কোটি মার্কিন ডলার বা ৫৮ বিলিয়ন ডলার অর্জন করা কঠিন কিছু হবে না।

আরও পড়ুন>> নিষেধাজ্ঞা কাটলেও আলোর মুখ দেখছে না পান রপ্তানি

জ্বালানি সংকট ও যুদ্ধ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে। এই যুদ্ধের ধাক্কায় মুহূর্তেই ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের দরদাম। টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে মূল্যস্ফীতি দিন দিন বাড়ছে। এ বছর মন্দা দেখা দেবে বলেও পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা। বৈশ্বিক এ অবস্থার মধ্যেই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বাকি প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির প্রয়োজন বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।

Advertisement

এলসি খোলা নিয়ে সংকটচলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র বা এলসি খোলা কমেছে সাড়ে ২৬ শতাংশ। আর একই সময়ে নিষ্পত্তি কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ফলে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আনা যাচ্ছে না। যার প্রভাব পড়ছে রপ্তানিতে।

প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল পিভিসি ও পেট রেজিন দেশেই উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু করেছে মেঘনা গ্রুপ। তবে এলসি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে প্রতিষ্ঠানটিকে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> রপ্তানি আয়ে ৫০ বিলিয়নের ক্লাবে বাংলাদেশ

মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম (ফাইন্যান্স) আফজাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এলসি খোলা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তবে সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সাপোর্ট করছে। ইউরোপের যুদ্ধ তো আমাদের হাতে নেই। সেটা না মিটলে তো আসলে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। তবে নতুন বছরে ফের জ্বালানি সংকট দেখা দিলে সেটা মোকাবিলায় সরকারকে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আরও পড়ুন>> ২০৩ দেশে ৭৫১ পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ: বাণিজ্যমন্ত্রী

Advertisement

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জাগো নিউজকে বলেন, শিল্প-কারখানায় অল্প হলেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন এক্সটার্নাল, ইন্টারনাল না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ রপ্তানিতে অনেক বড় বাধা সৃষ্টি করছে। আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ। যুদ্ধ যদি ঠিক না হয় তাহলে ইউরোপের বাজারও ঘুরে দাঁড়াবে না, আমাদের রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

‘জ্বালানির সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ এমনিতেই এখন আমাদের অর্ডার কম, তারপরেও যদি আমরা সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারি তাহলেও বায়ারদের কাছে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হবে।’

আরও পড়ুন>> সবজি রপ্তানির সিংহভাগই ৬ দেশে

তিনি বলেন, লোডশেডিং দিলেও সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ডিজেলের প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করা জরুরি। দেখা গেলো লোডশেডিং দিলো আবার ডিজেলও নেই, তখনও তো রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।

এই উদ্যোক্তা বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সুস্পষ্টভাবে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হওয়ার নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ ভোটের বছরে আমলারা সরকারের কন্ট্রোলে থাকবে না। এসময় তারা আরও বেশি দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে যাবে। এটা ঠেকাতে সরকারের শক্ত ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন>> রপ্তানি আয়ে রেকর্ড, তৈরি পোশাক থেকেই এলো ৮২ শতাংশ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পরিচালক ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির তোড়জোড় কিংবা জ্বালানি সংকট- উভয়ই রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের রপ্তানি আয় আশাব্যঞ্জক। এখন নতুন করে জ্বালানির মূল্য বাড়ালে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে জ্বালানি প্রয়োজন।

‘বিদ্যুতের ওপর আমরা পুরোপুরি নির্ভরশীল। এই বিদ্যুতের চাহিদা সরাসরি বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা ডিজেলের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। যেটারই দাম বাড়ানো হোক না কেন আনুষঙ্গিক সব খরচ বাড়বে। প্লাস্টিক শিল্পে ক্ষতিটা বেশি হবে। ফলে ক্রেতাদের কাছে নেতিবাচক মেসেজ যাবে। সর্বোপরি রপ্তানি আয়ে এর প্রভাব পড়বে।’

আরও পড়ুন>> জ্বালানি সংকটে অর্ধেকে নেমেছে উৎপাদন, রপ্তানি আয়ে ‘মন্দা’

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক অনুষ্ঠানে বলেন, রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা আমরা অর্জন করতে পারবো। পোশাকখাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বর মাসে যে রপ্তানি আয় এসেছে, সেটা সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। গত অর্থবছর ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম, বছর শেষে সেটা ৬১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। সেই সাহস নিয়ে এবার ৬৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ২০২৪ সালে আমরা ৮১ বিলিয়ন ডলার চাই।

এসএম/এএসএ/এমএস