দেশের আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত সব কোম্পানির জন্য বছর শেষে বার্ষিক আয় বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। অথচ নিবন্ধিত ২৯ শতাংশ কোম্পানি এখনো কর জালের বাইরে, তাদের কোনো ট্যাক্স পেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) নেই। এমনকি টিআইএন থাকা অনেক কোম্পানিও নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করে না। এর ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
Advertisement
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বা রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টকে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা এখন ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭টি। এদের মধ্যে এক লাখ ৯৯ হাজার ৩০টি কোম্পানির টিআইএন আছে। এর মধ্যে পাবলিক ও প্রাইভেট লিমিটেড সহ অন্যান্য কোম্পানির সংখ্যা এক লাখ ৩৯ হাজার ৫০৫টি। এছাড়া ৫৯ হাজার ৫২৫টি ফার্মের টিআইএন আছে। এ হিসাবে ৭১ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত করের আওতায় রয়েছে। বাকি প্রায় ২৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনও করের আওতার বাইরে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরেই রাজস্ব ঘাটতি ৫ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা
এদিকে, যেসব প্রতিষ্ঠানের টিআইএন আছে তার মধ্যে বেশিরভাগই বার্ষিক আয় বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল করে না। গত বছর মাত্র ৩১ হাজার কোম্পানি রিটার্ন দাখিল করেছে। সে হিসাবে মাত্র ১৫ শতাংশ কোম্পানি রিটার্ন দাখিল করেছে। বাকি ৮৫ শতাংশ কোম্পানিই রিটার্ন দাখিল করেনি।
Advertisement
আইন অনুযায়ী, যে কোনো কোম্পানি খোলার ক্ষেত্রে কেবল পরিচালকদের ব্যক্তিগত টিআইএন দিতে হয়। কোম্পানি অনুমোদনের পর ওই কোম্পানির টিআইএন নিতে হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই কোম্পানি অনুমোদনের পর আর টিআইএন নিচ্ছে না কিংবা রিটার্ন জমা দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়তে পারে ১৯ শতাংশ
এমন পরিস্থিতিতে আরজেএসসির তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে চায় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানান, আমরা চেষ্টা করছি। গত বছর (২০২১ সালে) রিটার্ন দাখিল করা প্রতিষ্ঠান ছিল ২৮ হাজার, সেখান থেকে (২০২২ সালে) এই সংখ্যা ৩১ হাজারে উন্নীত করেছি। আমাদের ডিজিটাল যুগ তো বেশিদিনের না, এটা এতটা ইমপ্রুভ হয়নি। আশা করি দুই-এক বছরের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আয়ের ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তি ও কোম্পানি উভয়ই সরকারকে কর দিয়ে থাকে। ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা থাকলেও কোম্পানির ক্ষেত্রে তো উল্লেখ নেই। কোম্পানি তার বার্ষিক মুনাফার ওপর প্রযোজ্য হারে কর পরিশোধ করে। দেশে কোম্পানি করদাতার সংখ্যা কম হলেও তারা ব্যক্তির চেয়ে বেশি কর দেয়। মোট করদাতার মাত্র ২ শতাংশ কোম্পানি করদাতা। অথচ মোট আয়করের ৬৫ শতাংশ আসে ওই ২ শতাংশ কোম্পানি থেকে।
Advertisement
আরও পড়ুন: পাঁচ মাসে ৯ হাজার ৭১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি
ব্যক্তি এবং কোম্পানি মিলিয়ে বর্তমানে দেশে মোট করদাতার সংখ্যা ২৮ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৪। ছয়টি স্তরে কোম্পানি কর দেয়। সর্বনিম্ন করহার ২৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ। তবে কোম্পানির কর ফাঁকি নিয়ে অনেক অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে টাস্কফোর্স। ২০২০ সালের আগস্টে রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ভুয়া অডিট রিপোর্ট বন্ধ ও করজালের আওতা বাড়াতে কাজ করছে এই কমিটি।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালে প্রায় ৭৭ হাজার কোম্পানির টিআইএন ছিল। ওই সময়ে যাদের টিআইএন ছিল না, তাদের করতে বাধ্য করা হয়। ফলে এখন টিআইএনধারী কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে।
এসএম/কেএসআর/জিকেএস